ভারতপন্থী সলিহকে হটিয়ে মালদ্বীপের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট চীনপন্থী মুইজ্জু কে
ভারত মহাসাগরের দ্বীপরাষ্ট্র মালদ্বীপের নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন বিরোধী দল প্রোগ্রেসিভ পার্টি অব মালদ্বীপসের (পিপিএম) প্রার্থী মোহামেদ মুইজ্জু। শনিবার অনুষ্ঠিত দেশটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ৫৪ শতাংশ ভোট পেয়েছেন তিনি।
নির্বাচনে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট মালদ্বীপিয়ান ডেমোক্রেটিক পার্টির (এমডিপি) নেতা ইব্রাহিম মোহমেদ সলিহ। আগামী ১৭ নভেম্বর প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেবেন মোহামেদ মুইজ্জু।
মোহামেদ মুইজ্জু চীনঘেঁষা হিসেবে ব্যাপকভাবে পরিচিত। পক্ষান্তরে মালদ্বীপের শক্তিশালী প্রতিবেশী এবং ঐতিহাসিকভাবে দেশটির নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক সহযোগী ভারতের প্রতি তুলনামূলক কম আগ্রহী তিনি।
মালদ্বীপের বর্তমান প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম মোহামেদ সলিহ ভারতপন্থী হিসেবে পরিচিত। নির্বাচনের ফলাফল মেনে নিয়ে মুইজ্জুকে অভিনন্দন জানিয়েছেন তিনি। ইব্রাহিম মোহামেদ সলিহ সামাজিক মাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) লিখেছেন, ‘প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত মুইজ্জুকে অভিনন্দন। পাশাপাশি শান্তিপূর্ণভাবে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার প্রতি সম্মান দেখানো জনগণকেও অভিনন্দন জানাচ্ছি।’
মোহামেদ মুইজ্জু (৪৫) যুক্তরাজ্যে পুরকৌশল বিষয়ে পড়াশোনা করেছেন। বর্তমানে মালদ্বীপের রাজধানী মালের মেয়র তিনি।
মালদ্বীপের সাবেক প্রেসিডেন্ট আবদুল্লাহ ইয়ামিনের শাসনামলে অবকাঠামো নির্মাণমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন মোহামেদ মুইজ্জু। ২০১৮ সালে আবদুল্লাহ ইয়ামিনকে হটিয়ে ক্ষমতায় আসেন ইব্রাহিম সলিহ। এরপর দুর্নীতির অভিযোগে ইয়ামিনকে কারাগারে পাঠানো হয়। তাঁর অনুপস্থিতিতে দলের হাল ধরেন মুইজ্জু।
আবদুল্লাহ ইয়ামিনের মন্ত্রিসভায় দায়িত্ব পালনকালে চীনের অর্থায়নে মালদ্বীপে বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছেন মুইজ্জু। এসব প্রকল্পের মধ্যে রাজধানী মালের সঙ্গে দেশের প্রধান বিমানবন্দরের সংযোগকারী সেতু নির্মাণও রয়েছে। ২০ কোটি ডলার ব্যয়ে সেতুটি নির্মাণ করা হয়।
শুধু মন্ত্রী থাকাকালেই চীনের সঙ্গে কাজ করেননি মুইজ্জু। এরপরেও চীনের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখেছেন। গত বছর চীনের ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির নেতাদের সঙ্গে এক ভার্চ্যুয়াল বৈঠকে অংশ নেন। এ সময় তিনি বলেন, ‘দল ক্ষমতায় এলে আমাদের দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরও জোরদার হবে।’
মালদ্বীপের রাজধানী মালে থেকে নির্বাচন–পরবর্তী অবস্থা পর্যবেক্ষণ করছেন আল–জাজিরার প্রতিবেদক টনি চেং। তিনি বলেন, নির্বাচনী প্রচারণার সময় দেওয়া সব প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা মুইজ্জুর পক্ষে কঠিন হয়ে যাবে।
টনি চেং আরও বলেন, ‘মালদ্বীপের অর্থ, বাণিজ্য ও অবকাঠামো উন্নয়নের সঙ্গে ভারত গভীরভাবে জড়িত। আমি মনে করি, এটা বন্ধ করা তাঁর (মুইজ্জু) পক্ষে কঠিন হবে। যদিও তিনি প্রকাশ্যে চীনের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন।’
টনি চেং বলেন, মালদ্বীপের বহু অবকাঠামো প্রকল্পে চীন অর্থায়ন করেছে। এর একটি অসুবিধাও আছে। সেটি হলো, চীনের কাছ থেকে মালদ্বীপ প্রচুর ঋণ নিয়েছে। আগামী কয়েক বছরের মধ্যে সেসব ঋণ পরিশোধ করতে হবে।
ভারতের অতিমাত্রায় রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব দ্বীপরাষ্ট্রটির বেশির ভাগ মানুষ পছন্দ করেন না। আর এই সুযোগে ভারতবিরোধী প্রচারণা চালিয়ে নির্বাচনে সফল হয়েছেন মুইজ্জু।
তবে মালদ্বীপের সঙ্গে নয়াদিল্লির ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে। ১৯৮৮ সালে মালদ্বীপে সামরিক অভ্যুত্থানচেষ্টার সময় সেখানে ভারতীয় সেনা মোতায়েন করা হয়। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশটিতে ভারতের প্রভাবের কারণে অনেকেই বিষয়টি নিয়ে ক্ষুব্ধ।
ভারত মহাসাগরের মাঝখানে একটি কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে মালদ্বীপ। প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের মধ্য দিয়ে যে জাহাজ চলাচলের রুট বা শিপিং লাইনগুলোর মাঝখানে দেশটির অবস্থান।
২০১৮ সালে আবদুল্লাহ ইয়ামিনকে হারিয়ে ক্ষমতায় আসেন ইব্রাহিম সলিহ। ক্ষমতায় থাকাকালে বিরোধী দলের অনেক নেতাকে বিতর্কিতভাবে কারাগারে পাঠিয়েছিলেন ইয়ামিন। ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর সেই কারাগারেই রাখা হয়েছে তাঁকে। মোহামেদ মুইজ্জু এর আগে জানিয়েছেন, তিনি নির্বাচিত হলে ইয়ামিনকে মুক্ত করবেন।
সাবেক প্রেসিডেন্ট আবদুল্লাহ ইয়ামিনও ছিলেন চীনঘেঁষা। তিনি মালদ্বীপে নির্মাণ প্রকল্পের জন্য ভারতকে প্রত্যাখ্যান করে চীনের কাছ থেকে প্রচুর ঋণ নিয়েছিলেন। ভারত মহাসাগরে চীনের ক্রমবর্ধমান উপস্থিতি নিয়ে ভারত সরকার যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদেশগুলোর কাছে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল। যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া ও জাপানের কৌশলগত জোট কোয়াডের সদস্য ভারত।