দুর্নীতি মামলায় কারাগারে থাকা নাজিব রাজকীয় ক্ষমা পেতে পারেন: মাহাথির
মালয়েশিয়ার প্রবীণ রাজনীতিক মাহাথির মোহাম্মদ বলেছেন, দুর্নীতির মামলায় ১২ বছরের সাজা থেকে দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক ‘খুব সম্ভবত’ রাজকীয় ক্ষমা পেতে পারেন। এ মামলায় খালাস চেয়ে তাঁর করা আপিল চলতি সপ্তাহে খারিজ করে দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্ট। খবর রয়টার্সের।
নাজিবকে ক্ষমতা থেকে সরাতে ভূমিকা রেখেছিলেন মাহাথির। ২০১৮ সালের নির্বাচনে মাহাথিরের ঐতিহাসিক জয়ের মধ্য দিয়ে সমালোচিত এই প্রধানমন্ত্রীর পতন হয়।
মাহাথির বলেন, ওয়ান মালয়েশিয়া ডেভেলপমেন্ট বেরহাদ (১এমডিবি) নামে পরিচিত রাষ্ট্রীয় তহবিলের কয়েক শ কোটি ডলার দুর্নীতির মামলাগুলোর বিচার বিলম্বিত করা ন্যায়বিচার বঞ্চিত করার নামান্তর।
আলোচিত এ মামলায় ২০২০ সালে দণ্ডিত হয়েছিলেন নাজিব। পরে তিনি উচ্চ আদালতে আপিল করেন। গত মঙ্গলবার দেশটির সর্বোচ্চ আদালত নাজিবের আপিল খারিজ করে দিয়ে ১২ বছরের কারাদণ্ড বহাল রাখেন। একই সঙ্গে ১এমডিবি থেকে অবৈধভাবে ১ কোটি ডলার সরানোয় প্রায় ৪ কোটি ৭০ লাখ ডলার (২১ কোটি রিঙ্গিত) জরিমানাও বহাল আছে।
৯৭ বছর বয়সী মাহাথির এক বিবৃতিতে বলেন, ‘কারাদণ্ড হওয়ার পর নাজিবের ক্ষেত্রে যে বিষয় দেখা যাবে, তাঁকে ক্ষমা করে দেওয়া হবে।’ তবে এ বিষয়ে তিনি বিস্তারিত কিছুই বলেননি।
এর এক দিন আগে নাজিবের সমর্থকদের কাছ থেকে তাঁকে ক্ষমা করে দেওয়ার একটি আবেদন পেয়েছে রাজা আল-সুলতান আবদুল্লাহর প্রাসাদ। মাহাথিরের মন্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে কোনো কথা বলতে রাজি হননি রাজপ্রাসাদের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
নাজিবকে মালয়েশিয়ার রাজপরিবারের ঘনিষ্ঠ মনে করা হয়। মে মাসে নাজিবের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করা ছবিতে রাজার সঙ্গে তাঁকে ঈদ উদ্যাপনে দেখা যায়।
তবে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে ক্ষমা করে দেওয়ার আবেদন রাজপ্রাসাদের অনুমোদন করার কোনো ইঙ্গিত এখন পর্যন্ত দেখা যায়নি। নাজিব ২০১৮ সাল পর্যন্ত ৯ বছর ক্ষমতায় ছিলেন।
দলের সাবেক নেতার ক্ষমার বিষয়টি কীভাবে নেবেন সেটার কোনো ইঙ্গিত দেখা যাচ্ছে না প্রধানমন্ত্রী ইসমাইল সাবরি ইয়াকুবের মাঝেও। কারণ, তিনি ক্ষমতাসীন ইউনাইটেড মালায়স ন্যাশনাল অর্গানাইজেশনের (ইউএমএনও) ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধার করতে চাইছেন।
২০১১ থেকে ২০১৪ সাল নাগাদ ৫১ কোটি ৩০ লাখ ডলার (২৩০ কোটি রিঙ্গিত) সরিয়ে নেওয়ায় নাজিবের বিরুদ্ধে অর্থ পাচারের ২১টি অভিযোগ আর ক্ষমতার অপব্যবহারের চারটি অভিযোগ আনা হয়। নাজিবের বিরুদ্ধে আরও তিনটি অভিযোগ রয়েছে। দোষী সাব্যস্ত হলে কারাদণ্ডের পাশাপাশি তাঁর বড় ধরনের অর্থদণ্ডও হতে পারে।
মালয়েশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের তদন্ত কর্মকর্তারা বলছেন, ১এমডিবি তহবিল থেকে ৪৫০ কোটি ডলার হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে শত কোটিরও বেশি ডলারের খোঁজ মেলে নাজিব রাজাকের ব্যাংক হিসাবে।
সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী দেউলিয়াও হয়ে পড়েছেন, যা ক্ষমার সুযোগ নেই। এটি তাঁর নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে।
তবে কোনো ধরনের অপরাধ করার বিষয়টি অস্বীকার করে আসছেন নাজিব। নিজেকে সাবেক রাজনৈতিক গুরুর (মাহাথিরের) প্রতিহিংসার শিকার বলে তুলে ধরেছেন তিনি।
২২ বছর মালয়েশিয়া শাসনের পর ২০০৩ সালে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব ছাড়েন মাহাথির। তিনি ২০১৩ সালের নির্বাচনে নাজিব ও ইউএমএনওর পক্ষে প্রচারণা চালিয়েছেন। কিন্তু ১এমডিবি কেলেঙ্কারি প্রকাশ্যে আসতেই সাবেক শিষ্যের বিরোধিতা শুরু করেন তিনি।
বিরোধী জোটের নেতৃত্ব দিয়ে ২০১৮ সালে আবার প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়ে নাজিবের বিচার শুরু করেন মাহাথির; যদিও ক্ষমতাসীন জোটে ভাঙনের কারণে এ যাত্রায় তাঁকে প্রধানমন্ত্রিত্ব হারাতে হয়েছিল।