দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্টকে অভিশংসনের প্রস্তাব ব্যর্থ

ক্ষমতাসীন দলের আইনপ্রণেতারা অভিশংসন ভোট বর্জন করেন। এদিকে পার্লামেন্টের বাইরে তাঁর পদত্যাগ দাবিতে দিনভর ব্যাপক বিক্ষোভ হয়।

দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইওলফাইল ছবি: এএফপি

দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইওলকে অভিশংসনচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। দেশটির রাজধানী সিউলে  আজ শনিবার পার্লামেন্টের বাইরে ব্যাপক বিক্ষোভ হলেও ক্ষমতাসীন দলের আইনপ্রণেতারা অভিশংসন ভোট বর্জন করেন। এতে প্রেসিডেন্টকে অভিশংসন প্রচেষ্টা ভেস্তে যায়।

দক্ষিণ কোরিয়ায় গত মঙ্গলবার রাতে হঠাৎ সামরিক আইন জারির ঘোষণা দেন প্রেসিডেন্ট ইউন। এ কারণে দেশটিতে রাজনৈতিক উত্তেজনা শুরু হয়। প্রেসিডেন্টের এই ঘোষণার বিরুদ্ধে অবস্থান নেন আইনপ্রণেতারা। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে বিক্ষোভের মুখে সামরিক আইন জারির ঘোষণা প্রত্যাহার করতে বাধ্য হন প্রেসিডেন্ট।

সেই থেকে দক্ষিণ কোরিয়ার রাজনীতিতে অনিশ্চয়তা চলছে। প্রেসিডেন্ট ইউনকে অভিশংসনের তৎপরতা শুরু করে বিরোধী জোট। পাঁচ বছর মেয়াদের জন্য নির্বাচিত ইউনের মেয়াদ পূর্ণ হতে আরও দুই বছর বাকি।

প্রেসিডেন্টের অভিশংসনের দাবিতে বিক্ষোভ। আজ দক্ষিণ কোরিয়ার সিউলে।
ছবি : রয়টার্স

দক্ষিণ কোরিয়ার ৩০০ আসনের পার্লামেন্টে ১৯২টি আসন রয়েছে বিরোধী দলগুলোর। প্রেসিডেন্টকে অভিশংসন করতে ২০০ ভোট দরকার ছিল তাদের। আজ সন্ধ্যায় প্রেসিডেন্টকে অভিশংসন করতে ভোট গ্রহণ শুরু হয়েছিল; কিন্তু ইউনের দল পিপল পাওয়ার পার্টি (পিপিপি) ভোটের আগে চেম্বার ছেড়ে চলে যায়। এতে পার্লামেন্টে শোরগোল শুরু হয়। বিরোধীরা বলতে থাকেন—কোথায় যাচ্ছ? কেউ কেউ তাদের বিদ্রোহের সহযোগী বলেন।

পিপিপির মাত্র তিন সদস্য ভোট দেন। তবে স্পিকার উ ওন–শিক ভোটের ফল ঘোষণা থেকে বিরত থাকেন। তিনি পিপিপির সদস্যদের পার্লামেন্টে ফিরে ভোট দেওয়ার ও দক্ষিণ কোরিয়ার গণতন্ত্র রক্ষার আহ্বান জানান। বিরোধী আইনপ্রণেতারা সরকারি আইনপ্রণেতাদের ভোট দেওয়ার জন্য বোঝানোর চেষ্টা করতে থাকেন। এতে পার্লামেন্ট ভবনের বারান্দায় বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়।

এদিকে পার্লামেন্টের বাইরে লাখো মানুষের বিক্ষোভ চলছে। অনেকেই প্রেসিডেন্ট ইউনকে সরে যাওয়ার আহ্বান জানান। পার্লামেন্টে অভিশংসন প্রক্রিয়া ব্যর্থ হওয়ায় পার্লামেন্টের বাইরে বিক্ষোভকারীদের অনেকেই ক্ষুব্ধ। তবে ইউনপন্থী অনেকেই এতে স্বস্তি পেয়েছেন।

ভোটের আগে জাতির কাছে ক্ষমা চান ইউন। তবে তিনি বলেন, তাঁর ভাগ্য নির্ধারণের ভার তিনি দলের ওপর ছেড়ে দেবেন। জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক টেলিভিশন ভাষণে সামরিক আইন জারির ঘোষণার বিষয়ে ইউন বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট হিসেবে অনেকটা মরিয়া হয়ে আমি এ সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম; কিন্তু এটা জনগণের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি করেছিল। তাদের অসুবিধায় ফেলেছিল। এ জন্য আমি খুবই দুঃখিত এবং আপনাদের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী।’

পিপিপির আইনপ্রণেতারা ইউনকে সমর্থন দিলেও দলের প্রধান হান ডং-হুন বলেন, ইউনকে অবশ্যই সরে দাঁড়াতে হবে। গত মঙ্গলবার সামরিক আইন জারির সময় ইউন গ্রেপ্তারের তালিকায় যাঁদের নাম রেখেছিলেন, তার মধ্যে নিজের দলের নেতা হানের নামও ছিল।

অসলো বিশ্ববিদ্যালয়ের কোরিয়ান স্টাডিজের অধ্যাপক ভ্লাদিমির তিখোনভ এএফপিকে বলেন, অভিশংসন প্রস্তাবের ব্যর্থতার অর্থ রাজনৈতিক সংকট আরও দীর্ঘায়িত হলো। পিপিপি এখন তরুণদের মধ্যে জনপ্রিয়তা হারাবে। এতে তাদের জয়ের বদলে পরাজয়ই ঘটল।

যদি প্রস্তাবটি এখনো পাস হয়, তবে সাংবিধানিক আদালতের রায়ের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। পার্লামেন্টে অভিশংসনের প্রস্তাব পাস হওয়ার পর সেটি সাংবিধানিক আদালতে যায়, সাংবিধানিক আদালতের ৯ বিচারপতির ৬ জন যদি অভিশংসনের পক্ষে সমর্থন দেন, তবে তা কার্যকর হবে।

কিন্তু দেশটিতে এক জনমত জরিপে দেখা গেছে, প্রেসিডেন্টের জনপ্রিয়তা কমে ১৩ শতাংশে নেমেছে। জনগণ ইউনের পদত্যাগ চাইছেন। তবে অভিশংসনের ভোটের ফল যা–ই হোক না কেন,  পুলিশ ইউন এবং অন্যদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের অভিযোগে তদন্ত শুরু করেছে।

আরও পড়ুন
আরও পড়ুন