পার্লামেন্টে ১৫৯ আসন পেয়ে শক্তিশালী হল অনূঢ়ার এনপিপি

শ্রীলঙ্কার বামপন্থী প্রেসিডেন্ট অনূঢ়া কুমারা দিশানায়েকে। গতকাল বৃহস্পতিবার পার্লামেন্ট নির্বাচনে ভোট দেওয়ার পর দলীয় সমর্থকদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। কলম্বো, শ্রীলঙ্কা, ১৪ নভেম্বর ২০২৪ছবি: রয়টার্স

শ্রীলঙ্কায় আগাম পার্লামেন্ট নির্বাচনে দেশটির নতুন বামপন্থী প্রেসিডেন্ট অনূঢ়া কুমারা দিশানায়েকের নির্বাচনী জোট ন্যাশনাল পিপলস পাওয়ার (এনপিপি) সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে। দেশটির নির্বাচন কমিশন গতকাল শুক্রবার জানায়, অনূঢ়ার এনপিপি জোট ২২৫ আসনের মধ্যে ১৫৯ আসন পেয়েছে। নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, এনপিপি জোট দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে, যা দেশটির ইতিহাসে সবচেয়ে বড় জয়।

গত বৃহস্পতিবারের নির্বাচনে এনপিপি জোট ৭০ লাখ অর্থাৎ ৬২ শতাংশ ভোট পেয়েছে। এর আগে গত সেপ্টেম্বরে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় অনূঢ়া ৪২ শতাংশ ভোট পেয়েছিলেন। এর অর্থ, তিনি সংখ্যালঘু থেকে শুরু করে সব ধরনের ভোটারের সমর্থন তাঁর জোটের পক্ষে টানতে পেরেছেন। তবে রাজধানী কলম্বোর উপকণ্ঠে আতশবাজি জ্বালানো ছাড়া এ নিয়ে তেমন উদ্‌যাপন করেনি দলটি।

শ্রীলঙ্কার রাজাপক্ষে পরিবারের পদুজানা পেরামুনা পার্টি এক দশকের বেশি সময় শ্রীলঙ্কার ক্ষমতায় ছিল। বিগত আইনসভায় তাদের ১৪৫টির বেশি আসন ছিল। কিন্তু এবারের পার্লামেন্টে দলটি প্রায় মুছে গেছে। দলটি মাত্র তিনটি আসন পেয়েছে। পার্লামেন্ট নির্বাচনে এনপিপি জোটের প্রধান প্রতিপক্ষ সাজিথ প্রেমাদাসার দল সমাগি জনা বালাবেগায়া (এসজেবি) ৪০টি আসনে জয় পেয়েছে। অন্যদিকে সাবেক প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহের সমর্থন পাওয়া নিউ ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট মাত্র পাঁচটি আসন পেয়েছে।

]গত সেপ্টেম্বরে দেশটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন অনূঢ়া। কিন্তু তখন পার্লামেন্টে তাঁর নির্বাচনী জোট এনপিপির আসন ছিল মাত্র তিনটি। পার্লামেন্টে নিজ জোটের আসনসংখ্যা বাড়াতে তিনি আগাম নির্বাচন দেন। এখন তাঁর জোট সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করল।

গতকাল ভোট দেওয়ার পর অনূঢ়া বলেছিলেন, ‘আমরা একটি শক্তিশালী পার্লামেন্ট গঠনের জন্য জনরায় (ম্যান্ডেট) পাওয়ার আশা করছি। আমরা আত্মবিশ্বাসী যে জনগণ আমাদের এই ম্যান্ডেট দেবে।’

অনূঢ়া আরও বলেছিলেন, শ্রীলঙ্কার রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে পরিবর্তন এসেছে, যার শুরু গত সেপ্টেম্বরে। এই পরিবর্তন অবশ্যই অব্যাহত থাকবে।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, পার্লামেন্টে অনূঢ়ার জোটের সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন তাঁর হাতকে শক্তিশালী করল। এখন তিনি তাঁর অর্থনৈতিকসহ অন্যান্য নীতি সহজেই বাস্তবায়ন করতে পারবেন। প্রেসিডেন্ট কার্যনির্বাহী ক্ষমতার অধিকারী কিন্তু অনূঢ়ার জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ মন্ত্রিসভা নিয়োগে পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রয়োজন ছিল। এ ছাড়া সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার পর তিনি প্রেসিডেন্টের একচ্ছত্র ক্ষমতায় রাশ টানার সুযোগ পাবেন। তিনি বিরোধী শিবিরে থাকার সময় এ নিয়ে প্রতিবাদ করে আসছেন।

২০২২ সালে অর্থনৈতিক সংকটে পড়ে দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কা। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বেড়ে যায় বহুগুণ। প্রতিবাদে রাস্তায় নামেন দেশটির বিক্ষুব্ধ জনগণ। ব্যাপক বিক্ষোভের মুখে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষে পদত্যাগ করে দেশ থেকে পালান।

এর প্রায় দুই বছর পর গত সেপ্টেম্বরে দেশটিতে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হয়। এতে জয়ী হন বামপন্থী রাজনীতিক অনূঢ়া। নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী, ক্ষমতা গ্রহণের পর তিনি পার্লামেন্ট ভেঙে দেন। ১৪ নভেম্বর আগাম পার্লামেন্ট নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেন।

শ্রীলঙ্কায় ২০২০ সালের আগস্টে পাঁচ বছর মেয়াদে পার্লামেন্ট নির্বাচন হয়েছিল। সে হিসাবে নির্ধারিত সময়ের প্রায় এক বছর আগে গতকাল দেশটিতে আগাম পার্লামেন্ট নির্বাচন হয়।