থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে এবার কি পিটা সফল হবেন

মুভ ফরোয়ার্ড পার্টির তরুণ নেতা পিটা লিমজারোয়েনরাত
ছবি: রয়টার্স

থাইল্যান্ডে নতুন প্রধানমন্ত্রী বেছে নিতে আগামীকাল বুধবার দেশটির পার্লামেন্টে দ্বিতীয়বারের মতো ভোট হবে।

দুই মাসের বেশি সময় আগে থাইল্যান্ডে পার্লামেন্ট নির্বাচন হয়। এই নির্বাচনে বিস্ময়কর সাফল্য পায় তরুণ পিটা লিমজারোয়েনরাতের মুভ ফরোয়ার্ড পার্টি (এমএফপি)।

নির্বাচনের পর নতুন প্রধানমন্ত্রী বেছে নিতে ১৩ জুলাই দেশটির দ্বিকক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্টে প্রথম ভোট হয়। এতে পিটা প্রধানমন্ত্রী হতে প্রয়োজনীয় ভোট পেতে ব্যর্থ হন।

ফলে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনে এখন আবার দেশটির পার্লামেন্টে ভোট হতে যাচ্ছে। এই ভোটেও মুভ ফরোয়ার্ড পার্টির নেতৃত্বাধীন ৮-দলীয় জোট পিটাকে সমর্থনের অঙ্গীকার করেছে।

প্রথম ভোটে যা হয়েছিল

৭৫০ সদস্যের দ্বিকক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্টে প্রথমবারের ভোটে পিটা অপ্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী হতে তাঁর পার্লামেন্টের মোট সদস্যদের অর্ধেকের বেশি ভোটের দরকার ছিল।

পিটার দরকার ছিল ৩৭৬ ভোট। কিন্তু তিনি তা পেতে ব্যর্থ হন। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার জন্য তাঁর আরও ৫২ ভোট দরকার ছিল।

দেশটির পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ ৫০০ জন নির্বাচিত সদস্যদের নিয়ে গঠিত। কিন্তু উচ্চকক্ষ সিনেট গঠিত সেনা-সমর্থিত সরকারের নিয়োগ দেওয়া ২৫০ সদস্য নিয়ে।
পিটা পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষের প্রায় ৬০ শতাংশ সদস্যের সমর্থন পেয়েছিলেন। কিন্তু তিনি মূলত রক্ষণশীল সিনেটের সমর্থন পেতে ব্যর্থ হন। তিনি মাত্র ১৩ জন সিনেটরের সমর্থন পেয়েছিলেন।

পিটা কেন সমর্থন পেলেন না

থাইল্যান্ডের ফৌজদারি আইন সংশোধনের নীতিতে রয়েছে মুভ ফরোয়ার্ড পার্টি। রাজতন্ত্রকে অবমাননা করা হলে এই আইনে শাস্তির বিধান রয়েছে। পার্লামেন্টের ভোটে পিটার হোঁচট খাওয়ার মূল কারণ মুভ ফরোয়ার্ড পার্টির এই আইন সংস্কারনীতি।
মুভ ফরোয়ার্ড পার্টির যে সংস্কারমূলক অ্যাজেন্ডা রয়েছে, তা থাইল্যান্ডের রক্ষণশীল এস্টাবলিশমেন্টের বিরোধী। ফলে পিটার সফলতার মানে হলো সামরিক-বেসামরিক আমলাতন্ত্র, ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক সম্প্রদায়সহ এই এস্টাবলিশমেন্টের স্বার্থহানি। পিটাকে ঠেকাতে তাদের ভূমিকা ছিল।

পিটা কি দ্বিতীয় ভোটে জিততে পারবেন

পার্লামেন্টে দ্বিতীয় ভোটে জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী পিটা। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী হতে প্রয়োজনীয়সংখ্যক ভোটের জন্য তাঁর জোটের যথেষ্ট তদবির-তৎপরতা চালানোর কোনো ইঙ্গিত দেখা যায়নি।

থাই পার্লামেন্টে তিনটি রক্ষণশীল ও জোটবিহীন দলের মোট ১০৬টি আসন আছে। দল তিনটি আজ মঙ্গলবার বলেছে, ফৌজদারি আইন সংশোধন করতে চান, এমন কোনো প্রার্থীকে তারা সমর্থন করতে পারে না।

মুভ ফরোয়ার্ড পার্টি মনে করে, পার্লামেন্টে প্রথমবারের ভোটে পিটাকে আটকাতে সিনেটরদের ওপর চাপ দেওয়া হয়েছিল। ফলে তখন অনেক সিনেটর তাঁদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে কাজ করতে বাধ্য হয়েছিলেন।

পার্লামেন্টে প্রথমবারের ভোটে পিটার ব্যর্থ হওয়ার পর এই সিনেটরেরা জনসাধারণের ইচ্ছার বিরুদ্ধে কাজ করার জন্য তীব্রভাবে সমালোচনার মুখে পড়েন। এই সমালোচনা তাঁদের আগের অবস্থান থেকে সরিয়ে আনবে কি না, তা স্পষ্ট নয়।

আরও পড়ুন

অন্যান্য বাধা

বেশ কিছু প্রভাবশালী সিনেটর প্রধানমন্ত্রী পদে পিটার দ্বিতীয় দফার মনোনয়ন চ্যালেঞ্জ করতে পারেন। তাঁরা যুক্তি দিতে পারেন, যে প্রস্তাব (পিটার প্রধানমন্ত্রিত্ব) প্রথমবার পার্লামেন্টে অনুমোদন পেতে ব্যর্থ হয়েছে, তা দ্বিতীয়বার আর সামনে আনা যাবে না। এমন আপত্তি এলে ভোট বিলম্বিত হতে পারে।

মুভ ফরোয়ার্ড পার্টির সামনে আরেকটি চ্যালেঞ্জ হলো, আইনপ্রণেতা হিসেবে পিটার দায়িত্ব পালনের ওপর দেশটির সাংবিধানিক আদালত স্থগিতাদেশ দিতে পারেন। এ বিষয়ে ভোটের দিনই (বুধবার) একটি মামলা আমলে নেওয়ার কথা সাংবিধানিক আদালতের। মামলাটিতে পিটার বিরুদ্ধে নির্বাচনী নিয়মভঙ্গের অভিযোগ আনা হয়েছে।

একই আদালত পার্লামেন্টে প্রথম ভোটের আগে ঘোষণা করেছিলেন, রাজতন্ত্রকে অবমাননা আইনের বিষয়ে মুভ ফরোয়ার্ড পার্টির নীতির বিরুদ্ধে একটি পৃথক মামলা তাঁরা গ্রহণ করেছেন।

আরও পড়ুন

পিটা আবার ব্যর্থ হলে কী হবে

পিটা বলেছেন, তিনি যদি ব্যর্থ হন, তাহলে অংশীদার ফেউ থাই পার্টির একজন প্রার্থীকে প্রধানমন্ত্রী পদে মনোনয়ন দেওয়ার পথ তৈরি করবেন, যাতে তাঁদের জোট সরকার গঠন করতে পারে।

ফেউ থাই দেশটির নির্বাচনী ইতিহাসের সবচেয়ে প্রভাবশালী দল। থাই সামরিক বাহিনীর সঙ্গে দলটির তিক্ত সম্পর্কের ইতিহাস রয়েছে। এই দলের তিনটি সরকার উৎখাত করেছিল সেনাবাহিনী।

দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও নির্বাসিত নেতা থাকসিন সিনাওয়াত্রার মেয়ে পেতংতার্ন সিনাওয়াত্রার দল ফেউ থাই পার্লামেন্ট নির্বাচনে দ্বিতীয় স্থান পায়। এই দল থেকে যদি কাউকে প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী করা হয়, তাহলে তিনিও পার্লামেন্টে একই বাধার মুখোমুখি হতে পারেন, বিশেষ করে ফেউ থাই দলটি যদি বর্তমান জোটের অংশীদার হিসেবে থেকে যায়।

আরও পড়ুন