দক্ষিণ কোরিয়ার পরিস্থিতি নিয়ে জাপানের উদ্বেগ বাড়ছে
দক্ষিণ কোরিয়ার পার্লামেন্টে বিরোধী দলের আনা প্রেসিডেন্টের অভিশংসন বিল খারিজ হয়ে গেছে। ক্ষমতাসীন দলের পার্লামেন্ট সদস্যদের অধিবেশন বর্জনের কারণে খারিজ হলেও প্রেসিডেন্ট ইউন সুক-ইওলের ওপর চাপ কমেনি; বরং এ পরিস্থিতিতে ক্ষমতায় টিকে থাকা কিংবা কমপক্ষে সম্মানজনক প্রস্থানের একটি পথ খুঁজছেন তিনি।
সরকারি দলের পদক্ষেপের কারণে অভিশংসন বিল বাতিল হয়ে যাওয়ায় নাগরিকদের মধ্যে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। শনিবার ভোট গ্রহণের আগে পার্লামেন্ট ভবনের আশপাশে লক্ষাধিক মানুষের সমাবেশ ঘটে। এ সমাবেশেই বোঝা যাচ্ছিল অভিশংসন বিল বাতিল হলে কী হতে পারে। ফলে ক্ষমতাসীন দল এখন এমন একটি পথের সন্ধান করছে, যাতে প্রেসিডেন্টের পদত্যাগের পথ সুগম হয়।
৮ ডিসেম্বর সকালে প্রধানমন্ত্রী হান দুক সোও এবং ক্ষমতাসীন পিপল পাওয়ার পার্টির (পিপিপি) নেতা হান দং হুন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠকে এ নিয়ে বিস্তারিত আলাপ করেছেন। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, প্রেসিডেন্ট সব রকম নির্বাহী ক্ষমতা প্রধানমন্ত্রী ও ক্ষমতাসীন দলের হাতে ছেড়ে দেবেন এবং পরে কোনো এক সময়ে তিনি পদত্যাগ করবেন। তাঁদের এই ক্ষমতা হস্তান্তরের রূপরেখা প্রকাশ হওয়ার ঠিক পরপর বিরোধী দলের পক্ষ থেকে সেটা নাকচ করে দেওয়া হয়।
এতে বলা হয়, প্রেসিডেন্টের পদ খালি হওয়ার আগে প্রধানমন্ত্রীর প্রেসিডেন্টের দায়িত্বপালনের উল্লেখ সংবিধানে নেই। কোনো একটি রাজনৈতিক দলের হাতে প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা আংশিকভাবে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে সংবিধানের লঙ্ঘন। অন্যদিকে দেশের সাধারণ নাগরিকেরাও এ রকম আকস্মিক ও অস্পষ্ট সিদ্ধান্ত নিয়ে বিভ্রান্তিতে ভুগছেন। আরও বেশি করে প্রেসিডেন্টকে ক্ষমতাচ্যুত করার পক্ষে তাঁরা ঝুঁকে পড়ছেন। বলা যায়, প্রেসিডেন্ট ইউনের ভাগ্য এখন অনেকটা সুতোয় ঝুলে আছে। অভ্যুত্থান–প্রচেষ্টায় জড়িত অভিযোগে ইউনের মন্ত্রিসভার পদত্যাগী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে গ্রেপ্তার করায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে।
দক্ষিণ কোরিয়ার চলমান এই রাজনৈতিক সংকট নিয়ে প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি উদ্বেগে আছে জাপান। প্রেসিডেন্ট ইউনের প্রশাসনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ এক সম্পর্ক গড়ে নিয়ে পূর্ব এশিয়ায় নিজস্ব অবস্থান আরও শক্ত করে নিতে জাপান কিছুটা হলেও সক্ষম হয়েছিল। এর বাইরে উত্তর কোরিয়াকে মোকাবিলা করার দোহাই দিয়ে জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে গড়ে ওঠা ত্রিপক্ষীয় জোটের অন্তর্ভুক্ত হয়ে সামরিক শক্তি বাড়ানোর দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল।
ত্রিপক্ষীয় সেই জোট উত্তর কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার বিষয়টি সামনে তুলে ধরেছে। চীনের ক্রমবর্ধমান সমরশক্তির বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ অবস্থান নিয়েছে। এ কারণেই দক্ষিণ কোরিয়ার ঘটনাবলির দিকে জাপানকে এখন নজর রাখতে হচ্ছে।
জাপান সরকারের কর্মকর্তারা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যে দক্ষিণ কোরিয়ার চলমান রাজনৈতিক সংকট দুই দেশের সম্পর্ক উন্নত হওয়ার প্রক্রিয়াকে লাইনচ্যুত করে দিতে পারে। জাপানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র দেশের সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট ইউন অভিশংসনের আশঙ্কা এড়িয়ে যেতে সক্ষম হলেও তাঁর প্রশাসন এখন কার্যত ক্ষমতাহীন হয়ে যেতে পারে। ফলে জাপানের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক হয়তো আগের সেই তিক্ত অবস্থানে ফিরে যাওয়ার দিকে মোড় নিতে পারে।
জাপানের এই উদ্বেগের পেছনে আরও একটি কারণ হলো, জাপানের ক্ষমতাসীন মহল মনে করছে যে দক্ষিণ কোরিয়াজুড়ে ইউনের বিরুদ্ধে সমালোচনা ও অসন্তোষ বাড়ছে। তাই সে রকম পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে জাপান-যুক্তরাষ্ট্র-দক্ষিণ কোরিয়ার ত্রিপক্ষীয় জোটের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব পড়তে পারে।
জাপানের প্রধানমন্ত্রী ইশিবা শিগেরু আগামী জানুয়ারি মাসে দক্ষিণ কোরিয়া সফরের পরিকল্পনা করছেন। তবে বিদ্যমান পরিস্থিতির আলোকে তাঁর সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন সম্ভব হবে কি না, তা নিয়েও সন্দেহ রয়েছে।