কারাবন্দী সু চিকে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে না: এনএলডি
মিয়ানমারে জান্তা সরকার কারাবন্দী গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী অং সান সু চির জীবন ঝুঁকির মুখে ফেলেছে বলে দাবি করেছে তাঁর রাজনৈতিক দল। ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি)-র অভিযোগ, সু চিকে চিকিৎসাসহায়তা ও খাবার দেওয়া হচ্ছে না।
২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী সু চির নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে ক্ষমতা দখল করে। এর পর থেকে মিয়ানমারের নির্বাচিত এই নেত্রী সামরিক বাহিনীর হেফাজতে আছেন।
সম্প্রতি স্থানীয় গণমাধ্যমগুলোর খবরে বলা হয়, ৭৮ বছর বয়সী নোবেলজয়ী সু চি দুর্বল হয়ে পড়েছেন। একই সঙ্গে তাঁর মাথা ঘোরা ও বমি হচ্ছে। দাঁতে সংক্রমণের কারণে খেতেও পারছেন না।
ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি বলছে, ‘আমরা বিশেষভাবে উদ্বিগ্ন এই কারণে যে, তিনি (সু চি) পর্যাপ্ত চিকিৎসাসেবা পাচ্ছেন না। এমনকি তাঁকে স্বাস্থ্যকর খাবার ও থাকার পরিবেশ দেওয়া হচ্ছে না। এভাবে তাঁর জীবনকে ঝুঁকির মুখে ফেলা হচ্ছে।’
দলটি এক বিবৃতিতে বলে, যদি সু চিকে স্বাস্থ্যগতভাবে দুর্বল হওয়ার পাশাপাশি তাঁর জীবনকে ঝুঁকির মুখে ফেলা হয়, তাহলে এর জন্য সামরিক জান্তা সরকারই এককভাবে দায়ী থাকবে।
১৯ মাস ধরে জান্তা আদালতে সু চির বিচার চলেছে। কিন্তু স্বাস্থ্যগত কারণে তিনি শুনানিতে হাজির হতে পারেননি। সু চিকে বিভিন্ন মামলায় ৩৩ বছরের কারাদণ্ড দিয়ে গত বছর এই বিচারপ্রক্রিয়া শেষ হয়। তবে পরে জান্তাপ্রধান মিন অং হ্লাইং তাঁর সাজার মেয়াদ কিছুটা কমান।
যুক্তরাজ্যে বসবাস করা সু চির ছেলে বিবিসিকে গত সপ্তাহে বলেন, তাঁর মা মাথা ঘোরা এবং দাঁতের মাড়ির রোগে ভুগছেন। কিন্তু জান্তা সরকার তাঁকে চিকিত্সা দিচ্ছে না। যদিও মায়ের সঙ্গে এই ছেলের সরাসরি যোগাযোগ নেই।
গত সপ্তাহে জান্তা সরকারের একজন মুখপাত্র জন মিন তুন এএফপিকে বলেছিলেন, সু চি অসুস্থ বলে যে খবর বেরিয়েছে, তা ‘গুজব’। তিনি বলেন, তিনি (সু চি) কোনো অসুখে ভুগছেন না। চিকিৎসকেরা তাঁর স্বাস্থ্যের যত্ন নিচ্ছেন।
এনএলডি জানায়, জান্তা ‘গোপন জায়গায় তাঁকে (সু চি) জিম্মি করে রেখেছে।’ দলটি সু চিসহ সব রাজনৈতিক বন্দীর মুক্তির জন্য আরও চাপ তৈরি করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।
স্থানীয় একটি পর্যবেক্ষণকারী গ্রুপের তথ্যমতে, অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে জান্তা সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২৪ হাজারের বেশি মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এক বছরের বেশি সময় গৃহবন্দী থাকার পর গত বছরের জুনে রাজধানী নেপিদোর অন্য এক কারাগারে স্থানান্তর করা হয় সু চিকে। সেই সময় এএফপি জানিয়েছিল, তাঁর সঙ্গে তাঁর নিজের কোনো গৃহকর্মীকে রাখার অনুমোদন দেওয়া হয়নি।
এদিকে জান্তা সরকারের করা কঠোর নতুন সামরিক-খসড়া নির্বাচনী আইনের অধীন আবার নিবন্ধন করতে ব্যর্থ হওয়ায় গত মার্চ মাসে জান্তা সরকার এনএলডিকে বিলুপ্ত ঘোষণা করে। ২০২৫ সালে দেশটিতে নির্বাচন হতে পারে। তাই দলটি যাতে নির্বাচনে অংশ নিতে না পারে, সে জন্যই দলটিকে সরিয়ে দিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।