নিউইয়র্ক টাইমস–এর নিবন্ধ
যেভাবে রাজাপক্ষে পরিবারকে হটাল শ্রীলঙ্কার জনতা
গণবিক্ষোভের পরিপ্রেক্ষিতে প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া (সম্প্রতি পদত্যাগ করা) নিজ চরিত্রের বিপরীতে গিয়ে ‘অহিংস’ পন্থা বেছে নেন। বার্তা দিতে সচেষ্ট হন, তিনি ভিন্নমত সহ্য করেন। কিন্তু প্রধানত মধ্যবিত্ত শ্রেণির অংশগ্রহণে দানাবাঁধা বিক্ষোভ কোনো গতানুগতিক প্রতিবাদ ছিল না। শ্রীলঙ্কায় রাজাপক্ষে পরিবারের উত্থান–পতন নিয়ে ১২ আগস্ট এক নিবন্ধ প্রকাশ করেছে নিউইয়র্ক টাইমস। সেটির সংক্ষেপিত অনুবাদ প্রকাশ করা হলো।
প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া (জনরোষের মুখে পড়ে পদত্যাগ করা) রাজাপক্ষে কোণঠাসা হয়ে পড়েছিলেন। তাঁর সামনে বিক্ষোভকারীরা, পেছনে সমুদ্র।
ঔপনিবেশিক আমলে নির্মিত একটি বাসভবনের (প্রেসিডেন্ট প্রাসাদ) এক কক্ষ থেকে নিঃসঙ্গ গোতাবায়া বিক্ষোভের গতিপ্রকৃতি পর্যবেক্ষণ করতেন। ওই কক্ষ থেকেই নির্দেশনা দিতেন, কী করতে হবে। কিন্তু দ্রুত বিক্ষোভের ঢেউ আছড়ে পড়ে প্রেসিডেন্ট প্রাসাদের দুয়ারে।
দক্ষিণ এশীয় দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কায় তিন দশকের গৃহযুদ্ধের শেষ দিকে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ব্যাপক অভিযোগ উঠেছিল তৎকালীন প্রতিরক্ষামন্ত্রী গোতাবায়ার বিরুদ্ধে। বিক্ষোভের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি তাঁর চরিত্রের বিপরীতে গিয়ে ‘অহিংস’ পন্থা বেছে নেন। এর মাধ্যমে বার্তা দিতে সচেষ্ট হন—তিনি ভিন্নমত সহ্য করেন।
কিন্তু প্রধানত মধ্যবিত্ত শ্রেণির অংশগ্রহণে দানাবাঁধা বিক্ষোভ কোনো গতানুগতিক প্রতিবাদ ছিল না। শাসনক্ষমতায় গেড়ে বসা এলিটদের বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফুঁসে উঠেছিলেন আইনজীবী, শিক্ষক, নার্স ও ট্যাক্সিচালকেরা। তাঁরা জানতেন, এই রাজনৈতিক এলিটদের কারণেই দেশ দেউলিয়া হয়েছে। বিক্ষোভ ক্রমে তীব্র আকার ধারণ করে।
ফলে আসে ‘৯ জুলাই’। ওই দিন দুপুরের আগেই সাগরের তীরে অবস্থিত প্রেসিডেন্ট প্রাসাদের কাছে পৌঁছে যান হাজার হাজার বিক্ষোভকারী। প্রাসাদের ভেতরে তখন রাজপক্ষেদের রাজনৈতিক রাজবংশের শেষ ব্যক্তি গোতাবায়া রাজাপক্ষে। তাঁর ও বিক্ষোভকারীদের মাঝখানে তখন লোহার তৈরি শক্তপোক্ত দুটি ফটক, তিনটি প্রতিবন্ধক (ব্যারিকেড) আর গিজগিজ করা সশস্ত্র নিরাপত্তারক্ষী।
বিক্ষোভকারীরা প্রাসাদের দিকে অগ্রসর হতেই নেমে আসে কাঁদানে গ্যাসের শেলের বৃষ্টি। একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মা ও বিমাকর্মী বাবার সঙ্গে কলম্বোর দৃষ্টিনন্দন চত্বর গল ফেসে গাড়া তাঁবুতে থেকে টানা বিক্ষোভ করছিল ১৭ বছরের দুলিনি সুমনাসেকারা। অন্য অনেকের মতো সে–ও কাঁদানে গ্যাসের ধোঁয়ায় দিশেহারা হয়ে ছোটাছুটি শুরু করে। এতে আহত হয় সে। তাঁবুতে ফিরে প্রাথমিক চিকিৎসা নিতে হয় তাকে। দুলিনি বলছিল, ‘আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে আমরা বেশি নিশ্চিত ছিলাম যে ওই দিন গোতাবায়াকে সরে যেতেই হবে।’
বিকেলের মধ্যে প্রেসিডেন্ট প্রাসাদ তছনছ হয়ে পড়ে। গোতাবায়া প্রাসাদের পেছনের ফটক দিয়ে নৌপথে কলম্বো ছাড়েন। আসলে তিনি দেশ ছাড়তেই বাধ্য হন। বিক্ষোভকারীদের নিয়ন্ত্রণে তখন প্রেসিডেন্ট প্রাসাদ। প্রাসাদের সুইমিংপুলে কেউ কেউ গোসল করেন, প্রেসিডেন্টের বিছানায় আড়মোড়া ভাঙেন অনেকে এবং রান্নাঘরে নাশতা বানিয়ে খান।
উত্থান
গৃহযুদ্ধের অবসানের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ২০০৫ সালে প্রেসিডেন্ট হিসেবে আবির্ভূত হন গোতাবায়া রাজাপক্ষের ভাই মাহিন্দা রাজাপক্ষে। এ গৃহযুদ্ধের মূলে ছিল সংখ্যালঘু তামিলদের প্রতি সংখ্যাগরিষ্ঠ সিংহলি বৌদ্ধদের ধারাবাহিক বৈষম্য।
গোতাবায়া রাজনীতি পরিহার করে সামরিক বাহিনীতে নিজের ক্যারিয়ার গড়ায় মনোযোগী হয়েছিলেন। গত নব্বইয়ের দশকের শেষ ভাগে তিনি একজন লেফটেন্যান্ট কর্নেল হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন। পরে কলম্বো থেকে তথ্যপ্রযুক্তির (আইটি) ওপর ডিগ্রি নেন ও যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান। সেখানে লস অ্যাঞ্জেলেসে লোয়োলা ল স্কুলে আইটিতে চাকরি নেন।
প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর মাহিন্দা রাজাপক্ষে লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) গোতাবায়াকে তাঁর প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ করেন। যুদ্ধের কলাকৌশল নির্ধারণে গোতাবায়া নির্দয় ও চতুরতার পরিচয় দেন। কোনো দাবিদাওয়া ছাড়া ‘শর্তহীন আত্মসমর্পণে’ তামিল বিদ্রোহীদের বাধ্য করা হয়েছিল। পরে উইকিলিকসের ফাঁস করা কূটনৈতিক তারবার্তায় বিষয়টি উন্মোচিত হয়।
জাতিসংঘের অনুমান, গৃহযুদ্ধের শেষ কয়েক মাসে ৪০ হাজারের মতো বেসামরিক তামিলকে হত্যা করা হয়। এর বাইরে হাজার হাজার মানুষ নিখোঁজ হন, যাঁদের অনেকের হদিস এখনো মেলেনি। গোতাবায়া অবশ্য বরাবরই এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন।
রাজাপক্ষে পরিবারের দুই ভাই মিলে তামিল বিদ্রোহ দমনের পাশাপাশি অর্থনৈতিক উন্নয়নেরও প্রতিশ্রুতি দেন। ২০০৯ সালের মধ্যে বিদ্রোহ প্রশমিত হয় এবং পর্যটনের দ্বার আবার খুলে যায়।
দেশের পাশাপাশি রাজাপক্ষে পরিবারের ভাগ্যও খুলে যেতে থাকে। গৃহযুদ্ধের পর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হতে থাকে দ্রুত। রাজাপক্ষেরা ব্যয়বহুল অবকাঠামো নির্মাণের দিকে ঝোঁকেন। দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠার পটভূমিতে তাঁরা চীনসহ বিভিন্ন দেশ ও সংস্থার কাছ থেকে বিপুল অঙ্কের অর্থ ঋণ নেন। এক্সপ্রেসওয়ে, স্টেডিয়াম, সমুদ্রবন্দর, বিমানবন্দর নির্মাণ করেন।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি গোতাবায়াকে নগর উন্নয়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়। কলম্বোর সৌন্দর্যবর্ধনসহ অন্যান্য শহরের সিটি হলগুলোর উন্নয়নকাজে সেনাবাহিনীকে যুক্ত করেন তিনি।
তবে রাজাপক্ষেদের রাজকীয় এই কর্মযজ্ঞ জনসমর্থনের অভাবে থমকে যায়। ২০১৫ সালে তৃতীয় দফায় নির্বাচিত হতে ব্যর্থ হন মাহিন্দা রাজাপক্ষে। তবে জোট সরকার গঠন করা দলগুলোর মধ্যে মতবিরোধ দেখা দেওয়ায় রাজাপক্ষেদের পুনরায় ক্ষমতায় আরোহণের পথ খুলে যায়।
২০১৯ সালে ইস্টার সানডেতে কলম্বোয় গির্জা ও হোটেলে হামলা ছিল দেশটিতে নিরাপত্তাব্যবস্থা ভেঙে পড়ার চরম উদাহরণ। হামলায় আড়াই শতাধিক মানুষের প্রাণহানি ঘটে। দেশব্যাপী ভীতি ছড়িয়ে পড়ে; পর্যটন থমকে যায়। ডি সিলভার মতো উদ্যোক্তাদের মধ্যে এ ভয় ঢুকে পড়ে যে তাঁরা হয়তো সব হারাতে বসেছেন। এমন পটভূমিতে নিরাপত্তাব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠার আকাঙ্ক্ষায় ৬৯ লাখ শ্রীলঙ্কান ভোটারের মতো তিনি ও তাঁর স্বামীও নির্বাচনে গোতাবায়াকে ভোট দিয়ে জেতান।
পতন
তবে গোতাবায়ার মধুচন্দ্রিমার কাল খুব সংক্ষিপ্ত হয়ে পড়ে। কয়েক মাসের মধ্যেই করোনা অতিমারি দেখা যায়। গোতাবায়া লকডাউন কার্যকর করাসহ টিকাদান কর্মসূচি বাস্তবায়নে সেনাবাহিনী মোতায়েন করেন। এটা তাঁর অতিপরিচিত কৌশল। কিন্তু অর্থনৈতিক ধাক্কা সামলানোর জন্য তেমন প্রস্তুতি ছিল না তাঁর। অর্থনীতি আগে থেকেই মাহিন্দা রাজাপক্ষের করা বেপরোয়া ঋণে জর্জরিত হয়ে পড়ে।
বৈদেশিক আয়ে টান ও পর্যটনে ভাটা পড়ায় এক বছরের মধ্যে দেশের অর্থনীতি থেকে প্রায় এক হাজার কোটি ডলার ‘নাই’ হয়ে যায়। ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) দ্বারস্থ হওয়ার জন্য সরকারকে পরামর্শ দেন শ্রীলঙ্কার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কিছু কর্মকর্তা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সেই সময়ের ডেপুটি গভর্নর নন্দলাল বীরসিংহ এখন গভর্নরের দায়িত্বে। তিনি বলেন, ‘প্রশাসন আমাদের পরামর্শ কানে তোলেনি।’ সেই সময় প্রেসিডেন্টের মন্ত্রিসভার মধ্যে ঐক্য ছিল না। ফলে গোতাবায়া রাজাপক্ষে সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলেন না। এমনকি অর্থনৈতিক সংকট চরম আকার ধারণ করার পরও প্রেসিডেন্ট গোতাবায়ার নজর ছিল অন্য জায়গায়। ২০২১ সালের এপ্রিলে তিনি হঠাৎ রাসায়নিক সার নিষিদ্ধের ঘোষণা দেন। তাঁর উপদেষ্টারা জানান, প্রেসিডেন্টের আশা ছিল শ্রীলঙ্কা ‘বিশ্বের অর্গানিক বা জৈব বাগানে’ পরিণত হবে।
জৈব সারের অভাবে কৃষকের ফলন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়। অন্যদিকে রাজাপক্ষে পরিবারের মধ্যে ফাটল বাড়তে থাকে। রাসায়নিক সার নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার উদ্যোগ নেন গোতাবায়া। কিন্তু তাঁর এ পথে বাধা হয়ে দাঁড়ান ভাই মাহিন্দা রাজাপক্ষে, যিনি প্রধানমন্ত্রীর চেয়ারে ছিলেন। মাহিন্দা ক্ষমতায় ফিরেই সরকারের ওপর গোতাবায়ার নিয়ন্ত্রণ দুর্বল করে দেন। এতে ক্ষমতাবৃত্তে তৈরি হয় দুটি কেন্দ্র। সব মিলিয়ে মন্ত্রিসভায় জায়গা করে নেন রাজপক্ষে পরিবারের পাঁচ সদস্য।
২০২২ সালের বসন্তের মধ্যে শ্রীলঙ্কায় জ্বালানি তেলের জন্য লম্বা সারি পড়ে যায়। সুপারমার্কেটগুলোতে টান পড়ে আমদানি করা খাদ্যপণ্যের। দেশজুড়ে প্রায় নিঃশেষ হয়ে যায় রান্নার গ্যাস সরবরাহ। কেননা সরকারের বৈদেশিক মুদ্রার মজুত তত দিনে একরকম শূন্যে নেমে আসে। এ অবস্থায়ও সরকারের উচ্চপর্যায়ের বৈঠকগুলোতে প্রেসিডেন্ট গোতাবায়াকে প্রায়ই ভুল বোঝানো হতো। টেলিফোনে তাঁর কথোপকথনের গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বিষয়টি উঠে এসেছে। গোতাবায়ার কয়েকজন ঘনিষ্ঠ বন্ধুর ভাষ্য, তিনি তাঁর পরিবারের মধ্যে বন্দী হয়ে পড়েছিলেন।
বিরূপ প্রতিক্রিয়া
শিগগিরই ছোট ছোট বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে রাজাপক্ষেদের সরে যাওয়ার দাবি উঠতে থাকে। ক্রমে এর ঢেউ আছড়ে পড়তে থাকে সারা দেশে। পরে কলম্বোর গল ফেস হয়ে ওঠে এ বিক্ষোভের কেন্দ্রস্থল।
গত এপ্রিল থেকেই পরিবারের সঙ্গে বিক্ষোভে শামিল হয়েছিল দুলিনি সুমনাসেকারা। স্বেচ্ছাসেবী হয়ে ক্যাম্পের রান্নাঘরের কাজ ও ঘরে অনলাইনে ক্লাস—দুই–ই সামলেছে সে।
দুলিনির মতো অন্য শিক্ষার্থীদের মধ্যে যারা চিকিৎসাশাস্ত্রে পড়তে আগ্রহী, তাদের প্রথমত কোভিডের কারণে এবং পরে সরকারি নীতির কারণে ক্লাসের বাইরে থাকতে হয়েছে। জ্বালানি খরচ কমাতে সরকার অনলাইন ক্লাসের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।
সংকটময় পরিস্থিতিতে দুলিনির মা শিক্ষক ধামিকা মুথুকুমারানাকেও মূল্য দিতে হয়। গুঁড়ো দুধ ও শস্যদানার মতো অতিপ্রয়োজনীয় পণ্য পেতে পরিবারটিকে অনেক দৌড়ঝাঁপ করতে হয়; অনেক বেশি দামে কিনতে হয়। তবে এই ভোগান্তি ছিল হতাশার চেয়ে কম। ধামিকা মুথুকুমারানা ও তাঁর স্বামী ধামিন্দা সুমনাসেকারার মধ্যে নাগরিক দায়িত্ববোধ বেশি কাজ করে। এ কারণে সন্তানসহ তাঁরা রাজপথে নামেন, গল ফেসে তাঁবু গেড়ে বসেন।
সংঘাত
৮ জুলাই, সন্ধ্যা। প্রেসিডেন্ট প্রাসাদের পরস্থিতি ভীষণ অস্থির। একের পর এক আইনপ্রণেতা ভেতরে ঢুকছেন, ভেতর থেকে বের হচ্ছেন। রাতের খাবারের জন্য প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া ডাইনিং টেবিলে বসতে পারছেন না। তিনি খেতে বসেন মধ্যরাতের একটু আগে। কারণ, গোয়েন্দা প্রতিবেদন বলছে, পরদিন সকালে ১০ হাজারের মতো বিক্ষোভকারীর জমায়েত হবে সেখানে।
দুই মাস আগে শুরু হওয়া আন্দোলন দ্রুত বেগবান হয়; যে আন্দোলন তাঁকে পদচ্যুত করে ছাড়ে। আগেই প্রধানমন্ত্রী পদ ছেড়েছেন মাহিন্দা রাজাপক্ষে। কিন্তু গোতাবায়ার বের হওয়া সহজ হচ্ছে না। কর্মী–সমর্থকদের একটি অংশ বিক্ষোভকারীদের ওপর চড়াও হওয়ায় সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে। সংঘাত হয়েছে দুই পক্ষের মধ্যে। তাঁর দলের কয়েক ডজন আইনপ্রণেতার বাড়িতে আগুন দেওয়া হয়েছে।
প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া গোয়েন্দা সূত্রে জানতে পারেন, তাঁর ভাই মাহিন্দার সমর্থকেরা পরিস্থিতি আরও ঘোলা করছে, কিন্তু তাঁদের ঠেকানোর সামর্থ্য তাঁর নেই। ওই দিন গোতাবায়ার সঙ্গে থাকা কর্মকর্তাদের ভাষ্য, সন্ধ্যা না গড়াতেই টেলিফোনে চেঁচিয়ে কথা বলতে বলতে তাঁর গলা ভেঙে যায়। ওই কর্মকর্তাদের দাবি, সামরিক বাহিনী ও পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে প্রেসিডেন্ট বুঝতে পারেন, তিনি তাঁর নিয়ন্ত্রণ হারাতে বসেছেন।
এর আগের কয়েক সপ্তাহে সরকার থেকে নিজ পরিবারের সদস্যদের সরিয়ে গোতাবায়া নতুন করে শান্তির সূচনার একটা প্রয়াস তুলে ধরেন বটে। তবে বিক্ষোভকারীরা তুষ্ট হতে পারেননি।
৯ জুলাইয়ের সকালবেলা এটা পরিষ্কার হয়ে যায়, যতটা ধারণা করা হয়েছিল, তার চেয়ে বেশিসংখ্যক বিক্ষোভকারী রাজপথে নেমেছে। দুপুরের আগে প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে ঢোকার জন্য এগোতে থাকেন তাঁরা। প্রথম প্রতিবন্ধক কিছুক্ষণের মধ্যেই গুঁড়িয়ে দেন। তাঁদের লক্ষ্য করে একের পর এক কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করা হচ্ছিল। এরপরও পিছু না হটে সামনে পড়া আরও দুটি প্রতিবন্ধক গুঁড়িয়ে দেন বিক্ষোভকারীরা। ততক্ষণে তাঁরা প্রাসাদে ঢোকার সর্বশেষ বা দ্বিতীয় ফটকের সামনে পৌঁছে যান। ফটকের ওপারে প্রেসিডেন্ট, এপারে বিক্ষোভাকারীরা। তখনই গর্জে ওঠে বন্দুক। গুলিবিদ্ধ হয়ে দুজন মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। লাঠি হাতেও বিক্ষোভকারীদের ওপর চড়াও হন নিরাপত্তাকর্মীরা। প্রাসাদের ভেতরে থাকা প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া বুঝে যান, তাঁর সময় শেষ। জেনারেলরা তাঁকে বলেন, তাঁর যাওয়ার সময় হয়েছে।
●অনুবাদ: হাসান ইমাম