ভূমি মাইনে বিশ্বে সবচেয়ে বেশি হতাহতের ঘটনা মিয়ানমারে

মিয়ানমার সেনাবাহিনীর একটি অবিস্ফোরিত ভূমি মাইন দেখাচ্ছেন দেশটির বিদ্রোহী গোষ্ঠী তায়াং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মির (টিএনএলএ) এক সদস্য। শান রাজ্যের উত্তরাঞ্চলের মানতং শহরে, ১৭ নভেম্বর ২০২৪ছবি: এএফপি

ভূমি মাইন ও বিস্ফোরক ধারণকারী গোলাবারুদের আঘাতে ২০২৩ সালে মিয়ানমারে এক হাজার তিনজন হতাহত হয়েছে। একই সময়ে সিরিয়ায় হতাহত হয়েছে ৯৩৩ জন।

আজ বুধবার প্রকাশিত ইন্টারন্যাশনাল ক্যাম্পেইন টু ব্যান ল্যান্ডমাইনসের (আইসিবিএল) ‘ল্যান্ডমাইন মনিটর ২০২৪’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে।

মিয়ানমারে দেশটির সামরিক বাহিনী ও ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে কয়েক দশক ধরে সংঘাত চলছে। এসব সংঘাতে প্রাণঘাতী ভূমি মাইন ও গোলাবারুদ ব্যবহার করা হচ্ছে।

মিয়ানমারে ২০২১ সালে অং সান সু চিকে সরিয়ে ক্ষমতা গ্রহণ করে সেনাবাহিনী। এর পর থেকে দেশটিতে জান্তাবিরোধী সংঘাত আরও তীব্র আকার ধারণা করেছে। গণপ্রতিরক্ষা বাহিনীর (পিডিএফ) অসংখ্য শাখার জন্ম হয়েছে। তারা সবাই জান্তাকে ক্ষমতাচ্যুত করতে সশস্ত্র সংগ্রাম করছে।

আইসিবিএলের তথ্যমতে, ২০২৩ সালে মিয়ানমার ও সিরিয়ার পর ভূমি মাইন বিস্ফোরণে সবচেয়ে বেশি হতাহতের ঘটনা ঘটেছে আফগানিস্তানে। দেশটিতে হতাহতের সংখ্যা ৬৫১। একই সময়ে ইউক্রেনে ভূমি মাইনে হতাহত হয়েছে ৫৮০ জন।

ভূমি মাইন নিষিদ্ধ করা নিয়ে জাতিসংঘের একটি চুক্তি রয়েছে। এ চুক্তিতে ভূমি মাইনের ব্যবহার, মজুত ও তৈরি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। মিয়ানমার সেই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেনি।

আইসিবিএলের প্রতিবেদন বলছে, গত কয়েক বছরে সামরিক বাহিনী কর্তৃক ভূমি মাইনের ব্যবহার ‘উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে’। এ সময়কালে মোবাইল ফোন টাওয়ার ও জ্বালানির পাইপলাইন অবকাঠামোতেও ভূমি মাইন ব্যবহার করতে দেখা গেছে। তবে এসব অবকাঠামোতে অধিকাংশ সময় সামরিক বাহিনীর বিরোধীরাই ভূমি মাইন ব্যবহার করেছে বলে জানা গেছে।

গত কয়েক দশকের অভ্যন্তরীণ সংঘাতে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রায় সময় নৃশংসতা ও যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ উঠেছে।

ইন্টারন্যাশনাল ক্যাম্পেইন টু ব্যান ল্যান্ডমাইনসের (আইসিবিএল) ‘ল্যান্ডমাইন মনিটর ২০২৪’ শীর্ষ প্রতিবেদন উপস্থাপন অনুষ্ঠান। থাইল্যান্ডের ফরেন করেসপনডেন্টস ক্লাবে, ২০ নভেম্বর ২০২৪
ছবি: এএফপি

আইসিবিএল বলেছে, জান্তার সদস্যরা বেসামরিক মানুষকে ভূমি মাইন পুঁতে রাখা এলাকায় হাঁটতে বাধ্য করেছে, এমন প্রমাণ তাদের হাতে রয়েছে। কোনো এলাকাকে ‘মাইনমুক্ত’ করতেই এমন কাজ করা হয়ে থাকে।

আন্তর্জাতিক পর্যায়ে মাইন ব্যবহারের তথ্য সংগ্রহকারী সংস্থাটি বলেছে, তারা কিছু ছবি বিশ্লেষণ করে মিয়ানমারে মাইন তৈরির ইঙ্গিত পেয়েছে। এসব ছবি ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরের মধ্যে জান্তাবিরোধীদের মাইন জব্দের পর তোলা হয়েছে। এসব ঘটনা থেকে এটাই প্রমাণিত হয়, ‘দেশটির প্রায় প্রতিটি অংশেই’ মাইন তৈরি করা হয়।

জাতিসংঘের তথ্যমতে, ২০২১ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে মিয়ানমারে ৩০ লাখের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।

জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ গত এপ্রিলে বলেছে, সংঘাতে জড়িত সব পক্ষই ‘নির্বিচার’ ভূমি মাইন ব্যবহার করছে।

ভূমি মাইনে আহত মিয়ানমারের এক কৃষক। ৫২ বছর বয়সী হ্লা হান নামের এই কৃষক একটি মাইনে পা দিয়ে তাঁর ডান পা হারিয়েছেন। পূর্ব কায়া রাজ্যের ডেমোসো শহরে নিজের বাড়িতে, ১৮ নভেম্বর ২০২৪
ছবি : এএফপি

মিয়ানমারের বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো বার্তা সংস্থা এএফপিকে জানিয়েছে, নিজেদের নিয়ন্ত্রণাধীন কিছু এলাকায় তারা নিজেরাই মাইন পুঁতে রেখেছে।

আইসিবিএলের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৩ সালে সারা বিশ্বে ভূমি মাইন ও বিস্ফোরক ধারণকারী গোলাবারুদের আঘাতে অন্তত ৫ হাজার ৭৫৭ জন আহত হয়েছে। এর মধ্যে নিহত হয়েছে ১ হাজার ৯৮৩ জন। আহত ৩ হাজার ৬৬৩ জন। বাকি ১১১ জন নিহত হয়েছে, না আহত অবস্থায় জীবিত রয়েছে, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। হতাহতদের ৮৪ শতাংশ বেসামরিক মানুষ।

২০২২ সালে সারা বিশ্বে ভূমি মাইন ও বিস্ফোরক ধারণকারী গোলাবারুদের আঘাতে হতাহত হয়েছিল অন্তত ৪ হাজার ৭১০ জন। এর মধ্যে নিহত হয়েছিল ১ হাজার ৬৬১ জন। আহত হয়েছিল ৩ হাজার ১৫ জন। বাকি ৩৪ জনের সর্বশেষ অবস্থা জানা যায়নি।