সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলীয় ইদলিবে আল-শিফা হাসপাতালে সাত বছর ধরে চিকিৎসাসেবা দিয়ে যাচ্ছেন ব্রিটিশ বংশোদ্ভূত চিকিৎসক শাজুল ইসলাম। তিনি ওই হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) কাজ করছেন। তিনি বিবিসি রেডিও ফোর-এর দ্য ওয়ার্ল্ড টুনাইট অনুষ্ঠানে ভূমিকম্প বিধ্বস্ত দেশটির চিকিৎসাসেবার করুণ চিত্র তুলে ধরেছেন।
তুরস্ক ও সিরিয়ায় ভয়াবহ ভূমিকম্পের ঘটনায় নিহত মানুষের সংখ্যা পাঁচ হাজার ছাড়িয়েছে। এখনো উদ্ধার অভিযান চলছে। এ ঘটনায় সিরিয়ার স্বাস্থ্যব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। সিরিয়ার হাসপাতালগুলোয় আর তিল ধারণের ঠাঁই নেই। একজন চিকিৎসককে একাই ৪০ থেকে ৪৫ জন মুমূর্ষু রোগী সামাল দিতে হচ্ছে।
চিকিৎসক শাজুল ইসলাম বলেন, ‘যেসব রোগীর বেঁচে থাকার সম্ভাবনা বেশি আমি তাঁদের ভেন্টিলেশনে নিয়ে যাচ্ছি। আর আগে থেকে ভেন্টিলেশনে থাকা রোগীদের সরিয়ে রাখছি। আমরা আক্ষরিক অর্থেই হাসপাতালের ফটকেই সিদ্ধান্ত নিচ্ছি, কোন রোগীদের বাঁচানোর চেষ্টা করব আর কোন রোগীদের বাঁচানোর চেষ্টা করব না।’
শাজুল ইসলাম আরও বলেন, ‘এমন পরিস্থিতি আক্ষরিক অর্থে জীবনে এই প্রথম দেখেছি। আমাদের হাসপাতালে আর কোনো জায়গা ফাঁকা নেই। আমাদের হাসপাতালে এখন প্রায় ৩০০ থেকে ৪০০ রোগী আছে। প্রতি শয্যায় দুই থেকে তিনজন করে রোগী রাখা হয়েছে।’
শাজুল ইসলাম বলেন, এই রোগীকে সেবা দেওয়ার মতো তাঁদের হাসপাতালে পর্যাপ্ত কর্মী নেই। তাঁকে আইসিইউয়ে থাকা ৪০ থেকে ৪৫ জন মুমূর্ষু রোগীকে একাই সেবা দিতে হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘এটা অসম্ভব ব্যাপার।’
চিকিৎসাকর্মীদের প্রায়ই কঠিন পরিস্থিতির চাপ সামলাতে হয়। কিন্তু কখনোই এমন ভয়ংকর সিদ্ধান্ত নিতে হয়নি বলেন তিনি।
সিরিয়ায় এ পর্যন্ত ১ হাজার ৬০২ জন নিহত হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। আহত রয়েছেন কয়েক হাজার। ভূমিকম্পে নিহত মানুষের সংখ্যা আট গুণ বাড়তে পারে বলে সতর্ক করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।
গতকাল সোমবার তুরস্কের স্থানীয় সময় ভোর ৪টা ১৭ মিনিটে এই ভূমিকম্প হয়। সিরিয়ার সীমান্তবর্তী তুরস্কের গাজিয়ানতেপ শহরের কাছে ছিল ভূমিকম্পটির কেন্দ্র। ভূপৃষ্ঠের ১৭ দশমিক ৭ কিলোমিটার গভীরে ছিল এই ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল। পরে আরও একটি বড় ভূমিকম্প হয়।
ভূমিকম্পের পর বেশ কয়েকটি পরাঘাত হয়। আজ মঙ্গলবার সকালেও তুরস্কে ভূমিকম্প হয়েছে। তুরস্ক ও সিরিয়ায় ধসে পড়েছে হাজার হাজার ঘরবাড়ি, যার মধ্যে অনেক বহুতল ভবন রয়েছে।