জ্বালানি তেলের দাম কমাল ‘দেউলিয়া’ শ্রীলঙ্কা
সংকটে জর্জরিত শ্রীলঙ্কা আজ সোমবার জ্বালানি তেলের দাম কমানোর ঘোষণা দিয়েছে। চলতি অক্টোবর মাসে এ নিয়ে দ্বিতীয়বার জ্বালানি তেলের দাম কমাল দেশটির সরকার। শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি এ বছর ৯ দশমিক ২ শতাংশ সংকুচিত হবে, বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাসে এমন সতর্কবার্তার পর জ্বালানির দাম কমানো হলো।
শ্রীলঙ্কার জ্বালানিবিষয়ক মন্ত্রণালয় বলেছে, প্রতি লিটার পেট্রলের দাম ৪০ রুপি কমানো হলো। সোমবার থেকে এক লিটার পেট্রল বিক্রি হবে ৩৭০ রুপি করে। চলতি মাসের শুরুতেও দেশটির সরকার প্রতি লিটার পেট্রলের দাম ১০ শতাংশ কমিয়েছিল। কিন্তু এখনো দেশটিতে পেট্রলের দাম গত বছরের শেষ দিকের সংকট শুরুর আগের সময়ের তুলনায় দ্বিগুণ। এ ছাড়া ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসের তুলনায় শ্রীলঙ্কায় এখন প্রতি লিটার ডিজেল সাড়ে তিন গুণ বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।
চলতি বছরের শুরুতে শ্রীলঙ্কায় জ্বালানি তেলের হাহাকার ছিল। সপ্তাহের পর সপ্তাহ ফিলিং স্টেশনে লাইনে দাঁড়িয়ে জ্বালানির পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছিলেন মোটরযানের চালকেরা। জ্বালানি তেলের সংকট থেকে শুরু হয় বিক্ষোভ। কয়েক সপ্তাহের বিক্ষোভে জুলাইয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়ে পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিলেন তৎকালীন প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষে।
তবে সাম্প্রতিক সময়ে আগের মতো দীর্ঘক্ষণ আর ফিলিং স্টেশনগুলোতে অপেক্ষা করতে হচ্ছে না। কিন্তু এখনো নির্ধারিত কোটায় জ্বালানি তেল সরবরাহ হচ্ছে। কারণ, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানির জন্য বৈদেশিক মুদ্রার (মার্কিন ডলার) মজুত শ্রীলঙ্কার সরকারের নেই, তাই জ্বালানির তেলের দাম শোধ করতে পারছে না।
এদিকে ডিজেলের মজুতের সংকটের কারণে গণপরিবহনগুলো বসিয়ে রাখা হয়েছিল। কিন্তু সংকট অনেকটা কেটে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছে। যদিও অনেক ক্ষেত্রে ভাড়া দ্বিগুণ হয়ে গেছে। অন্যান্য সেবা ও পণ্যের দাম অনেকটা বেড়ে যাওয়ায় এ পরিস্থিতি। সরকারি হিসাবে দেশটির মূল্যস্ফীতি ৭০ শতাংশের কাছাকাছি দাঁড়িয়েছে।
করোনাভাইরাস মহামারি ও রাশিয়-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্ব অর্থনীতির মতো পর্যটননির্ভর দেশ শ্রীলঙ্কার অর্থনীতিও ধুঁকছিল। কিন্তু শুধু এই দুই কারণে দেশটিতে এ আর্থিক দুর্দশা হয়নি। ২০১৯ সালে রাজাপক্ষে ক্ষমতায় আসার পর কর ছাড়ের ঘোষণা দেন। শ্রীলঙ্কার আর্থিক সংকটের পেছনে এটাকেও বড় বলে মনে করা হচ্ছে।
আর্থিক দুর্দশার কারণে শ্রীলঙ্কার সরকার ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হয়ে গত এপ্রিলে নিজেদের দেউলিয়া ঘোষণা করে। ওই সময় শ্রীলঙ্কার বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ ছিল ৫ হাজার ১০০ কোটি মার্কিন ডলার। রাজাপক্ষের পদত্যাগের পর নতুন প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে ক্ষমতায় এসে কর ছাড়ের কিছু সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার ঘোষণা দেন।
একই সঙ্গে রাজস্ব খাতে তহবিল বাড়ানোর জন্য কর আহরণ করার নতুন নতুন পদক্ষেপের ঘোষণা দেন। এরপর আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) শ্রীলঙ্কাকে নতুন করে ২৯০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণের অনুমোদন দিয়েছে। কিন্তু আইএমএফের ঋণ পেতেও কঠিন শর্ত মানতে হচ্ছে শ্রীলঙ্কাকে।