জলবায়ু পরিবর্তন রোধে যুক্তরাষ্ট্রের বদলে চীনকে কেন সামনে আনতে চায় জাতিসংঘ

আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে চলা জাতিসংঘ জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলনের (কপ২৯) প্রতিবাদে ট্রাম্পের ছবি নিয়ে পরিবেশ আন্দোলনকর্মীদের বিক্ষোভ। ১৬ নভেম্বর, যুক্তরাজ্যের লন্ডনেছবি: রয়টার্স

জলবায়ু সম্মেলনের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদলের নেতা জন ডি পোডেস্টা নির্মল বিকল্প জ্বালানিতে বিনিয়োগ অব্যাহত রাখার যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তা কতটা অসার গতকাল শনিবারেই তা স্পষ্ট হয়ে গেল সে দেশের ভাবী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সিদ্ধান্তে। ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্ত বাকু সম্মেলনে আসা পরিবেশ আন্দোলনকর্মীদের হতাশ করে তুলেছে। তাঁরা মনে করছেন, এত দিনের সব উদ্যোগ ও পরিশ্রম পণ্ড হতে চলেছে।

নির্বাচনে জয়ী প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তাঁর সরকারের জ্বালানিমন্ত্রী করেছেন সে দেশের জীবাশ্ম জ্বালানি ও প্রাকৃতিক গ্যাস শিল্পের উদ্যোক্তা ক্রিস রাইটকে। জলবায়ু সম্মেলন চলাকালে এই নিয়োগ বিশ্বব্যাপী পরিবেশ আন্দোলনকর্মীদের দাবি ও চাহিদার বিপ্রতীপে ট্রাম্পের দৃঢ় মনোভাবেরই পরিচয়।

ট্রাম্প অতীতে এই আন্দোলনকে ‘ধাপ্পাবাজি’ বলেছিলেন। বলেছিলেন, চীনের উসকানিতেই এসব হচ্ছে। তিনি জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহারের রাস্তা থেকে সরবেন না। ২০১৬ সালে প্রথমবার নির্বাচিত হওয়ার পর ২০২০ সালে ট্রাম্প প্যারিস চুক্তি থেকে বেরিয়েও এসেছিলেন। এখন আরেকবার পরিবেশ আন্দোলনের ওপর পড়েছে তাঁর কালো ছায়া।

দ্বিতীয় দফায় ট্রাম্পের বিজয়ের কারণে পরিবেশ আন্দোলনের হাল যে এমন হতে পারে, সম্ভবত তা আঁচ করেই জাতিসংঘের শীর্ষ জলবায়ু কর্মকর্তা সাইমন স্টিয়েল এক গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দিয়েছেন। গত শুক্রবার তিনি বলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে বৈশ্বিক লড়াইয়ের নেতৃত্ব চীনকেই দিতে হবে। ট্রাম্পের মোকাবিলায় সি চিন পিংয়ের চীনকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেছেন, জলবায়ুর স্বার্থে চীন তার নিজস্ব লক্ষ্য স্থির করে এক শক্তিশালী নতুন অ্যাকশন প্ল্যান বা পরিকল্পনা পেশ করুক, যা উষ্ণায়ন প্রশমনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে।

জাতিসংঘের ‘ক্লাইমট চেঞ্জ’–এর (জলবায়ু পরিবর্তন) নির্বাহী সচিব সাইমন স্টিয়েল নির্মল শক্তির প্রযুক্তি ব্যবহারে চীনের বিনিয়োগের প্রশংসা করে বলেছেন, বিশ্বের অন্যদের কাছে এই উদ্যোগ একটা উদাহরণ। সেই উদাহরণের মধ্য দিয়ে বেরিয়ে আসছে তাদের নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতাও।

স্টিয়েল সেই সঙ্গে অবশ্য চীনকে এক সতর্কবার্তাও শুনিয়েছেন। বলেছেন, গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন কমাতে তাদের আরও জোরালো পদক্ষেপ নিতে হবে। তারা যদি এক শক্তিশালী অ্যাকশন প্ল্যান বা জাতীয়ভাবে নির্ধারিত অবদান (এনডিসি) গ্রহণ করে, তবে তা অন্য দেশের কাছে এক গুরুত্বপূর্ণ ও প্রয়োজনীয় বার্তা পাঠাবে। দেখাবে সাহসী নেতৃত্ব, অর্থায়ন, উন্নয়ন ও পরিবেশ স্থিতিশীলতা একে অপরের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

স্টিয়েলের এই মন্তব্যের সময় বা ‘টাইমিং’ ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের কারণে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। চীনসহ বড় উন্নত দেশগুলোর জলবায়ু মোকাবিলায় গতিশীল হওয়াও জরুরি। চীন ইতিমধ্যেই ২০৩০ সালের মধ্যে সর্বোচ্চ কার্বন নির্গমন ও ২০৬০ সালের মধ্যে শূন্য নির্গমন বা ‘জিরো এমিশন’ লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে।

অবশ্য বহু পরিবেশ আন্দোলনকর্মী মনে করেন, চীনের আরও উদ্যোগী হওয়া দরকার। তাদের উচিত, ২০৩৫ সালের মধ্যে দেশের নির্গমন কম করে ৩০ শতাংশ কমানোর ব্যবস্থা করা।

ট্রাম্পের যুক্তরাষ্ট্র অবশ্যই চীনের প্রতি স্পর্ধী। জলবায়ুর স্বার্থে সেই চীনকে ট্রাম্পের বিপ্রতীপে ব্যবহারের প্রচ্ছন্ন উদ্যোগ কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলার মতো হবে কি? বাকুতে অনেক প্রশ্নই এখনো উত্তরহীন।