প্রথম সফরে দিল্লিকে এড়িয়ে কেন বেইজিংয়ে নেপালের প্রধানমন্ত্রী অলি
ভারতের প্রভাববলয় থেকে বেরিয়ে চীনের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করতে চাইছেন নেপালের নতুন প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা অলি। এ বছর চতুর্থবারের মতো দেশটির প্রধানমন্ত্রীর হয়েছেন প্রবীণ এই কমিউনিস্ট নেতা।
চার দিনের সফরে গত সোমবার চীন সফরে গেছেন প্রধানমন্ত্রী অলি। জুলাইয়ে শপথ গ্রহণের পর এটাই তাঁর প্রথম আনুষ্ঠানিক বিদেশ সফর। অতীতে নেপালের প্রধানমন্ত্রীরা সাধারণত দায়িত্ব গ্রহণের পর দিল্লিতে নিজেদের প্রথম আন্তর্জাতিক সফরে যেতেন। কাঠমান্ডুর সঙ্গে দিল্লির সম্পর্ক শতাব্দী প্রাচীন।
গতকাল মঙ্গলবার নেপাল ও চীনের মধ্যে ৯টি চুক্তি সই হয়েছে। তবে এর কোনোটিই নতুন নয়। সবই আগে করা। অলির সফরে এখন পর্যন্ত দুই দেশের মধ্যে নতুন কোনো চুক্তি স্বাক্ষরের উদ্যোগের বিষয়ে কিছু জানা যায়নি।
গতকাল চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের সঙ্গে বৈঠক করেন অলি। চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, বৈঠকে চীনের প্রেসিডেন্ট নেপালকে অবকাঠামো খাতের উন্নয়নে সহায়তা করার বিষয়ে আবারও আশ্বস্ত করেছেন। তিনি নেপালকে ‘স্থলবেষ্টিত দেশ থেকে স্থল-সংযুক্ত’ দেশে রূপান্তর করার কথা বলেছেন। নিজেদের সর্বোচ্চ সামর্থ্য দিয়ে নেপালের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সহায়তা অব্যাহত রাখার কথাও বলেছেন চীনা প্রেসিডেন্ট।
প্রেসিডেন্ট সি-র ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ’–এ সই করেছে কাঠমান্ডু। বাকি বিশ্বের সঙ্গে চীনের অবকাঠামো ও বাণিজ্য সংযোগ গড়তে প্রেসিডেন্ট সি এই উদ্যোগ নিয়েছেন। ২০১৭ সালে ওই চুক্তি সই করলেও এখনো কোনো প্রকল্পের কার্যকর বাস্তবায়ন শুরু হয়নি বলে জানিয়েছে কাঠমান্ডু।
ঐতিহ্যগতভাবে নেপাল দক্ষিণের প্রতিবেশী ভারতের ওপর অধিক নির্ভরশীল। অলি এই প্রথা ভেঙে উত্তরের প্রতিবেশীর সঙ্গে তাঁর দেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও গভীর করার এবং ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে চান।
বর্তমানে নেপালের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের দুই-তৃতীয়াংশই হয় ভারতের সঙ্গে। দেশটির মোট আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের মাত্র ১৪ শতাংশ হয় চীনের সঙ্গে। তবে নেপালের বৃহৎ ঋণদাতা দেশ চীন। বিশ্ব ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, চীন নেপালকে ৩১ কোটি মার্কিন ডলারের বেশি অর্থ ঋণ দিয়েছে। দিল্লির তুলনায় যা তিন কোটি ডলার বেশি।
২০১৬ সালে নিজের প্রথম মেয়াদে অলি চীনের সঙ্গে একটি পেট্রোলিয়াম চুক্তি সই করেন।
ওই চুক্তি হওয়ার এক বছর আগে ভারত কাঠমান্ডুর ওপর ছয় মাসের তেল নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল। চীনের সঙ্গে অলির চুক্তি সইয়ের ফলে নেপালের একমাত্র জ্বালানি সরবরাহকারী হিসাবে ভারতের মর্যাদা ক্ষুণ্ন হয় এবং বেইজিংয়ের সঙ্গে নেপালের সহযোগিতা বৃদ্ধির পথ প্রশস্ত হয়।
ঋণের সুদ আতঙ্ক
নেপালের দ্বিতীয় বৃহৎ নগরী পোখারায় একটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নির্মাণের জন্য দেশটিকে এখন পর্যন্ত ২১ কোটি ৬০ লাখ মার্কিন ডলার ঋণ দিয়েছে চীন। রাজধানী কাঠমান্ডু থেকে পোখারা প্রায় ২০০ কিলোমিটার দূরে। গত বছর থেকে পোখারা বিমানবন্দরের কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
চীন ওই বিমানবন্দর তৈরি করে দিয়েছে। বেইজিং পোখারা বিমানবন্দরকে নিজেদের ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ’–এর সাফল্যের প্রতীক হিসেবে দেখছে। কিন্তু বিমানবন্দরটি চালু হওয়ার পর থেকেই নানা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। যেমন—সেখানে খুব বেশি আন্তর্জাতিক ফ্লাইট আসতে পারছে না। কারণ, পোখারা বিমানবন্দরে যেতে হলে ভারতের আকাশসীমার ভেতর দিয়ে যেত হবে। ভারত তাদের আকাশসীমা ব্যবহারের অনুমতি দিচ্ছে না।
ঋণের সুদ নিয়েও অলির জোট সরকারের মধ্যে উদ্বেগ রয়েছে। অলির জোট সরকারের বড় অংশীদার নেপালি কংগ্রেস পার্টি ঋণ নিয়ে কোনো প্রকল্পের তহবিল সংগ্রহ করার বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে।
অলির চীন সফরে যাওয়া আগে এমনকি তাঁর নিজের দল থেকেও চিনের ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ প্রকল্পের কোনো কাজ ঋণ নিয়ে নয় বরং অনুদান নিয়ে করার পক্ষে মত দিয়েছে।