ট্রাম্প ক্ষমতায় এলেও যুক্তরাষ্ট্রে জলবায়ু মোকাবিলার অগ্রগতি অব্যাহত থাকবে: বাইডেনের উপদেষ্টা

জাতিসংঘ আয়োজিত জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলন কপ-২৯–এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শিশুদের পরিবেশনা। আজারবাইজানের রাজধানী বাকু, ১২ নভেম্বরছবি: রয়টার্স

মনোবল হারালে যে লড়াই জেতা যায় না, বাকু সম্মেলনে সেই বার্তাই দিলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদলের নেতা জন ডি পোডেস্টা। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের জলবায়ু-সংক্রান্ত শীর্ষ উপদেষ্টা জানালেন, আগামী জানুয়ারিতে এমন একজনকে প্রেসিডেন্ট পদে বসানো হচ্ছে, যিনি জলবায়ু পরিবর্তনের আন্দোলনকে প্রতারণা বা ভাঁওতাবাজি মনে করেন। অথচ সত্য হলো, এর কোনোটাই কারও সঙ্গে প্রতারণা নয়। ভাঁওতা নয়। এটাই কঠিন বাস্তব। এর সঙ্গে জীবন–মৃত্যু জড়িয়ে আছে।

পোডেস্টা বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পরিচ্ছন্ন শক্তির অর্থনীতিতে সবাইকে বিশ্বাস রাখতে হবে। নতুন প্রেসিডেন্ট জলবায়ু পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতি ধীর করতে পারেন, কিন্তু থামাতে পারবেন না। বাইডেন সরকারের যুগান্তকারী জলবায়ু আইন, মুদ্রাস্ফীতি হ্রাস আইন (আইআরএ) যা সৌর, বাতাস ও অন্যান্য প্রযুক্তির মতো পরিচ্ছন্ন শক্তিতে শত শত কোটি ডলার ভর্তুকি দেয়—সেই বিনিয়োগ চালিয়ে যাবে।

বাইডেনের জলবায়ু উপদেষ্টা বলেন, ‘এই লড়াই পরিচ্ছন্ন ও নিরাপদ পৃথিবী তৈরির জন্য। নির্বাচন ও রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের চেয়ে এ লড়াই বড়। কারণ, আমরা সবাই সংকটে রয়েছি। সংকটমুক্ত হতে পারিনি।’

পরিবেশ আন্দোলনকর্মীদের মনোবল এতে কতটা বাড়বে, সেই তর্ক ভিন্ন। কারণ, বড় বড় দেশের কর্ণধাররা বাকু এলেন না। বাইডেন আসেননি। সি চিন পিং নেই। রাশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্স বা গ্লোবাল সাউথের নেতা ভারতের প্রধানমন্ত্রীও অনুপস্থিত। যুক্তরাজ্যের নতুন প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার এলেও জি–২০ দেশের তাবড় নেতারা সবাই গরহাজির। অথচ অনুপস্থিত নেতাদের দেশই পৃথিবীর উষ্ণায়নের জন্য প্রধান দায়ী। তাঁদের দেশ পৃথিবীর মোট গ্রিনহাউস গ্যাসের ৮০ শতাংশ নির্গমন করে থাকে। তবু সবাইকে আশ্বস্ত করে পোডেস্টা জানিয়ে দিলেন, ট্রাম্প এলেও যুক্তরাষ্ট্র জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় অগ্রগতি বহাল রাখবে।

পোডেস্টা বললেন বটে, কিন্তু গত সোমবারই ভাবী প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প খুঁজে নিয়েছেন রিপাবলিকান কংগ্রেস সদস্য লি জেলডিনকে, যাঁকে তিনি দায়িত্ব দিতে চান দেশের কোম্পানিগুলির ওপর চাপানো পরিবেশের ফাঁস আলগা করার।

ট্রাম্পের প্রত্যাবর্তন কিংবা বাকুর প্রতি বৈশ্বিক নেতাদের অনাগ্রহ, কারণ যা-ই হোক, কপ-২৯–এ অংশ নেওয়া নেতাদের সংখ্যা গতবারের তুলনায় বেশ কম। গতবার দুবাই সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ৮৩ হাজার ৮৮৪ বৈশ্বিক নেতাসহ সব মহলের প্রতিনিধিরা। সেই তুলনায় এবার বাকুতে এসেছেন ৬৬ হাজার ৭৭৮ জন। পরিবেশ আন্দোলনকর্মীরা যদিও আশাহত নন। কারণ, গ্লাসগোতে কপ-২৬ (৩৮ হাজার ৪৫৭) ও মিসরের শারম আল শেখc (৪৯ হাজার ৭০৪) কপ-২৭-এর অংশগ্রহণকারীদের তুলনায় বাকুর সমাবেশ অনেক হৃষ্টপুষ্ট।

চমকপ্রদ খবর, বাকুতে এসেছেন আফগানিস্তানের সরকারি প্রতিনিধিরা। অবশ্য জাতিসংঘের স্বীকৃত সরকার না হওয়ায় আফগান কর্মকর্তারা মূল সম্মেলনে যোগ দিতে পারছেন না। তবু পার্শ্ব মঞ্চগুলোয় তাঁরা জানাচ্ছেন পরিবেশ আন্দোলন তাঁদের জন্যও কেন ও কতটা জরুরি। বছরের পর বছর ধরে আফগানিস্তান খরার কবল থেকে বাঁচতে লড়াই করছে। তাঁরা নিশ্চিত, বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ফল তাঁদেরও ভোগ করতে হচ্ছে।

আফগানিস্তানের জাতীয় পরিবেশ সুরক্ষা সংস্থার প্রধান মতিউল হক খালিস বলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আফগানিস্তান সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর অন্যতম। এর থেকে পরিত্রাণের একমাত্র উপায় সবার হাত মেলানো। পরিবেশের অবনতি যা হচ্ছে, তাতে কেউ গা বাঁচিয়ে বাঁচতে পারবে না।

আন্তর্জাতিক কার্বন বাজার নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে এই সম্মেলনে প্রাথমিক এক চুক্তির খসড়া করা হয়েছে। জলবায়ু নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ক্রেডিট বাণিজ্যের অনুমতি দেওয়া এই চুক্তির মূল বিষয়। এক দশক ধরে আলোচনার পর প্রায় ২০০টি দেশ কার্বন বাজারকে গতিশীল করতে নিয়মবিধি তৈরিতে সম্মত হয়েছে। সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল এনভায়রনমেন্টাল ল–এর প্রতিনিধি এরিকা লেনন এই খসড়া চুক্তিকে তাৎপর্যপূর্ণ বলে মন্তব্য করেছেন।