নৌকায় আটকা পড়ে সাগরে ভাসছে ১০০ রোহিঙ্গা
ভারতের আন্দামান দ্বীপপুঞ্জের উপকূলে একটি নৌকায় আটকা পড়েছে অন্তত ১০০ রোহিঙ্গা। দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে তারা ওই নৌকায় আটকা পড়ে আছে। এরই মধ্যে নৌকাটিতে থাকা ১৬ থেকে ২০ জনের মৃত্যু হয়েছে। মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের পক্ষে কাজ করা দুটি মানবাধিকার সংগঠন এ তথ্য জানিয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার সাগরে আটকে পড়া রোহিঙ্গাদের উদ্ধারে নামে ভারতের পাঁচটি জাহাজ। শেষ পর্যন্ত ওই রোহিঙ্গাদের কী হয়েছে, তা জানতে চাওয়া হয়েছিল ভারতের নৌবাহিনীর এক মুখপাত্রের কাছে। তবে বিস্তারিত কিছু জানাননি তিনি। অপরদিকে একই বিষয়ে জানতে চাইলে কোনো মন্তব্য করেনি ভারতের কোস্টগার্ড।
রোহিঙ্গাদের অধিকার নিয়ে কাজ করা মানবাধিকার সংগঠন আরাকান প্রজেক্টের পরিচালক ক্রিস লেওয়া বলেন, ‘আমরা ধারণা করছি, নৌকায় থাকা প্রায় ২০ জন রোহিঙ্গার মৃত্যু হয়েছে। তাদের কেউ কেউ ক্ষুধা ও পিপাসায় মারা গেছে। অনেকেই আবার সাগরের পানিতে ঝাঁপ দেওয়ার পর ডুবে মারা গেছে। এটা খুবই ভয়াবহ।’
এদিকে নৌকাটিতে সমস্যা দেখা দেওয়ায় ওই রোহিঙ্গারা দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে নৌকায় আটকা পড়ে আছে বলে জানিয়েছে শরণার্থীদের মানবাধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন এশিয়া প্যাসিফিক রিফিউজি রাইটস নেটওয়ার্ক। সংগঠনটির প্রধান লিলিয়ানে ফ্যান বলেন, ‘আমরা গতকাল রাতে জানতে পেরেছি, ভারতের কয়েকটি জাহাজ ওই রোহিঙ্গাদের উদ্ধারে যাচ্ছে। আশা করছি, যত দ্রুত সম্ভব ভারতের নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ড তাদের উদ্ধার করবে। তবে এরই মধ্যে ১৬ রোহিঙ্গার মৃত্যু হয়েছে বলে শোনা যাচ্ছে।’
এর আগে গত সোমবার ভারত মহাসাগরে নৌকায় আটকে পড়া ১০৪ রোহিঙ্গাকে উদ্ধার করে শ্রীলঙ্কার নৌবাহিনী। ওই রোহিঙ্গারা সমুদ্রপথে ইন্দোনেশিয়ার দিকে যাচ্ছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে।
দীর্ঘ সময় ধরেই নির্যাতন ও নিপীড়নের মুখে মিয়ানমার ছাড়ছে রোহিঙ্গারা। ২০১৭ সালে সামরিক অভিযানে দেশটির রাখাইন রাজ্যে হাজার হাজার রোহিঙ্গাকে হত্যার ঘটনা ঘটে। সে সময় সেনাবাহিনীর বর্বর নির্যাতনের মুখে প্রাণ বাঁচাতে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। এ ছাড়া প্রতিবছরই অনেক রোহিঙ্গা ঝুঁকি নিয়ে সাগরপথে মিয়ানমার থেকে ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়ায় পালিয়ে যায়। গত বছর মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানের পর এ সংখ্যা আরও বেড়েছে।
১৩ রোহিঙ্গার মৃত্যুর ঘটনায় গ্রেপ্তার
এদিকে ১৩ রোহিঙ্গার মৃত্যুর ঘটনায় মানব পাচার চক্রের সন্দেহভাজন ১২ সদস্যকে গ্রেপ্তারের কথা জানিয়েছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে সেনাবাহিনী জানায়, ৯ ডিসেম্বর ইয়াঙ্গুনের কাছে হ্লেগু শহরের একটি এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এ সময় সেখান থেকে পাঁচটি যানবাহন ও একটি তেলবাহী জাহাজ জব্দ করা হয়।
গত ৫ ডিসেম্বর ওই ১৩ রোহিঙ্গার মরদেহ হ্লেগু শহরের কাছে একটি সড়কের পাশ থেকে উদ্ধার করা হয়। তাঁদের মৃত্যুর কোনো কারণ জানায়নি মিয়ানমার সেনাবাহিনী। তবে স্থানীয় সংবাদমাধ্যম ও রোহিঙ্গাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, তাঁদের একটি তেলবাহী জাহাজে করে পাচার করা হচ্ছিল।