চীনের আধা স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল হংকংয়ের মিডিয়া মোগল জিমি লাইয়ের নাম কয়েক বছর ধরে সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল। জালিয়াতির অভিযোগে তাঁকে ৫ বছর ৯ মাসের কারাদণ্ড দিয়েছেন হংকংয়ের একটি আদালত। শনিবার তাঁর বিরুদ্ধে এ রায় দেওয়া হয়। ২০১৯ সালেও তাঁকে বেইজিংয়ের জাতীয় নিরাপত্তা আইনে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। ২০২১ সালের এপ্রিলে তাঁকে ১৪ মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। এরপরই তাঁকে নতুন মামলায় সাজা দেওয়া হলো।
২০১৬ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে অফিসের জায়গার কিছু অংশ ভাড়া দেওয়ার জন্য একটি সেক্রেটারিয়াল ফার্মের সঙ্গে প্রতারণার দায়ে তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। তাঁর বিরুদ্ধে ১৯৯৮ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত লিজ চুক্তি লঙ্ঘনের অভিযোগ ওঠে। আদালত বলেছেন, লাই সরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ইজারা চুক্তি লঙ্ঘন করেছেন এবং তথ্য গোপন করেছিলেন।
সাজা দেওয়ার সময় বিচারক স্ট্যানলি চ্যান এ ঘটনাকে সংগঠিত ও পরিকল্পিত বলেছেন। তিনি বলেন, এ ঘটনা দুই দশক ধরে ঘটেছে এবং জিমি তাঁর মিডিয়া সংস্থাকে সুরক্ষা ছাতা হিসেবে ব্যবহার করেছেন। জিমি এ পদক্ষেপের জন্য দোষী বোধ করেননি, তাই আদালতের জেলের মেয়াদ কমানোর কোনো ভিত্তি নেই। বিচারক আরও বলেন, লাইয়ের সাবেক সহযোগী ওয়াং ওয়াই-কেউং, যিনি একই জালিয়াতির অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন, তিনি ২১ মাসের কারাদণ্ড ভোগ করবেন।
আইনজীবীরা বলেন, অ্যাপল ডেইলি প্রকাশনা এবং মুদ্রণের উদ্দেশ্যে ভাড়া করা একটি অফিস লাই তাঁর ব্যক্তিগত পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে ব্যবহার করেছেন। সরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে করা চুক্তির লঙ্ঘন এটি। লাইয়ের আইনজীবীরা বলেন, ফৌজদারি মামলার পরিবর্তে এটি দেওয়ানি মামলা হওয়া উচিত।
জিমি লাই হংকংয়ের গণতন্ত্রপন্থী হিসেবে পরিচিত অ্যাপল ডেইলির মালিক। পত্রিকাটির প্রকাশনা বাতিল করে দিয়েছে চীনা কর্তৃপক্ষ। ১৯৮৯ সালের ৪ জুন চীনের তিয়েনআনমেন স্কয়ারে গণতন্ত্রের দাবিতে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করা শত শত ছাত্র-শ্রমিককে গুলি চালিয়ে হত্যা করে দেশটির ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট সরকার। ওই ঘটনা নিয়ে এরপর কোনো রকম আলোচনা নিষিদ্ধ করে চীন। কিন্তু অ্যাপল ডেইলি গণতন্ত্রপন্থীদের পক্ষে থাকে।
গত বছরের আগস্টে হংকংয়ের মিডিয়া মোগল জিমি লাইসহ সাত ব্যক্তিকে নতুন জাতীয় নিরাপত্তা আইনে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি চীনের অন্যতম কট্টর সমালোচক।
হংকংয়ে নিয়ন্ত্রণ পোক্ত করতে ২০২০ সালের ১ জুলাই নতুন জাতীয় নিরাপত্তা আইন কার্যকর করে বেইজিং। হংকংয়ের গণতন্ত্রপন্থীরা আগেই আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন, দেশটির যে স্বাধীনতা ও স্বায়ত্তশাসন অবশিষ্ট ছিল, সেটাও ধূলিসাৎ করবে আইনটি। ২০১৯ সালে ব্যাপক বিক্ষোভ এবং বেইজিং কর্তৃক আরোপিত জাতীয় নিরাপত্তা আইনের অধীনে তাঁকে দুই মিলিয়ন হংকং ডলার জরিমানা করা হয়েছিল। জাতীয় নিরাপত্তা লঙ্ঘনের ব্যাপারে তাঁর বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে, তাতে তাঁর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হতে পারে।