চীনের নেতা সি চিন পিং সৌদি সফরে রয়েছেন। সাত বছর পর তিনি মধ্যপ্রাচ্যের প্রভাবশালী এই দেশ সফরে গেলেন। বিশ্বের শীর্ষ তেল রপ্তানিকারক দেশটির সঙ্গে তিনি কৌশলগত চুক্তি সই করেছেন। আরব বিশ্বের নেতাদের সঙ্গেও তিনি বৈঠক করেছেন। তেল নিয়ে সৌদি–যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক যখন ভাঙনের মুখে, তখন সেখানে চীনের প্রেসিডেন্টের ছুটে যাওয়া চীন ও উপসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও গভীর করার ইঙ্গিত দেয়। সৌদি গণমাধ্যমে সির লেখা এক কলামে আরব বিশ্বের সঙ্গে চীনের সম্পর্ক সুদৃঢ় করার বিষয়টিই উঠে এসেছে।
চীন ও সৌদি আরবের মধ্যে বেশ কিছু চুক্তি, সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। এর মধ্যে হাইড্রোজেন জ্বালানি, দুই দেশের উদ্যোগের মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধির মতো নানা বিষয় রয়েছে।
সৌদি আরবের সবচেয়ে বড় বাণিজ্য অংশীদার চীন এবং ক্রমবর্ধমান বিনিয়োগের উৎস। দেশটি বিশ্বের জ্বালানির সবচেয়ে বড় ক্রেতাও।
ইউরেশিয়া গ্রুপের মধ্যপ্রাচ্য এবং উত্তর আফ্রিকাবিষয়ক গবেষণা দলের প্রধান আয়হাম কামেল বলেন, ‘সৌদি-চীনা নেতৃত্বের মধ্যে সব আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকবে জ্বালানিবিষয়ক সহযোগিতা।’
বিশ্বের অনেক দেশের সরকার আগামী কয়েক দশকে কার্বন নিঃসরণ কমানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। কানাডা ও জার্মানির মতো দেশ নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিনিয়োগ দ্বিগুণ করেছে। যুক্তরাষ্ট্রও অভ্যন্তরীণ জ্বালানির ব্যবহার বাড়িয়েছে। এ ছাড়া নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে ঝুঁকছে। গত ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে রুশ হামলার পর থেকে বৈশ্বিক জ্বালানির চাহিদা ব্যাপক বেড়েছে। এ অবস্থায় পশ্চিমারা তেলের দাম বেঁধে দিয়েছে। তাই, জ্বালানি নিশ্চয়তা চীনের গুরুত্বপূর্ণ অগ্রাধিকারের তালিকায় রয়েছে।
জ্বালানিনিরাপত্তার বাইরে মধ্যপ্রাচ্যে ভূরাজনৈতিক প্রভাব বৃদ্ধিতে চীনকে সহায়তা করবে সৌদি আরব। চীনা মুদ্রায় লেনদেনের সুবিধা বাড়তি সুবিধাও দিতে পারে রিয়াদ।
ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মার্কিন ডলারের পরিবর্তে চীনা মুদ্রা ইউয়ানে তেলের মূল্য পরিশোধে দুই দেশের মধ্যে আলোচনা চলছে। এ ধরনের চুক্তি চীনা মুদ্রার বৈশ্বিক প্রভাব বাড়ানোর ক্ষেত্রে বেইজিংয়ের উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে উত্সাহিত করতে পারে। এতে সৌদি আরব ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী চুক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
ওয়াশিংটন ডিসি-ভিত্তিক থিঙ্ক ট্যাঙ্ক সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের মধ্যপ্রাচ্য প্রোগ্রামের পরিচালক জন বি অল্টারম্যান বলেন, মধ্যপ্রাচ্য নিয়ে বাইডেন প্রশাসনের দৃষ্টিভঙ্গি সৌদি সরকারকে উদ্বেগে রেখেছে। এ জন্য হয় তো যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে এগিয়ে থাকার ও দর–কষাকষির হাতিয়ার হিসেবে তারা চীনের সঙ্গে ক্রমবর্ধমান সম্পর্ককে কাজে লাগাতে পারে রিয়াদ।