দাবদাহে পুড়ছে দক্ষিণ ও দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়া
এল নিনোর কারণে ফিলিপাইন, থাইল্যান্ড, বাংলাদেশ ও ভারতের কিছু অংশে বিপজ্জনক তাপমাত্রা দেখা যাচ্ছে।
দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াজুড়ে লাখ লাখ মানুষ উত্তপ্ত তাপমাত্রার মুখোমুখি হচ্ছে। অস্বাভাবিক গরম আবহাওয়ার কারণে অনেক দেশ স্কুল বন্ধ করতে বাধ্য হচ্ছে। এ ছাড়া তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে জনস্বাস্থ্য হুমকির মুখে পড়েছে।
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, ফিলিপাইনের রাজধানী ম্যানিলাসহ দেশটির বিভিন্ন প্রদেশে হাজারো স্কুল বন্ধ রাখতে হয়েছে। দেশটির ৮২ প্রদেশের অর্ধেকজুড়েই খরা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এ ছাড়া অন্য এলাকাগুলোতেও পানি শুকিয়ে গেছে। দেশটিতে এবার ফসল উৎপাদন কম হবে।
জাতিসংঘের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, ভবিষ্যতে এ ধরনের আবহাওয়া পরিস্থিতি মোকাবিলায় দেশগুলোকে প্রস্তুত করতে বড় ধরনের সহায়তার প্রয়োজন পড়বে।
এপ্রিল ও মে মাস সাধারণত দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর জন্য উষ্ণতম মাস। কিন্তু এ বছর তাপমাত্রা পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর কারণ এল নিনোর প্রভাব। এল নিনো এমন এক প্রাকৃতিক ঘটনা, যা প্রতি দুই থেকে সাত বছর অন্তর ঘটে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এল নিনোর কারণে মানবসৃষ্ট বৈশ্বিক উষ্ণতা অস্থায়ীভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে পৃথিবীর নানা প্রান্তে তৈরি হতে পারে খাদ্য, পানি ও স্বাস্থ্য সুরক্ষার ঝুঁকি।
থাইল্যান্ডের কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, দেশটিতে এ বছর হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে ৩০ জন মারা গেছে। এ সময় তীব্র তাপপ্রবাহের ফলে লোকজনকে বাড়ির বাইরে যাওয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক করা হয়েছে। দেশটিতে বিদ্যুতের চাহিদার নতুন রেকর্ড তৈরি হয়েছে। মানুষ শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের ব্যবহার বেশি করায় গত সোমবার রাতে সেখানে বিদ্যুতের চাহিদা দাঁড়ায় ৩৫ হাজার ৮৩০ মেগাওয়াটে। রাজধানী ব্যাংককে গত বুধবার তাপমাত্রা ৪০ দশমিক ১ ডিগ্রি ছাড়িয়ে যায়।
তীব্র তাপপ্রবাহের কবলে পড়েছে বাংলাদেশও। এখানকার শিক্ষা ও কৃষি খাতে ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়েছে। এখানে স্কুল বন্ধ থাকায় ৩ কোটি ৩০ লাখ শিক্ষার্থীর ওপর এর প্রভাব পড়েছে।
এই তীব্র তাপপ্রবাহের মধ্যেই ভারতে চলছে লোকসভা নির্বাচনের ভোট। গতকাল শুক্রবার দেশটিতে দ্বিতীয় দফার ভোট দিতে গিয়ে দুর্ভোগে পড়েন ভোটাররা। ভোটারদের ওপর গরমের প্রভাব কমানোর উপায় নিয়ে আলোচনা করতে গত সপ্তাহে আবহাওয়া কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করছিলেন নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা।
এ সপ্তাহে বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার পক্ষ থেকে এক প্রতিবেদনে সতর্ক করে বলা হয়, ২০২৩ সালে আবহাওয়া, জলবায়ু এবং পানি–সম্পর্কিত বিপদের দিক থেকে বিশ্বের সবচেয়ে দুর্যোগ-বিধ্বস্ত অঞ্চল ছিল এশিয়া। এ অঞ্চলের দেশগুলোতে অর্থনৈতিক ক্ষতি ও প্রাণহানির ঘটনা বেশি ঘটেছে বন্যা ও ঝড়ে। এখানে দাবদাহের প্রভাবও তীব্র হচ্ছে।
গত বছরের এপ্রিল ও জুন মাসে ভারতে বেশ কিছু দাবদাহ বয়ে যায়। এতে ১১০ জন হিটস্ট্রোকে মারা যান। বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা বলেছে, এপ্রিল ও মে মাসে একটি বড় এবং দীর্ঘায়িত তাপপ্রবাহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বেশির ভাগ অংশকে প্রভাবিত করে। রেকর্ড সৃষ্টিকারী প্রচণ্ড এ দাবদাহ বাংলাদেশ থেকে শুরু করে পূর্ব ভারত ও চীনের উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চল পর্যন্ত বিস্তৃত থাকতে দেখা যায়।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, বিশ্বজুড়ে চরম আবহাওয়া সৃষ্টির জন্য প্রাকৃতিক কারণের পাশাপাশি মানবসৃষ্ট জলবায়ু বিপর্যয়ও অনেকটাই দায়ী। এতে আরও ঘন ঘন দাবদাহ, বন্যা, দাবানলের মতো মারাত্মক বিপর্যয় সামনে আসতে শুরু করেছে।