জাওয়াহিরিকে হামলাকারী ড্রোনটি কি কিরগিজস্তান থেকে গেছে
আফগানিস্তানের কাবুলে আল–কায়েদা নেতা আয়মান আল জাওয়াহিরির ওপর যে ড্রোন দিয়ে হামলা হয়েছে, তা কিরগিজস্তানের বিমানঘাঁটি থেকে গিয়ে থাকতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রে বুধবার কিছু স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে এমন দাবি করা হয়েছে। এ দাবির সত্যতা কতটুকু হতে পারে, তা নিয়ে ডন একটি প্রতিবেদনে প্রকাশ করেছে।
আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে গত রোববার যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর ড্রোন হামলায় নিহত হন আল-কায়েদার শীর্ষ নেতা আয়মান আল জাওয়াহিরি। আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনাদের পুরোপুরি দেশে ফিরিয়ে নেওয়ার পর কাবুলে এটাই ছিল যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম হামলা। যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা বলছেন, রোববার তালেবান নিয়ন্ত্রিত কাবুলের একটি সুরক্ষিত বাড়ির ব্যালকনিতে আয়মান আল-জাওয়াহিরি পা রাখামাত্রই ড্রোনের সহায়তায় দুটি হেলফায়ার ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে সেখানে হামলা চালানো হয়।
তবে ড্রোনটি কোথা থেকে রওনা করেছে এবং কোন পথ ব্যবহার করেছে, তা এখনো প্রকাশ করছে না মার্কিন প্রশাসন। মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগ শুধু একটি সংক্ষিপ্ত বিবৃতি দিয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়, ‘কাবুলের উপকণ্ঠে নিশ্চিত এক অভিযানে জাওয়াহিরি নিহত হয়েছেন। সেখানে তালেবানের অতিথি হিসেবে থাকছিলেন তিনি। কাবুলের সময় সকাল ৬টা ১৮ মিনিটের দিকে সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানে দুটি হেলফায়ার ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে বাড়িটিতে হামলা করা হয়েছে।’
বেশ কয়েকটি মার্কিন সংবাদমাধ্যম বলছে, উত্তরাঞ্চলীয় কিরগিজস্তানের মানাসে গানচি বিমানঘাঁটি থেকে হামলাটি করা হয়েছে। মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তরের তথ্যমতে, গানচি হলো কিরগিজস্তানের পুরোনো মার্কিন সামরিক ঘাঁটি। বিশকেক আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাছে এর অবস্থান। মার্কিন বিমানবাহিনী এটি পরিচালনা করত। ২০১৪ সালের জুনে কিরগিজ সেনাবাহিনীর কাছে এটি হস্তান্তর করা হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের বড় রেডিও নিউজ নেটওয়ার্ক দ্য ন্যাশনাল পাবলিক রেডিওর (এনপিআর) প্রতিবেদনে বলা হয়, মার্কিন কর্মকর্তারা বলছেন না তাঁরা কোথা থেকে ড্রোন হামলা চালিয়েছেন। কিন্তু পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে এখন আর তাদের কোনো সামরিক ঘাঁটি নেই। তাঁর মানে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করার আগে চালকবিহীন ড্রোনটি দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে এসেছে।
ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান উইলসন সেন্টারের দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক গবেষক মাইকেল কুগেলমান বলেন, ‘ড্রোন হামলার পর এ অভিযানে পাকিস্তানের সম্ভাব্য ভূমিকা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে প্রচুর আলোচনা হচ্ছে। আমি এর ভূমিকার কথা অতিরঞ্জিত করে বলব না। তবে এর যে একেবারেই ভূমিকা ছিল না, তা–ও বিশ্বাস করি না।’
এই গবেষক মনে করেন, দুভাবে সহযোগিতা দেওয়া হয়ে থাকতে পারে। তা হলো আকাশসীমা ও গোয়েন্দা সহযোগিতা। কুগেলমান বলেন, ‘ভূগোল মিথ্যা বলে না। পারস্য উপসাগরীয় ঘাঁটি থেকে যদি ড্রোনটি উৎক্ষেপণ করা হতো, তবে এটি ইরানের ওপর দিয়ে উড়ে আসতে পারত না। মধ্য এশিয়ার আকাশসীমা এ ক্ষেত্রে উল্টো পথ। দ্রুত অভিযান চালানো এ ক্ষেত্রে কঠিন।’
কুগেলমান মনে করেন, এ ক্ষেত্রে পাকিস্তানের আকাশসীমা মার্কিন গোয়েন্দাদের জন্য সবচেয়ে আকাঙ্ক্ষিত উপায়। মার্কিন কর্মকর্তারা ইঙ্গিত দিয়েছেন, এ অভিযানের জন্য পরিকল্পনা ও নজরদারি করতে তাঁদের কয়েক মাস সময় লেগে গেছে।
কুগেলমান প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে বলেন, ‘কেউ না থাকলে তারা কি একাই সব করতে পারত?’ তিনি মনে করেন, পাকিস্তান না হলেও কিছুসংখ্যক পক্ষত্যাগী তালেবান সদস্য হয়তো যুক্তরাষ্ট্রকে এসব তথ্য দিয়েছে।
আফগানিস্তানের মধ্য এশীয় প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা নেওয়ার সম্ভাবনার কথাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না কুগেলমান।
এদিকে কাবুলে এক তালেবান কর্মকর্তা আজ বৃহস্পতিবার জানিয়েছেন, ড্রোন হামলায় আয়মান আল জাওয়াহিরির হত্যার বিষয়টি তাঁরা তদন্ত শুরু করেছেন।