বৈশ্বিক সংঘাতের মধ্যে বাড়ছে পারমাণবিক যুদ্ধের ঝুঁকি

জাপানের পরমাণু অস্ত্রবিরোধী সংগঠন নিহন হিদানকায়ো এবার শান্তিতে নোবেল জয়ের পর এক সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দিচ্ছেন সংগঠনটির সহকারী মহাপরিচালক (বাঁ থেকে) তোশিকো হামানাকা, সহযোগী চেয়ারম্যান তেরুমি তানাকা ও সহকারী মহাপরিচালক মাসাকো ওয়াদাছবি: এএফপি

গাজাসহ বিশ্বজুড়ে সংঘাত চলছে। এতে পারমাণবিক যুদ্ধের আশঙ্কা বাড়ছে। চলতি বছর শান্তিতে নোবেল পাওয়া জাপানের পরমাণু অস্ত্রবিরোধী সংগঠন নিহন হিদানকায়োর পক্ষ থেকে বৈশ্বিক সংঘাতের কারণে পারমানবিক যুদ্ধের ঝুঁকি নিয়ে সতর্ক করা হয়েছে। সংগঠনটির পক্ষ থেকে পারমানবিক অস্ত্রের বিলুপ্তির বিষয়ে নতুন করে আহ্বান জানানো হয়েছে।

পরমাণু অস্ত্রমুক্ত একটি বিশ্ব গড়ার প্রচেষ্টা এবং পরমাণু অস্ত্র আর কখনো ব্যবহার করা যে উচিত নয়, সেটি প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষ্যের মাধ্যমে তুলে ধরার জন্য জাপানের সংগঠনটিকে এ বছর শান্তিতে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়েছে।

জাপানের নাগাসাকিতে ১৯৪৫ সালে বোমা হামলা থেকে বেঁচে যাওয়া শিগেমিতসু তানাকা গত শনিবার বলেন, আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি ক্রমান্বয়ে খারাপ হচ্ছে এবং এখন যুদ্ধের মধ্যে দেশগুলো পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের হুমকি দিচ্ছে।

নাগাসাকির এ বাসিন্দা আরও বলেন, ‘আমার শঙ্কা, মানবজাতি হিসেবে আমরা নিজেদের ধ্বংসের পথে চলেছি। এটি বন্ধ করার একমাত্র উপায় হলো পারমাণবিক অস্ত্র বিলুপ্ত করা।’

নাগাসাকি ছিল দ্বিতীয় জাপানি শহর যেখানে ১৯৪৫ সালের ৯ আগস্ট পারমাণবিক বোমা হামলা চালিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। এতে ৭৪ হাজার মানুষ নিহত হয়। এর তিন দিন আগে হিরোশিমায় চালানো হামলায় ১ লাখ ৪০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছিল।

নোবেল পুরস্কার জেতার পর গত শনিবার হিরোশিমার বাসিন্দারা বলেন, তাঁরা আশা করেন, বিশ্ব ১৯৪৫ সালের বোমা হামলার কথা ভুলবে না। এখন থেকে আরও বেশি করে মনে রাখবে।

৭৯ বছর আগে হিরোশিমায় যখন বোমা হামলা হয়, তখন সুসুমু ওগায়ার বয়স ছিল পাঁচ বছর। ওই ঘটনায় পরিবারের অনেক সদস্যকে হারিয়েছেন তিনি। ওগায়া বলেন, ‘আমার মা, আমার চাচি, আমার দাদা ও দাদি সবাই মারা যান।’ তিনি বলেন, ‘বিশ্বের সব পারমাণবিক অস্ত্র বাতিল করতে হবে। আমরা পারমাণবিক অস্ত্রের বিভীষিকা সম্পর্কে জানি। কারণ, হিরোশিমায় কী ঘটেছিল তা আমরা জানি।’

এখন মধ্যপ্রাচ্যে যা ঘটছে বিশেষ করে গাজা ও লেবাননে ইসরায়েল যেভাবে হামলা চালাচ্ছে এবং উত্তেজনা ছড়াচ্ছে, তাতে তিনি ব্যথিত।

এর আগে গত সেপ্টেম্বরে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সতর্ক করে বলেন, রাশিয়ার ভেতরে যদি ইউক্রেনকে হামলা চালাতে ও দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা অনুমতি দেয়, তবে তিনি পারমাণবিক অস্ত্র দিয়ে এর জবাব দেবেন।

ওগায়া বলেন, মানুষ কেন একে অপরের বিরুদ্ধে লড়াই করে? একে অপরকে আহত করাটা ভালো কিছু বয়ে আনে না।

গত শনিবার জাপানিরা হিরোশিমা পিস মেমোরিয়াল পার্কে গাজায় ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে মিছিল করেন। হিরোশিমা বোমা হামলা থেকে বেঁচে যাওয়া ও এই গ্রুপের প্রধান তোশিউকি মিমাকি গত শুক্রবার বলেন, গাজার শিশুদের অবস্থা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জাপানের শিশুদের মতোই। টোকিওতে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরও বলেন, গাজায় শিশুদের রক্তপাত ঘটানো হচ্ছে। ৮০ বছর আগে জাপানেও এমন ঘটনা ঘটেছিল।