ইরানে আরও ৩ বিক্ষোভকারীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকরে ইইউর নিন্দা
ইরানে আরও তিন বিক্ষোভকারীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের নিন্দা জানিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। ইউরোপীয় দেশগুলোর জোটের পররাষ্ট্রনীতি-বিষয়ক প্রধান জোসেফ বোরেল এক বিবৃতিতে ইরান সরকারকে সাজা হিসেবে মৃত্যুদণ্ডের বিধান রাখা এবং মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।
মৃত্যুদণ্ড কার্যকর তিনজনের বিরুদ্ধে গত বছর কুর্দি তরুণী মাসা আমিনির মৃত্যুকে ঘিরে দেশজুড়ে চলা বিক্ষোভের সময় নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছিল। তাঁরা হলেন মজিদ কাজেমি, সালেহ মীর হাশেমি ও সাঈদ ইয়াগুবি। গত শুক্রবার তাঁদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে।
এ নিয়ে ইরানে মোট সাত বিক্ষোভকারীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হলো। মানবাধিকার সংগঠনগুলোর অভিযোগ, কোনো ধরনের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়েই গোপন আদালতের মাধ্যমে বিক্ষোভকারীদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হচ্ছে।
বিবৃতিতে ইইউর পররাষ্ট্রনীতি-বিষয়ক প্রধান জোসেফ বোরেল বলেন, আন্তর্জাতিক আইনের বাধ্যবাধকতা ইরান সরকারকে মেনে চলা উচিত। সেই সঙ্গে মানুষের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকারের প্রতি সম্মান দেখানো উচিত।
ইরানের বিচার বিভাগীয় খবর প্রকাশকারী মিজান অনলাইনের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, গত বছরের ১৬ নভেম্বর ইরানের ইস্পাহানের কেন্দ্রীয় শহরে বিক্ষোভ চলাকালে নিরাপত্তা বাহিনীর তিন সদস্যকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ ছিল মজিদ, সালেহ ও সাঈদের বিরুদ্ধে।
গত বছরের নভেম্বর মাসে মজিদ, সালেহ ও সাঈদকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। গত জানুয়ারি মাসে তাঁদের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের রায় দেওয়া হয়।
মানবাধিকার সংস্থাগুলোর অভিযোগ, গ্রেপ্তারের পর মজিদ, সালেহ ও সাঈদকে নির্যাতন করা হয়েছিল। এ ছাড়া জোর করে তাঁদের কাছ থেকে স্বীকারোক্তি আদায় করা হয়েছে।
ইরানে গত বছরের ১৬ সেপ্টেম্বর নীতি পুলিশের হেফাজতে মৃত্যু হয়েছিল ২২ বছরের তরুণী মাসা আমিনির। হিজাবনীতি না মানার অভিযোগে এর তিন দিন আগে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। মাসার মৃত্যুতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে ইরানজুড়ে। কয়েক মাস ধরে চলা বিক্ষোভে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যসহ শতাধিক ব্যক্তির প্রাণ যায়। আটক করা হয় হাজারের বেশি বিক্ষোভকারীকে।
বিক্ষোভের সময় সরকারি দমন-পীড়নের তীব্র সমালোচনা করে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশ ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো। তবে বিক্ষোভের রেশ কমে এলেও এখনো দমন-পীড়ন চলছে। দেশটিতে বিভিন্ন সময় বিচারের নামে বিক্ষোভকারীদের ধরে ধরে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার অভিযোগ আছে।
এদিকে নরওয়েভিত্তিক ইরান হিউম্যান রাইটস (আইএইচআর) ও প্যারিসভিত্তিক টুগেদার অ্যাগেইনস্ট দ্য ডেথ পেনাল্টি এক যৌথ বিবৃতিতে জানিয়েছে, গত বছর ইরান অন্তত ৫৮২ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছে। ২০১৫ সালের পর এ সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। দেশটিতে ২০২১ সালে ৩৩৩ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছিল।