সিঙ্গাপুরে হামলার শিকার বাংলাদেশি কর্মী
সিঙ্গাপুরে এক বাংলাদেশি কর্মী হামলার শিকার হয়েছেন। গত বৃহস্পতিবার দেশটির ম্যাকফারসন এলাকায় এই হামলার ঘটনা ঘটে। সিঙ্গাপুরের দ্য স্ট্রেইটস টাইমসের প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়।
হামলার শিকার বাংলাদেশি কর্মীর নাম আহমেদ সিয়াম (২০)। তিনি সিঙ্গাপুরে পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে কাজ করেন। তাঁর ওপর হামলা করেন ৬২ বছর বয়সী এক ব্যক্তি। তিনি সিয়ামের বুকে ঘুষি মেরেছিলেন।
স্থানীয় পার্লামেন্ট সদস্য (এমপি) টিন পি লিং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ইনস্টাগ্রামে ঘটনাটি তুলে ধরেছেন। এক ভিডিও পোস্টে তিনি বলেন, হামলার ঘটনার সময় হামলাকারী ব্যক্তি সম্ভবত মদ্যপ ছিলেন। তিনি আগেও স্থানীয় টাউন কাউন্সিলের কর্মীদের ওপর চড়াও হয়েছিলেন।
স্থানীয় মেরিন প্যারেড টাউন কাউন্সিল এনআরটি ট্রেডিং অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং নামের একটি কোম্পানি থেকে কাজের জন্য কর্মী নিয়ে থাকে। কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক শক্তিভেলান নারারাজাহ গত শুক্রবার দ্য স্ট্রেইটস টাইমসকে বলেন, বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে ব্লক ৮৭ সার্কিট রোডে এ হামলার ঘটনা ঘটে।
হামলার শিকার সিয়ামের বাবার নাম বাবুল (৪৮)। তিনিও টাউন কাউন্সিলের জন্য কাজ করেন।
টিন পি লিং তাঁর ভিডিও পোস্টে উল্লেখ করেন, বাবুল একজন সাইট সুপারভাইজার হিসেবে অনেক বছর ধরে টাউন কাউন্সিলের জন্য কাজ করে আসছেন।
টিন পি লিংয়ের ভিডিওতে বাবুল বলেন, তাঁর ছেলে সিয়াম হেঁটে যাওয়ার সময় তাঁকে ঘুষি মারেন হামলাকারী। হামলার পর তাঁর ছেলেকে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হয়েছিল। হামলাকারী ব্যক্তির নাম-পরিচয় জানাতে পারেননি বাবুল।
ছেলের ওপর হামলার ঘটনায় কষ্ট পেয়েছেন জানিয়ে বাবুল বলেন, ‘আমার মন খুবই খারাপ।’
পুলিশ জানায়, তারা স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সহায়তা চেয়ে একটি ফোনকল পায়। হামলার ঘটনায় ৬২ বছর বয়সী এক ব্যক্তি জড়িত। এই ঘটনায় তদন্ত চলছে।
বাবুল বলেন, হামলাকারী ব্যক্তি আগেও টাউন কাউন্সিলের পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের হয়রানি করেছেন। তিনি ওই ব্যক্তিকে একাধিকবার হয়রানি বন্ধ করতে বলেছিলেন।
এনআরটি ট্রেডিং অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শক্তিভেলান বলেন, ২০২২ সালের অক্টোবর থেকে ওই ব্যক্তি আরও দুজন পরিচ্ছন্নতাকর্মীকে হয়রানি করে আসছিলেন। কিন্তু আগে সহিংস কিছু না ঘটায় এ ব্যাপারে পুলিশ হস্তক্ষেপ করেনি। ওই ব্যক্তি সাধারণত ঘুরে বেড়ান আর বিয়ার পান করেন। এ সময় তিনি পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করেন।
শক্তিভেলান আরও বলেন, ১০ বছরের বেশি সময় ধরে বাবুল তাঁর কোম্পানিতে আছেন। কোম্পানির কোনো পরিচ্ছন্নতাকর্মীর সঙ্গে অন্যায্য কিছু হলে তিনি তার প্রতিবাদ করেন।
শক্তিভেলান বলেন, জীবিকার তাগিদে বাংলাদেশ থেকে সিঙ্গাপুরে এসেছেন বাবা-ছেলে। তাঁরা সিঙ্গাপুরের বাসিন্দাদের সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। ছেলের সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনায় বাবা কষ্ট পেয়েছেন।
ভিডিওতে টিন পি লিং বলেন, সহিসংতাকে কখনোই প্রশ্রয় দেওয়া উচিত নয়। বাবুল একজন নিবেদিতপ্রাণ ও বন্ধুবৎসল কর্মী।
টিন পি লিং আরও বলেন, ‘যদি এমন কিছু থাকে, যা আরও উন্নত করতে হবে, তা আমাদের জানান।’
শ্রমিকদের ওপর হামলা না করার জন্য স্থানীয় অধিবাসীদের প্রতি আহ্বান জানান টিন পি লিং। তিনি বলেন, ‘আশা করি, আমরা সবাই মিলে একটি সদয় সমাজ গঠন করতে পারব। এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করতে পারব।’
সিয়ামের ওপর হামলার ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে স্থানীয় বিল্ডিং কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড টিম্বার ইন্ডাস্ট্রিজ এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন-বাতু। শুক্রবার এক ফেসবুক পোস্টে তারা একে বিনা উসকানির হামলা হিসেবে অভিহিত করে। সংগঠনটি বলেছে, কোনো অবস্থাতেই পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের ক্ষতিসাধন ঠিক নয়।
শ্রমিকদের প্রতি এই ধরনের আচরণ করা যে উচিত নয়, আর তা যে সহ্যও করা হবে না, সে বিষয়ে কর্তৃপক্ষকে একটি স্পষ্ট বার্তা দিতে আহ্বান জানিয়েছে বাতু। সংগঠনটি বলেছে, এই ধরনের বার্তা বিভিন্ন এলাকায় কর্মরত কর্মীদের এ আশ্বাস দেবে যে তারা নিরাপদে তাঁদের কাজ করতে পারবেন।
সিঙ্গাপুরের হয়রানি থেকে সুরক্ষা আইন অনুযায়ী, পাবলিক সার্ভিস কর্মীদের দায়িত্ব পালনকালে হয়রানির সাজা সর্বোচ্চ এক বছরের কারাদণ্ড বা পাঁচ হাজার ডলার জরিমানা বা উভয় দণ্ড। আইন অনুযায়ী, টাউন কাউন্সিলের পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা পাবলিক সার্ভিস কর্মী হিসেবে বিবেচিত।