রাজনীতি থেকেও সরে দাঁড়ালেন জেসিন্ডা
নিউজিল্যান্ডের সাবেক প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আরডার্ন নারীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, তাঁরা যেন নেতৃত্ব প্রদানের ক্ষেত্রে মাতৃত্বকে বাধা হিসেবে না দেখেন। গত বুধবার ওয়েলিংটনের পার্লামেন্টে দেওয়া বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি। এদিন রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়ানোরও ঘোষণা দিয়েছেন এ নেত্রী।
৪২ বছর বয়সী আরডার্ন বলেন, ‘আমি ভালো মা হতে পারতাম, সেটা জেনেই আমি দায়িত্ব ছেড়েছি। আপনারা সে মানুষটি হতে পারেন। এখানে (পার্লামেন্টে) আসতে পারেন।’
২০১৭ সালে নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন জেসিন্ডা। ২০১৮ সালে নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বরত অবস্থায় সন্তান জন্ম দেন তিনি। জেসিন্ডা দ্বিতীয় কোনো বিশ্বনেতা, যিনি দায়িত্বরত অবস্থায় মা হয়েছেন। এর আগে পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টো দায়িত্বরত অবস্থায় সন্তান জন্ম দিয়েছিলেন।
চলতি বছরের জানুয়ারিতে হঠাৎ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পদত্যাগের ঘোষণা দেন এ নেত্রী। চলতি বছরের শেষের দিকে নিউজিল্যান্ডে নির্বাচন হওয়ার কথা। সে নির্বাচনকে সামনে রেখে চালানো বিভিন্ন জনমত জরিপে জেসিন্ডার জনপ্রিয়তা কমতে দেখা গিয়েছিল।
বুধবার বিদায়ী বক্তব্যে নিজের মাতৃত্বের অভিজ্ঞতা নিয়ে খোলাখুলি কথা বলেছেন সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ৩৭ বছর বয়সে মানসিক চাপসহ বিভিন্ন কারণে তাঁর গর্ভধারণে জটিলতা হচ্ছিল।
‘আমি লেবার পার্টির নেতা নির্বাচিত হওয়ার পর আইভিএফ পদ্ধতিতে সন্তান জন্মদানের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছিলাম। ভেবেছিলাম, আমি কখনো মা হতে পারব না। ভেবে দেখুন তো, কয়েক মাস পর অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার খবরটি পেয়ে আমি কতটা অবাক হয়েছিলাম,’ বলেন জেসিন্ডা।
২০১৯ সালে ক্রাইস্টচার্চের দুটি মসজিদে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় ৫১ জনের মৃত্যু, একই বছর অগ্ন্যুৎপাতের ঘটনায় ২২ জনের মৃত্যু এবং কোভিড-১৯ মহামারিসহ বিভিন্ন সংকটময় পরিস্থিতিতে তাঁর ভূমিকা প্রশংসা অর্জন করেছিল।
বুধবার নিউজিল্যান্ডের পার্লামেন্টে জেসিন্ডা আরও বলেন, ‘দুঃখজনকভাবে আমাদের দেশকে শোকের মুহূর্তে দেখে আমি উপলব্ধি করেছি যে শোক কাটিয়ে ওঠা যায় না, বরং তা আমাদের মনের মধ্যে থেকে যায়। তবে আমাদের জীবনে এসব মুহূর্ত কীভাবে গেঁথে থাকছে, তা নির্ভর করে আমরা কীভাবে সেগুলোকে মোকাবিলা করেছি, তার ওপর।’
জানুয়ারিতে জেসিন্ডা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত ঘোষণার পর বিশ্বজুড়ে আলোচনা তৈরি হয়েছিল। অনেকে তখন নারীনেত্রীদের বিভিন্ন হয়রানি ও হুমকির মুখোমুখি হওয়ার প্রসঙ্গ টেনে এনেছিলেন।
জেসিন্ডা আরডার্ন এখন ক্রাইস্টচার্চ কল নামে একটি আন্তর্জাতিক উদ্যোগের বিশেষ দূত হিসেবে কাজ করবেন। অনলাইনে সন্ত্রাসী ও সহিংস কনটেন্টগুলো প্রতিরোধে কাজ করে প্রতিষ্ঠানটি। ক্রাইস্টচার্চে সন্ত্রাসী হামলার পর জেসিন্ডা আরডার্নই ক্রাইস্টচার্চ কল গড়ে তোলেন।
প্রিন্স উইলিয়ামের আর্থশট প্রাইজ নামের পুরস্কার প্রদান বোর্ডেও তিনি যোগ দিয়েছেন। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা ও পরিবেশবান্ধব কাজের স্বীকৃতি হিসেবে এ বোর্ড থেকে পুরস্কার দেওয়া হয়ে থাকে।