সিউলে ৩ হাজার বর্গমিটারের ‘রহস্যময়’ গোপন সুড়ঙ্গ
দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সিউলের কেন্দ্রস্থলে সিউল চত্বরের অবস্থান। প্রতিদিন লাখো মানুষের আনাগোনা এই জায়গায়। অথচ এর ঠিক নিচেই রয়েছে বিশাল একটি সুড়ঙ্গ (টানেল)। মাটির নিচের এই সুড়ঙ্গ কয়েক দশক ধরে অব্যবহৃত পড়ে রয়েছে। রহস্যময় এ সুড়ঙ্গ নিয়ে মানুষের মনে ব্যাপক আগ্রহ দেখা দিয়েছে।
আইকনিক সিউল চত্বর জনবহুল একটি জায়গা। কনসার্ট আয়োজন থেকে শুরু করে যেকোনো বিক্ষোভ হয় এখানে। লাখো মানুষের পদচারণে মুখর থাকে চত্বরটি। অথচ এর নিচেই রয়েছে বিশাল শূন্যতা। বিশাল একটি সুড়ঙ্গ। তবে এ সুড়ঙ্গ কবে, কেন বানানো হয়েছিল, সেই বিষয়ে নগর কর্তৃপক্ষও নিশ্চিত নয়।
সুড়ঙ্গটিতে গেলে দেখা যাবে, এর অন্ধকার ছাদ থেকে খনিজের মতো কিছু ঝুলে রয়েছে। যেন এটা ভূগর্ভস্থ কোনো খনি। বছরের পর বছর অযত্ন–অবহেলায় পড়ে রয়েছে সুড়ঙ্গটি। ৩৩৫ মিটার চওড়া এই সুড়ঙ্গ প্রায় ৩ হাজার বর্গমিটার এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে।
রহস্যময় এই সুড়ঙ্গ এখন দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য দর্শনার্থীরা এখানে ঘুরতে যেতে পারছেন। সুড়ঙ্গটিতে যাওয়া দর্শনার্থীদের ধুলা থেকে বাঁচতে মাস্ক পরতে হয়। এ ছাড়াও মাথায় থাকে হেলমেট, পায়ে লম্বা জুতা।
সুড়ঙ্গটি থেকে সিউল সাবওয়েতে ট্রেন যাতায়াতের শব্দ শোনা যায়। কেননা, সিউল সাবওয়ের ইউলজিরো ওয়ান–গা এবং সিটি হল স্টেশনের মাঝামাঝি জায়গায় ওই সুড়ঙ্গটি সিউলের প্রথম ভূগর্ভস্থ শপিংমলের মাত্র ১৩ মিটার নিচে অবস্থিত।
সুড়ঙ্গটি ঘুরে এসেছেন লি নামের একজন। তিনি বলেন, এটা কিছুটা ভীতিকর অভিজ্ঞতা ছিল। যে উদ্দেশ্যে বানানো হোক না কেন, সেখানে দর্শনার্থীরা শহরের ইতিহাস উপলব্ধি করতে পারবেন।
ধারণা করা হয়, বিমান হামলা থেকে নাগরিকদের রক্ষা করতে এই সুড়ঙ্গ বানানো হয়েছিল। দক্ষিণ কোরিয়ায় এটা অবাক করা কোনো বিষয় নয়। কেননা দেশটির মানুষেরা বরাবর উত্তর কোরিয়ার হামলার ভয়ে থাকে। তবে সুড়ঙ্গটি কেন বানানো হয়েছিল, তা জানা যায়নি। শহর কর্তৃপক্ষের ধারণা, সিউলের দুটি সাবওয়েকে যুক্ত করতে এটি বানানো হয়ে থাকতে পারে। কিন্তু পরে কোনো কারণে আর এটি ব্যবহার করা হয়নি।
রহস্যময় এই সুড়ঙ্গে এক ঘণ্টার ভ্রমণ সিউল শহর গড়ে তোলা, শহরে সাবওয়ে নির্মাণের ইতিহাসে সম্পর্কে ধারণা দেয়। গত শতকের সত্তরের দশকের শুরুর দিকে সিউলে সাবওয়ের নির্মাণযজ্ঞ চলেছিল।
সিউলের ফিউচার আরবান স্পেসেস প্ল্যানিং ব্যুরোর প্রধান হং সান–কি এই সুড়ঙ্গ সফরকে ‘সিউল শহরের গোপন গল্প জানার সুযোগ’ বলে বর্ণনা করেছেন। তাঁর মতে, এর মধ্য দিয়ে দর্শনার্থীরা এমন একটি জায়গার সঙ্গে পরিচিত হন, যেটা তাঁরা কখনোই কল্পনা করেননি।