উড়োজাহাজ দুর্ঘটনায় শোকে মুহ্যমান নেপাল
নেপালের পোখারায় ইয়েতি এয়ারলাইনসের উড়োজাহাজ দুর্ঘটনায় ৬৮ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। নিখোঁজ রয়েছেন আরও চারজন। তাঁদের সন্ধানে উদ্ধারকাজ এখনো চলছে। এদিকে গত তিন দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ উড়োজাহাজ দুর্ঘটনায় নেপালে আজ সোমবার দেশজুড়ে এক দিনের শোক পালন করা হয়েছে। খবর এএফপির।
নেপালের সিভিল অ্যাভিয়েশন কর্তৃপক্ষের তথ্যমতে, গতকাল রোববার সকালে পর্যটনের নগরী পোখারার বিমানবন্দরে অবতরণের ঠিক কিছুক্ষণ আগে ৯ এন-এএনসি এটিআর-৭২ মডেলের দুই ইঞ্জিনের উড়োজাহাজটি বিধ্বস্ত হয়। পরে সেটিতে আগুন ধরে যায়। রাজধানী কাঠমান্ডু থেকে ছেড়ে আসা উড়োজাহাজটিতে ১৫ জন বিদেশিসহ ৬৮ যাত্রী ও ৪ জন ক্রু ছিলেন।
বিধ্বস্ত যাত্রীবাহী উড়োজাহাজটির ককপিটের ভয়েস রেকর্ডার ও ফ্লাইট ডেটা রেকর্ডারের খোঁজ পেয়েছেন উদ্ধারকারীরা। উভয় রেকর্ডার ভালো অবস্থায় আছে। উড়োজাহাজটির নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের সুপারিশের ভিত্তিতে সেগুলো বিশ্লেষণের জন্য পাঠানো হবে।টেকনাথ সিতৌলা, কাঠমান্ডু বিমানবন্দরের কর্মকর্তা।
এ দুর্ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৬৮ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন নেপাল পুলিশের মুখপাত্র টেক প্রসাদ রায়। আজ তিনি বলেন, ‘কারও বেঁচে থাকার সম্ভাবনা কম।’ টেক প্রসাদ আরও জানান, অনুসন্ধান ও উদ্ধারকাজে যুক্ত বিভিন্ন দল দুর্ঘটনাস্থলে রয়েছে। তারা উড়োজাহাজের অন্য আরোহীদের খোঁজ করছে।
গত রাতে অন্ধকারাচ্ছন্ন পরিবেশের কারণে অনুসন্ধান ও উদ্ধার অভিযান স্থগিত করা হয়েছিল। আজ সকালে তা আবার শুরু হয়। ঘটনাস্থলে পুলিশের কয়েক শ সদস্য মোতায়েন রয়েছেন। মূলত মেঘলা আবহাওয়া ও কুয়াশায় দৃষ্টিসীমা বাধাগ্রস্ত হওয়ায় উদ্ধারকাজে সময় লাগছে।
উড়োজাহাজটি আমাদের বাড়ির আরেকটু কাছে পড়লেই বসতি এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হতো। ঘটনাস্থলে অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তবে জনবসতি এলাকায় এটি বিধ্বস্ত না হওয়ায় প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।গীতা সুনার, পোখারার বাসিন্দা।
ঠিক কী কারণে উড়োজাহাজটি বিধ্বস্ত হয়েছে, তা এখনো স্পষ্ট নয়। দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে নেপাল সরকার। এ কমিটি ৪৫ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে পারবে বলে আশা করা হচ্ছে। উদ্ধার করা হয়েছে বিধ্বস্ত উড়োজাহাজটির ব্ল্যাকবক্স।
কাঠমান্ডু বিমানবন্দরের কর্মকর্তা টেকনাথ সিতৌলা আজ জানান, বিধ্বস্ত যাত্রীবাহী উড়োজাহাজটির ককপিটের ভয়েস রেকর্ডার ও ফ্লাইট ডেটা রেকর্ডারের খোঁজ পেয়েছেন উদ্ধারকারীরা। উভয় রেকর্ডার ভালো অবস্থায় আছে। উড়োজাহাজটির নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের সুপারিশের ভিত্তিতে সেগুলো বিশ্লেষণের জন্য পাঠানো হবে। এ দুটি রেকর্ডারের উপাত্ত উড়োজাহাজটির বিধ্বস্ত হওয়ার কারণ জানতে তদন্তকারীদের সাহায্য করবে।
উল্লেখ্য, উড়োজাহাজ দুঘটনার পর নেপালের প্রধানমন্ত্রী পুষ্প কমল দহল মন্ত্রিসভার জরুরি বৈঠক ডাকেন। রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলোকে উদ্ধারকাজে সহায়তা করার আহ্বান জানান তিনি। একদিনের শোক পালনের কথা জানানো হয়।
অল্পের জন্য রক্ষা
মাঘী পূর্ণিমা উপলক্ষে আয়োজিত ঐতিহ্যবাহী উৎসব উদ্যাপনে কয়েক দিন আগে পোখারায় এসেছেন কল্পনা সুনার। গতকাল রোববার সকালে বাড়ির সামনের আঙিনায় কাপড় ধুচ্ছিলেন তিনি। হঠাৎ দেখতে পান, আকাশ থেকে একটি উড়োজাহাজ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে তাঁর দিকে ধেয়ে আসছে।
নেপালি সংবাদমাধ্যম কাঠমান্ডু পোস্টকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে কল্পনা সুনার বলেন, ‘উড়োজাহাজটি অস্বাভাবিকভাবে কাত-চিৎ হচ্ছিল এবং কিছুক্ষণের মধ্যে বোমা বিস্ফোরণের মতো শব্দ শুনতে পেলাম। এরপর আমি দেখলাম, গিরিখাত থেকে কালো ধোঁয়ার কুণ্ডলী উড়ছে।’
শুধু কল্পনাই নন, পোখারার বাসিন্দাদের অনেকে ইয়েতির উড়োজাহাজটি আছড়ে পড়ার দৃশ্য দেখেছেন, শুনতে পেয়েছেন বিস্ফোরণের শব্দ। স্থানীয় বাসিন্দা গীতা সুনারের বাড়ি থেকে ১২ মিটার দূরে উড়োজাহাজটির একটি ডানা ভেঙে পড়ে। গীতা বলেন, ‘উড়োজাহাজটি আমাদের বাড়ির আরেকটু কাছে পড়লেই বসতি এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হতো। ঘটনাস্থলে অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তবে জনবসতি এলাকায় এটি বিধ্বস্ত না হওয়ায় প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।’
পোখারার বাসিন্দা বাইনশা বাহাদুর বলেন, ‘বিধ্বস্ত হওয়ার পরপরই পুরো উড়োজাহাজটিতে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। আমরা ভয়ার্ত চোখে তা দেখছিলাম। তবে উড়োজাহাজটি সোজাসুজি পড়লে তা জনবসতির ওপর আছড়ে পড়ত। আরও বেশি ক্ষয়ক্ষতি হতো।’