রাখাইনে হাসপাতালেও বোমা হামলা চালিয়েছে মিয়ানমার বাহিনী: আরাকান আর্মি
বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের রামরি শহরে দেশটির সামরিক বাহিনী ব্যাপক বোমাবর্ষণ করছে বলে জানিয়েছে আরাকান আর্মি (এএ)। এতে শহরটির একটি সরকারি হাসপাতাল ও একটি বাজার ধ্বংস হয়ে গেছে। বোমার আঘাতে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে অনেক বেসামরিক ঘরবাড়িও।
আরাকান আর্মির ভাষ্যমতে, গতকাল মঙ্গলবার রামরি শহরে ওই হামলা চালায় জান্তা বাহিনী। তাদের যুদ্ধবিমান থেকে শহরটিতে ৫০০ পাউন্ডের একটি বোমাসহ বেশ কয়েকটি বোমা ফেলা হয়। সাম্প্রতিক সময়ে জান্তার ব্যবহৃত ‘সবচেয়ে ধ্বংসাত্মক’ বোমা ছিল সেগুলো। এ হামলার মধ্য দিয়ে তারা শহরটি পুরোপুরি ধ্বংস করতে চাচ্ছে।
গত ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে রামরি শহরের একটি প্যাগোডায় ঘাঁটি গেড়েছিল জান্তা বাহিনী। এর জেরে শহরটিতে জান্তা সেনাদের সঙ্গে আরাকান আর্মির সংঘাতের সূত্রপাত হয়। তখন থেকে প্রায়ই রামরিতে জল, স্থল ও আকাশপথে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে সামরিক বাহিনী।
এদিকে গতকাল রামরি ছাড়াও রাখাইনের রাজধানী সিত্তেসহ পোনাগিউন, রাথেডং ও বুথিডংয়ের বিভিন্ন শহর ও গ্রামের আবাসিক এলাকায় কামানের গোলা নিক্ষেপ করেছে জান্তা বাহিনী। আরাকান আর্মি জানিয়েছে, পোনাগিউনের আলাল সু শহরের একটি আবাসিক এলাকা পুড়িয়েছে দিয়েছে জান্তা সেনারা।
মিয়ানমারে তিন সশস্ত্র গোষ্ঠীর জোট থ্রি ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্সের সদস্য আরাকান আর্মি। গত বছরের ২৭ অক্টোবর মিয়ানমারের উত্তরে শান প্রদেশে জান্তা বাহিনীর বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা চালায় এই জোট। তখন থেকেই জান্তা বাহিনীর কাছ থেকে মিয়ানমারের বিভিন্ন অঞ্চল নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে সশস্ত্র বিদ্রোহীরা।
এরই ধারাবাহিকতায় গত ১৩ নভেম্বর রাখাইনে ব্যাপক পরিসরে হামলা চালানো শুরু করে আরাকান আর্মি। তখন থেকে রাখাইন ও পাশের চীন রাজ্যে জান্তা বাহিনীর ১৭০টির বেশি ঘাঁটি ও ছয়টি শহর দখল করেছে তারা। এই দুই রাজ্যের অন্য ঘাঁটিগুলোতে থাকা জান্তা সেনাদের আত্মসমর্পণের আহ্বানও জানিয়েছে আরাকান আর্মি।
এমন পরিস্থিতিতে রাখাইনের রাজধানী সিত্তে পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়েছে জান্তা বাহিনী। শহরটিতে উড়োজাহাজ ছাড়া প্রবেশের কোনো উপায় নেই। আরাকান আর্মির অগ্রগতির মুখে অনেক প্রশাসনিক কর্মকর্তা সিত্তে ছেড়েছেন বলে শোনা যাচ্ছে। রাজধানী ছেড়ে পালাচ্ছেন অনেক বাসিন্দাও।
মিয়ানমারজুড়ে চলমান এই সংঘাতের শুরুটা মূলত ২০২১ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের পর। অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখলের পর ভিন্নমতাবলম্বী ব্যক্তিদের ওপর ব্যাপক দমন–পীড়ন ও নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে হাতে অস্ত্র তুলে নিয়েছে সরকারবিরোধীরা। তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন বিভিন্ন ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর সশস্ত্র বিদ্রোহীরাও। ২৭ অক্টোবরের হামলার পর তাদের জান্তাবিরোধী তৎপরতা বেড়েছে।