ইরানের নতুন প্রেসিডেন্টকে বিশ্বনেতাদের অভিনন্দন
ইরানের নতুন প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানকে সৌদি আরব, রাশিয়া, চীন, ভারতসহ অনেক দেশের নেতারা অভিনন্দন জানিয়েছেন। তাঁরা সবাই ইরানের সংস্কারপন্থী হিসেবে পরিচিত নতুন এই প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
আজ শনিবার সৌদি আরবের বাদশাহ সালমান পেজেশকিয়ানকে পাঠানো এক অভিনন্দনবার্তায় ভ্রাতৃপ্রতিম দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত থাকবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন। আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা জোরদার করতে দুই দেশের মধ্যে সমন্বয়, আলোচনা অব্যাহত আশা প্রকাশ করেছেন তিনি।
সৌদি যুবরাজ মুহাম্মদ বিন সালমানও আলাদাভাবে পেজেশকিয়ানকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।
মধ্যপ্রাচ্যের প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ দুটির মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক সাত বছর বন্ধ থাকার পর গত বছরের মার্চে চীনের মধ্যস্থতায় শুরু হয়।
চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং পেজেশকিয়ানকে অভিনন্দন জানিয়ে তাঁর প্রশাসনের সঙ্গে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘদিনের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে জানিয়ে অভিনন্দনবার্তায় সি বলেন, ‘চীন-ইরানের সম্পর্ক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দুই দেশের কৌশলগত অংশীদারত্বকে আরও বাড়িয়ে তুলতে নতুন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কাজ করতে ইচ্ছুক আমি।’
চীন ইরানের শুধু ঘনিষ্ঠ অংশীদারই নয়, দেশটির সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদারও বটে। পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বে ইরানের সবচেয়ে বেশি জ্বালানি তেল কেনে চীন। দীর্ঘ অপেক্ষার পর গত বছর বেইজিং ও মস্কোর নেতৃত্বাধীন অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তাবিষয়ক জোট সাংহাই সহযোগিতা সংস্থার (এসসিও) সদস্যপদ লাভ করে তেহরান।
৬৯ বয়সী পেজেশকিয়ানকে অভিনন্দন জানিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনও। তিনি বলেন, ‘আপনার দায়িত্ব পালনকালে আমাদের বন্ধুত্বপূর্ণ দুই দেশের গঠনমূলক দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা আরও জোরদার হবে।’
দুই দেশের প্রতি পশ্চিমাদের রোষানলের ইঙ্গিত করে পুতিন বলেন, ‘আমরা দুই দেশই আন্তর্জাতিক সমস্যাগুলো গঠনমূলক উপায়ে সমাধানে সমন্বিত অবদান রাখতে পারব।’
ইরানের নতুন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার আশা প্রকাশ করে অভিনন্দনবার্তা পাঠিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তিনি বলেন, ‘আমাদের উষ্ণ ও দীর্ঘদিনের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক থেকে দুই দেশের জনগণ ও অঞ্চল যাতে লাভবান হতে পারে, সে জন্য আমি আপনার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে চাই।’
যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য পশ্চিমা দেশের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে তেহরানের সঙ্গে সুসম্পর্ক রক্ষা করে চলছে নয়াদিল্লি। গত মে মাসে ইরানের চাবাহার বন্দর উন্নয়ন ও আধুনিকায়নের জন্য দেশ দুটি একটি দীর্ঘ মেয়াদি চুক্তি করে। প্রতিক্রিয়ায় এই প্রকল্পসংশ্লিষ্ট ভারতের কোম্পানিগুলোকে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে ওয়াশিংটন।
ইরানের পূর্ব দিকের প্রতিবেশী পাকিস্তানও দেশটির নতুন প্রেসিডেন্টকে অভিনন্দন জানিয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এক পোস্টে প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ লিখেছেন, ‘প্রতিবেশী দেশ হিসেবে পাকিস্তান–ইরানের মধ্যে ঘনিষ্ঠ ও ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে। আমাদের অবশ্যই পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে আমাদের জনগণের জন্য একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে হবে।’
আবার এক বিবৃতিতে আঞ্চলিক শান্তি ও সমৃদ্ধি অর্জনে ইরানের সঙ্গে কাজ করার আশা প্রকাশ করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারি।
এসব দেশের বাইরে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মধ্যে কাতার, ওমান, কুয়েত, ইরাক, সিরিয়ার নেতারাও ইরানের নতুন প্রেসিডেন্টকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। বেলারুশের রাষ্ট্রপ্রধান আলেকসান্দার লুকাশেঙ্কো, তাজিকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইমোমালি রহমন, সার্বিয়ার প্রেসিডেন্ট আলেকসান্দার ভুসিক ও দক্ষিণ কোরিয়ার সরকারও ইরানের নতুন প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানকে অভিনন্দন জানিয়েছে।
ইরানে গত ২৮ জুন প্রথম দফার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কোনো প্রার্থীই ৫০ শতাংশের বেশি ভোট না পাওয়ায় নিয়ম অনুযায়ী গতকাল দ্বিতীয় দফার ভোট হয়। প্রথম দফার ভোটে প্রথম ও দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা মাসুদ পেজেশকিয়ান ও সাইদ জালিলি এই দফায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। প্রথম দফায় ৪২ শতাংশ ভোট পেয়ে এগিয়ে ছিলেন সংস্কারপন্থী পেজেশকিয়ান। আর ৩৯ শতাংশ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে ছিলেন কট্টরপন্থী সাইদ জালিলি।
দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, গতকাল দ্বিতীয় দফার ভোটে তিন কোটির বেশি ভোট পড়েছে। এর মধ্যে মাসুদ পেজেশকিয়ান পেয়েছেন ১ কোটি ৬০ লাখের বেশি ভোট। আর সাইদ জালিলি পেয়েছেন ১ কোটি ৩০ লাখের বেশি ভোট।
ইরানে আগামী বছরের জুনে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ভোট হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু গত ১৯ মে দেশটির প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে নিহত হলে প্রেসিডেন্ট পদটি শূন্য হয়। ফলে আগাম নির্বাচন ডাকা হয়। সংবিধান অনুযায়ী, ৫০ দিনের মধ্যে নতুন নির্বাচন আয়োজনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
হৃদ্রোগবিষয়ক সার্জন পেজেশকিয়ান ইরানের তাবরিজ শহরের বর্তমান সংসদ সদস্য। প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ গ্রহণের আগে তাঁকে আনুষ্ঠানিকভাবে এ পদ থেকে সরে দাঁড়াতে হবে। সংসদ সদস্য পদ থেকে পেজেশকিয়ানের পদত্যাগ নিশ্চিত করতে ২১ জুলাই দেশটির পার্লামেন্ট অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছে আল–জাজিরা। ইরানের নতুন প্রেসিডেন্টকে আগামী ৫ আগস্টের মধ্যে প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিতে হবে।