কম্বোডিয়ায় ব্যালট পেপার নষ্ট করে হুন সেনের বিরুদ্ধে ভোটারদের প্রতিবাদ
কম্বোডিয়ায় এবার প্রধান বিরোধী দলের অংশগ্রহণ ছাড়া অনেকটা একতরফা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। তবে ভোটারদের অনেকেই ভোটকেন্দ্রে তাঁদের ব্যালট ছিঁড়ে বা অন্য কোনোভাবে নষ্ট করে ফেলেছেন। এসব ভোটারকে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী হুন সেন। বলেছেন, তাঁদের পরিণতি ভোগ করতে হবে।
গত রোববার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হুন সেন বলেন, ‘কতগুলো ব্যালট নষ্ট করা হয়েছে, তা দেখার অপেক্ষায় রয়েছি। যাঁরা ব্যালট নষ্ট করেছেন, তাঁরা বিরোধী দল ক্যান্ডেললাইট পার্টির সমর্থক। কারা এ কাণ্ড করেছেন, স্বীকার করে নিতে পারেন। তা না হলে এ ঘটনায় বিচারের মুখোমুখি হতে হবে।’
কম্বোডিয়ায় গত রোববার সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এবারের নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল কম্বোডিয়ান পিপলস পার্টি (সিপিপি) নিজেদের নিরঙ্কুশ বিজয় ঘোষণা করে। সিপিপির পাশাপাশি আরও ১৭টি রাজনৈতিক দল এবারের নির্বাচনে অংশ নেয়। তবে কোনোটিরই সিপিপির বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তোলার সক্ষমতা ছিল না।
সিপিপি ও হুন সেনের শাসনকে চ্যালেঞ্জ জানাতে পারে—এমন একটি রাজনৈতিক দল রয়েছে কম্বোডিয়ায়। দলটির নাম ক্যান্ডেললাইট পার্টি। তবে এবারের নির্বাচনে দলটি অংশ নিতে পারেনি। নিবন্ধনসংক্রান্ত ত্রুটির অজুহাত দেখিয়ে চলতি বছরের মে মাসে এই দলকে জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণের অযোগ্য ঘোষণা করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী হুন সেনের বয়স এখন ৭০ বছর। ৩৮ বছর ধরে তিনি কম্বোডিয়া শাসন করছেন। গত রোববার রাতে এক টেলিগ্রাম পোস্টে হুন সেন দাবি করেন, এবারের নির্বাচনের প্রাথমিক ফলাফলে তাঁর দল ১২০টি আসন পেয়েছে। বাকি পাঁচটি আসন পেয়েছে রাজতন্ত্রের সমর্থক একটি দল।
নির্বাচনের আগে কম্বোডিয়ায় সরকারবিরোধীদের ওপর ব্যাপক ধরপাকড় চলেছে। প্রধান বিরোধী দলের অংশগ্রহণ না থাকায় ভোটারদের কাছে নির্বাচন নিয়ে আগ্রহ ছিল কম। তাই ভোট বর্জন প্রতিরোধে আইনি চ্যালেঞ্জের পথ উন্মুক্ত রাখা হয়। এ পরিস্থিতিতে ভোটারদের কাছে প্রতিবাদের কৌশল হয়ে ওঠে ব্যালট নষ্ট করা।
সিপিপির মুখপাত্র সোক লেয়সান বলেন, ‘আমরা নিরঙ্কুশ জয় পেয়েছি। তবে আমরা এখনো প্রাপ্ত আসনসংখ্যা গণনা করতে পারিনি।’
এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে দীর্ঘদিন ক্ষমতায় রয়েছেন হুন সেন। রোববার তিনি বলেন, এবারের নির্বাচনে ৮৪ শতাংশ ভোট পড়েছে। নির্বাচনে জয়ের পর নিজের ৪৫ বছর বয়সী ছেলে হুন মানেটের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন হুন সেন।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া অঞ্চলের উপপরিচালক ফিল রবার্টসন বলেন, হুন সেন পুরোপুরি উত্তর কোরিয়ার শাসকের মতো দেশ পরিচালনা করছেন। উত্তর কোারিয়ার একনায়কের মতো তিনি কম্বোডিয়ার গণতন্ত্রের শেষ উপাদানগুলো ধ্বংস করে দিয়েছেন।
ফিল রবার্টসন আরও বলেন, শুরুর দিন থেকে কখনোই মনে হয়নি এবারের নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে। কেননা, হুন সেনের উত্তরাধিকার তাঁরই ছেলে সেনাপ্রধান জেনারেল হুন মানেট। তাই হুন সেনের সরকার কোনো ঝুঁকি নেয়নি।
কম্বোডিয়ার এবারের নির্বাচন ‘অবাধ ও সুষ্ঠু’ হয়নি বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির মতে, নির্বাচনে দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে কম্বোডিয়ার মানুষের কণ্ঠস্বর ও পছন্দ অগ্রাহ্য করা হয়েছে। তাই ক্ষমতাসীন সিপিপির নিরঙ্কুশ বিজয় ঘোষণার পরপরই দেশটির কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ওয়াশিংটন। সেই সঙ্গে চলতি অর্থবছরে প্রায় ১ কোটি ৮০ লাখ মার্কিন ডলারের সহায়তা স্থগিত করা হয়েছে।