নতুন চার মন্ত্রী নিয়োগ দিলেন প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া
প্রধানমন্ত্রীর পর এবার নতুন চার মন্ত্রী নিয়োগ দিয়েছেন শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষে। গতকাল শনিবার নিজ দলের চার সদস্যকে মন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেন তিনি। এই চারজনই গত মন্ত্রিসভার সদস্য ছিলেন। খবর ফিন্যান্সিয়াল পোস্টের
তাঁদের মধ্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে জি এল পেইরিস, জনপ্রশাসনমন্ত্রী দিনেশ গুনাবর্ধনে, বিদ্যুৎ ও জ্বালানিমন্ত্রী কাঞ্চা ওয়াইজেসেকরা এবং পল্লি উন্নয়ন ও গৃহায়ণমন্ত্রী হিসেবে প্রসন্ন রানাতুঙ্গা নিয়োগ পেয়েছেন।
তাঁরা পদুজানা পারামুনা দলের নেতা। তবে শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক দুর্দশা কাটাতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের সঙ্গে আলোচনা করার জন্য কোনো অর্থমন্ত্রী এখনো নিয়োগ দেননি তিনি।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষের কাছে শপথ নেন রনিল বিক্রমাসিংহে। তবে তাঁর এই নিয়োগে জনগণের বড় অংশই সন্তুষ্ট নয়। কারণ, তাঁকে দেশটির রাজনীতিতে প্রভাবশালী রাজাপক্ষে পরিবারের ঘনিষ্ঠ মনে করা হয়।
শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়ে কাজ শুরু করেছেন রনিল বিক্রমাসিংহে। গত শুক্রবার ভারত, চীন, যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানের রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে বৈঠকও করেছেন তিনি। তবে তাঁর বিরুদ্ধে অনাস্থা জানাচ্ছে দেশটির বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো। তা ছাড়া প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষের পদত্যাগের দাবিতেও আন্দোলন অব্যাহত রয়েছে। প্রেসিডেন্টের পদত্যাগসহ একগুচ্ছ দাবি তুলেছেন বিক্ষোভকারীরা। তাতে দেশের শাসনব্যবস্থা আমূল বদলে ফেলার প্রস্তাব করা হয়েছে।
সংসদে মাত্র একটি আসন নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর চেয়ারে বসা বিক্রমাসিংহের সামনে নতুন চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে প্রধান বিরোধী দল সমাজি জনা বালাভেগায়া (এসজেবি)। দলটির সাধারণ সম্পাদক রণজিৎ মাদ্দুমা বানদারা বলেন, ‘সরকার গঠনের কোনো ম্যান্ডেট রনিল বিক্রমাসিংহের নেই। আমরা তাঁকে চ্যালেঞ্জ করছি, পার্লামেন্টে ১১৩টি আসনের সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ করুন।’তবে প্রধানমন্ত্রী বিক্রমাসিংহে বলেছেন, তিনি আগামী সপ্তাহে পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতার প্রমাণ দেবেন।
এদিকে প্রেসিডেন্টের নতুন মন্ত্রিসভা গঠনের ক্ষেত্রে বড় বাধা হচ্ছে বিরোধী দল। তারা বলছে, নতুন মন্ত্রিসভায় তারা অংশ নেবে না। এতে গোতাবায়ার ঐক্যের সরকার গড়ার প্রচেষ্টা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। দেশটির প্রধান বিরোধী দল সমাজি জন বালাভেগায়া বলেছে, তারা তথাকথিত ঐক্য সরকারে যোগ দেবে না। একসময় রাজাপক্ষে সরকারের ঘনিষ্ঠ কিন্তু এখন স্বতন্ত্র দল শ্রীলঙ্কা ফ্রিডম পার্টি বলছে, তারা মন্ত্রিসভায় যাবে না। শ্রীলঙ্কার স্থানীয় গণমাধ্যমে বলা হচ্ছে, দেশটির সামনে আরও বেশি রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে।
পার্লামেন্টে নতুন সরকারের সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিশ্চিত করার জন্য সংসদ সদস্যদের অর্থ দিয়ে কেনার চেষ্টা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ প্রসঙ্গে এসজেবির নেতা ও সংসদ সদস্য রাজিথা সেনারত্নে গতকাল বলেন, রনিল বিক্রমাসিংহের সরকারে যোগ দেওয়ার জন্য তাঁকে অর্থ দিতে চাওয়া হয়েছিল।
শ্রীলঙ্কার নতুন প্রধানমন্ত্রীর দল ইউনাইটেড ন্যাশনাল পার্টি ২০২০ সালের নির্বাচনে মাত্র একটি আসন পেয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বিক্রমাসিংহেকে সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণে এখন ক্ষমতাসীন রাজাপক্ষে জোটের সাহায্য নিতে হবে।
বিক্রমাসিংহে আরও বলেন, বিক্ষোভকারীরা প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ চালিয়ে যেতে পারবেন। পুলিশ তাঁদের বাধা দেবে না। গতকাল ১২ ঘণ্টার জন্য কারফিউ শিথিল করা হয়। ভারতের হাইকমিশন বলেছে, তারা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অনুসারে গঠিত শ্রীলঙ্কার সরকারের সঙ্গে কাজ করার জন্য উন্মুখ। নতুন প্রধানমন্ত্রী সহায়তার জন্য ভারতকে ধন্যবাদও জানিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষের পদত্যাগ দাবি করা বিক্ষোভকারীদের মনোভাবের সঙ্গে তিনি একমত। তবে তিনি বলেন, প্রেসিডেন্ট পদত্যাগ করবেন না। রনিল বিক্রমাসিংহে বলেন, ‘দোষারোপের রাজনীতি কোনো সুফল দেবে না। জনগণ যাতে খেয়েপরে বাঁচতে পারে, সে জন্য আমি আছি।’ রাজাপক্ষে সরকারের সব নীতি পরিবর্তন করতে যাচ্ছেন বলেও জানান তিনি।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে সাহায্য চেয়ে শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এক বছরের জন্য আপনাদের সহায়তা আমাদের প্রয়োজন। আমরা যা-ই আপনাদের কাছ থেকে পাব, তা শোধ করে দেব। এ কাজ করতে আমাদের সহায়তা করুন। আমরা এশিয়ার দীর্ঘ সময়ের ও পুরোনো গণতন্ত্রের দেশ।’
শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি বিপর্যস্ত। খাদ্য, ওষুধ ও জ্বালানি হয় পাওয়া যাচ্ছে না অথবা দাম নাগালের বাইরে। সিলিন্ডারে জ্বালানি ভরতে গিয়ে পেট্রল স্টেশনে অপেক্ষমাণ কয়েকজনের মৃত্যুও হয়েছে। ১৯৪৮ সালে ব্রিটেনের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভের পর সবচেয়ে মারাত্মক অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছে দেশটি।
প্রেসিডেন্ট গোতাবায়ার পদত্যাগের দাবিতে কলম্বোর গল ফেস গ্রিনে বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে। শুক্রবার ওই বিক্ষোভ থেকে বেশ কয়েকটি দাবি তোলা হয়েছে। এসবের মধ্যে রয়েছে গোতাবায়ার নেতৃত্বাধীন সরকারকে শিগগিরই পদত্যাগ করতে হবে এবং নতুন অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করতে হবে। সেই সরকার ১৮ মাসের মধ্যে নির্বাচন দেবে। সংবিধান সংশোধন করে প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা কমাতে হবে।