তুরস্কের দক্ষিণাঞ্চলের কাহরামানমারাস প্রদেশ। সোমবারের ভোররাত সোয়া ৪টা। গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন কিরাচাকালি দম্পতি। সঙ্গে তাঁদের ১৮ মাস বয়সী মেয়ে মাশালও ঘুমাচ্ছিল। এ সময় হঠাৎ কেঁপে ওঠে চারপাশ। ভবন দুলতে থাকে। তরুণ দম্পতি কিছু বুঝে ওঠার আগেই ধসে পড়ে ভবন। ধংসস্তূপের নিচে চাপা পড়েন স্বামী–স্ত্রী এবং তাঁদের শিশুসন্তান।
ভূমিকম্পে ভবন ধসের কিছুক্ষণ পর ধ্বংসস্তূপ থেকে বের হন ওমের কিরাচাকালি। কিন্তু ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে থাকে তাঁর স্ত্রী ইয়েলিজ কিরাচিকালি (২৩) ও তাঁদের মেয়ে মাশাল। এরপর কেটেছে ৫৫ ঘণ্টা। অবশেষে বুধবার ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে মাশালকে উদ্ধার করা হয়েছে। তবে ইয়েলিজ এখনো সেখানে।
তুরস্কের সংবাদমাধ্যম সাবাহর প্রতিবেদন অনুযায়ী, কিরাচাকালি দম্পতির বাড়ি কাহরামানমারাস প্রদেশে। গত সোমবার তুরস্ক ও সিরিয়ায় আঘাত হানা ভূমিকম্পে ভবন ধসের পর থেকে সেখানে উদ্ধারকাজ চালাচ্ছিলেন দেশটির উদ্ধারকর্মীরা।
মাশালকে উদ্ধার করা হলেও তাঁর মা ইয়েলিজকে এখনো উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। তাঁকে উদ্ধার করার চেষ্টা চলছে। তবে তাঁর সঙ্গে কথা হয়েছে উদ্ধারকর্মীদের। ইয়েলিজ উদ্ধারকর্মীদের জানিয়েছেন, ভূমিকম্পে ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ার পর থেকে মাশালকে নিজের বুকের দুধ খাইয়ে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করেছেন তিনি।
মাশাল তেমন গুরুতর কোনো আঘাত পায়নি। বুধবার মাশালকে উদ্ধার করার সময় ঘটনাস্থলে ছিলেন তার বাবা ওমের কিরাচাকালি। মাশালকে জীবিত উদ্ধারের পর তাকে তার বাবার কাছে দিয়ে দেওয়া হয়। এখন স্ত্রী ইয়েলিজ কিরাচিকালিকে কখন ধ্বংসস্তূপের ভেতর থেকে জীবিত উদ্ধার করা হবে, সে আশায় আছেন তিনি।
এদিকে তুরস্ক ও সিরিয়ায় তীব্র শীতের মধ্যে সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে লড়ে যাচ্ছেন উদ্ধারকারীরা। কারণ, সময় যতই গড়াচ্ছে, ধ্বংসস্তূপে আটকে পড়া মানুষের বেঁচে থাকার আশা কমে আসছে। উদ্ধারকারীরা বিভিন্ন ভবনের ধ্বংসস্তূপ সরানোর সঙ্গে সঙ্গে লাশ বেরিয়ে আসছে। এতে দ্রুত বাড়ছে নিহতের সংখ্যা। এর মধ্যে ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা ১১ হাজার ছাড়িয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আশঙ্কা প্রকাশ করে বলছে, ভূমিকম্পে দুই দেশে ২০ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হতে পারে।