২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

নেপালে আকাশপথে যাত্রা কেন এত ঝুঁকিপূর্ণ?

পাহাড়ের ধারে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা যাত্রীবাহী উড়োজাহাজটির ধ্বংসাবশেষ
ছবি: এএফপি

নেপালে গত রোববার ২২ আরোহী নিয়ে একটি উড়োজাহাজ বিধ্বস্তের ঘটনায় দেশটির আকাশপথে যাত্রার ঝুঁকির বিষয়টি ফের আলোচনায় এসেছে। আকাশপথে যাত্রার জন্য নেপালকে বিশ্বের অন্যতম ঝুঁকিপূর্ণ দেশ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কেন নেপালে আকাশপথে যাত্রা এতটা ঝুঁকিপূর্ণ, তা খতিয়ে দেখার চেষ্টার করেছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন।

রোববার তারা এয়ারের উড়োজাহাজটি সাড়ে ১৪ হাজার ফুট ওপরে উড্ডয়নকালে হিমালয়ের একটি পাহাড়ে বিধ্বস্ত হয়। অ্যাভিয়েশন সেফটি নেটওয়ার্কের তথ্যভান্ডারের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত ১০ বছরের মধ্যে নেপালে এটি ১৯তম উড়োজাহাজ দুর্ঘটনা। আর একই মৌসুমে প্রাণঘাতী দুর্ঘটনার হিসাবে এটি ১০ম।
ঠিক কী কারণে সর্বশেষ দুর্ঘটনাটি ঘটেছে, তদন্তকারীরা সবকিছু এখনো মিলিয়ে দেখছেন। গতকাল মঙ্গলবার বিধ্বস্ত উড়োজাহাজটির ব্ল্যাকবক্স উদ্ধার করা হয়েছে বলে সিএনএনকে জানিয়েছেন বিমানবন্দর কর্মকর্তারা।

আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনা, দৃষ্টিসীমার সীমাবদ্ধতা এবং পাহাড়ি ভূগঠন—এসব কিছুই নেপালকে আকাশপথে যাত্রার সবচেয়ে মারাত্মক দেশের কুখ্যাতি এনে দিয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

নেপালের লুকলা শহরের বিমানবন্দরটিকে বিশ্বের সবচেয়ে ভয়ংকর বিমানবন্দর বলা হয়
ছবি: এএফপি

তবে সর্বশেষ দুর্ঘটনাটির ক্ষেত্রে প্রতিকূল আবহাওয়ার ভূমিকা ছিল বলে মনে করা হচ্ছে বলে জানান নেপালের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা বিনোদ বি কে। নেপালের ডিপার্টমেন্ট অব হাইড্রোলজি অ্যান্ড মেটিওরোলজি পোখারায় ওই সময় বিক্ষিপ্ত বজ্রবৃষ্টির সঙ্গে আকাশ সাধারণত মেঘলা থাকার পূর্বাভাস দিয়েছিল।

নেপালের বেসামরিক বিমান পরিবহন কর্তৃপক্ষ জানায়, রোববার সকালে মধ্য নেপালের পোখারা শহর থেকে উড্ডয়ন করে তারা এয়ারের ফ্লাইটটি। জনপ্রিয় পর্যটন এলাকা জমসন পৌঁছানোর ২৫ মিনিটের যাত্রার মাঝপথে ফ্লাইটটির সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

বিরূপ আবহাওয়া, দৃষ্টিসীমা কমে আসা এবং দিনে আলোক স্বল্পতার কারণে নেপালের সামরিক বাহিনী পরিচালিত প্রাথমিক তল্লাশি ও উদ্ধার অভিযান ব্যাহত হয়। তবে উড়োজাহাজটি বিধ্বস্ত হওয়ার সম্ভাব্য এলাকায় ধ্বংসাবশেষের খোঁজে এই পাহাড়ি অঞ্চলে সোমবার হেলিকপ্টার পাঠানো হয়। তখন বিধ্বস্ত বিমানের ধ্বংসাবশেষ ও মরদেহের খোঁজ মিলে।

সেনাবাহিনীর প্রকাশিত ভিডিও ও ছবিতে পাহাড়ের ঢালে উড়োজাহাজের ধ্বংসাবশেষে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে থাকতে দেখা যায়। অব্যাহত প্রতিকূল আবহাওয়া সত্ত্বেও গতকাল সব মরদেহ উদ্ধারের ঘোষণা দেন উদ্ধারকারীরা।

আরও পড়ুন

‘বিরূপ ভূগঠন’

উড়োজাহাজ চলাচলে শুধু দ্রুত পরিবর্তনশীল আবহাওয়াই একমাত্র সমস্যা নয়। নেপালের বেসামরিক বিমান পরিবহন কর্তৃপক্ষের ২০১৯ সালের সেফটি রিপোর্ট অনুযায়ী, দেশটির ‘বিরূপ ভূগঠনও’ এই সমস্যার একটি অংশ। এই ‘ব্যাপক চ্যালেঞ্জটির’ মুখ পাইলটদের পড়তে হয়।

নেপালের জনসংখ্যা দুই কোটি ৯০ লাখ। বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু ১৪টি পাহাড়ের মধ্যে এভারেস্টসহ আটটিই দেশটিতে অবস্থিত। উঁচুনিচু প্রাকৃতিক ভূদৃশ্যের সৌন্দর্য নেপালকে পর্বতারোহীদের জন্য জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্যে পরিণত করেছে।
তবে এই পাহাড়ি ভূখণ্ডে বিশেষ করে প্রতিকূল আবহাওয়ার সময় পথ ঠিক রেখে উড়োজাহাজ চালানো কঠিন হয়ে পড়ে।

দেশের আরও দুর্গম এবং পাহাড়ি অংশে প্রবেশের জন্য ছোট উড়োজাহাজ ব্যবহার করার প্রয়োজন হয়। তখন এই বিষয়গুলো আরও জটিল হয়ে ঠেকে। যেসব উড়োজাহাজের ১৯টি অথবা এর চেয়ে কম আসন থেকে, এসব চ্যালেঞ্জের কারণে সেগুলোর বেশি দুর্ঘটনার পড়ার সম্ভাবনা থাকে বলে বেসামরিক বিমান পরিবহন কর্তৃপক্ষের প্রতিবেদনে বলা হয়।

রাজধানী কাঠমান্ডু নেপালের পরিবহন ব্যবস্থার প্রাথমিক কেন্দ্র। এখন থেকেই অধিকাংশ ছোট উড়োজাহাজ চলাচল করে থাকে। উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় নেপালের লুকলা শহরের বিমানবন্দরটিকে প্রায়শই বিশ্বের সবচেয়ে ভয়ংকর বিমানবন্দর বলা হয়। এটি এভারেস্টের প্রবেশদ্বার হিসেবে পরিচিত। বিমানবন্দরটির রানওয়ে দুটি উঁচু পাহাড়ের পাড় ঘেঁষে অবস্থিত। রানওয়েটি সোজাসুজি একটি গভীরে খাদের কাছে গিয়ে শেষ হয়েছে।

আকাশপথে এই ঝুঁকি আরও বাড়িয়েছে পুরোনো উড়োজাহাজ পরিচালনা থেকে সরে আসতে পর্যাপ্ত বিনিয়োগের অভাব। জাতিসংঘেরই একটি সংস্থা আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান পরিবহন সংগঠন (আইসিএও)। সংস্থাটি তাদের অ্যাভিয়েশন সেফটি ইমপ্লিমেন্টেশন পার্টনারশিপের মাধ্যমে ২০১৫ সালে নেপালকে সহযোগিতার বিষয়ে অগ্রাধিকার দেয়।

নিরাপদ উড্ডয়নের উদ্বেগ নিরসনে দুই বছর পর আইসিএও এবং নেপাল অংশীদারত্বের ভিত্তিতে কাজ করার ঘোষণা দেয়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নিরাপদ উড্ডয়নের মানদণ্ডে উন্নতি করেছে দেশটি। তবে এখনো কিছু চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে।

রোববার বিধ্বস্ত হওয়া ‘টুইন ওটার’ উড়োজাহাজটির মতোই তারা এয়ারের একটি উড়োজাহাজ একই পথে ২০১৬ সালে বিধ্বস্ত হয়। এ ছাড়া ২০১৮ সালের শুরুর দিকে ঢাকা থেকে কাঠমান্ডুর উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসা ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনসের একটি বিমান অবতরণের সময় বিধ্বস্ত হলে আগুন ধরে যায়। এতে ৭১ আরোহীর ৫১ জনই নিহত হন।