নূপুর শর্মার পক্ষে পোস্ট, ভারতে দরজিকে হত্যার পর মোদিকে হুমকি
ভারতের রাজস্থান রাজ্যের উদয়পুরে জনাকীর্ণ বাজারের ভেতর এক দরজিকে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। সে ঘটনার ভিডিও ধারণ করে তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়েছেন হামলাকারীরা। ভিডিওতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকেও হুমকি দেওয়া হয়েছে। খবর এনডিটিভির।
স্থানীয় সময় গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে এ হত্যাকাণ্ডের পর উদয়পুরজুড়ে ব্যাপক উত্তেজনা চলছে। ২৪ ঘণ্টার জন্য রাজস্থানে বড় জমায়েত নিষিদ্ধ এবং ইন্টারনেটের সংযোগ বন্ধ রাখা হয়েছে। ইতিমধ্যে ওই ভিডিও দেখে গোস মোহাম্মদ ও রিয়াজ নামের দুই সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
ভিডিওতে দেখা গেছে, দুই ব্যক্তি কানহাইয়া লাল নামের এক দরজির দোকানের ভেতর ঢুকে ছুরি দিয়ে হামলা চালান। পুলিশ বলছে, হামলাকারীরা ওই দরজির শিরশ্ছেদ করার চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু পারেননি।
ভিডিওতে আরও দেখা গেছে, হামলার আগে দুই ব্যক্তির একজনের গায়ের মাপ নিচ্ছিলেন দরজি। ক্যামেরার সামনে হত্যাকারীদের বেশ উল্লসিত দেখাচ্ছিল। তাঁরা একপর্যায়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকেও হুমকি দেন।
এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে উদয়পুর শহরের বিভিন্ন জায়গায় কারফিউ ঘোষণা করেছে পুলিশ। তারা বলছে, ঘটনার পর হত্যাকারীরা পালিয়ে যান এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিডিওটি আপলোড করেন।
এ ঘটনায় পুলিশ সদস্যদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। উদয়পুরকে সতর্ক অবস্থায় রাখা হয়েছে। সরকারি সূত্রের বরাতে এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়, এ হত্যাকাণ্ডকে সন্ত্রাসী হামলা বলে বিবেচনা করা হচ্ছে এবং ভারতের জাতীয় তদন্ত সংস্থার একটি দল উদয়পুরে যাচ্ছে।
মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) সম্পর্কে অবমাননাকর মন্তব্যের জেরে বহিষ্কৃত বিজেপির মুখপাত্র নূপুর শর্মাকে সমর্থন করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট দিয়েছিলেন দরজি কানহাইয়া লাল। সূত্র বলছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ওই পোস্ট দেওয়ার পর গ্রেপ্তারও হয়েছিলেন কানহাইয়া। এরপরও বিভিন্ন সময় তাঁকে হুমকিধমকি দেওয়া হচ্ছিল।
জ্যেষ্ঠ পুলিশ কর্মকর্তা হাওয়া সিং ঘুমারিয়া সাংবাদিকদের বলেন, তাঁদের কাছে নির্দেশ এসেছে কাউকে যেন ছাড় না দেওয়া হয়। হত্যার ভিডিওটি প্রচার না করার জন্য সংবাদমাধ্যমগুলোর প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি। ঘুমারিয়া বলেন, ‘এটি খুব ভয়ংকর। এ ভিডিও না দেখার পরামর্শ থাকবে আমার।’
পুলিশ বলছে, নূপুর শর্মাকে সমর্থন করে পোস্ট দেওয়ার পর ওই দরজিকে কিছু সংস্থা থেকে হুমকি দেওয়া হয়েছে। ১০ জুন তাঁর বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করা হয়। তখন তাঁকে গ্রেপ্তার করে আদালতে হাজির করে পুলিশ। ১৫ জুন তিনি পুলিশকে বলেছেন, তাঁকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। সব দল ও স্থানীয় নেতাদের পুলিশ স্টেশনে ডেকে এনে সমস্যাটির সুরাহা করা হয়।
এ পরিস্থিতিকে কষ্টকর ও লজ্জাজনক বলে উল্লেখ করেছেন রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলত। তিনি বলেন, বিদ্বেষপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়েছে। এ ঘটনায় দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। সব দলকে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
গেহলত বলেন, ‘আমি সবার কাছে বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি, তারা যেন এ ঘটনার ভিডিওটি শেয়ার করে পরিবেশ নষ্ট না করেন। ভিডিওটি শেয়ার করা হলে সমাজে অপরাধীদের বিদ্বেষ ছড়িয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্য সফল হবে।’