কাবুলে সীমিত উপস্থিতি পুনঃপ্রতিষ্ঠার ঘোষণা ইইউর
আফগানিস্তানে মানবিক সহায়তা প্রদানের সুবিধার্থে দেশটির রাজধানী কাবুলে ‘ন্যূনতম উপস্থিতি’ পুনঃপ্রতিষ্ঠা শুরুর ঘোষণা দিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)।
গতকাল বৃহস্পতিবার ইইউ এ ঘোষণা দেয়। বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
ইইউর পররাষ্ট্রবিষয়ক মুখপাত্র পিটার স্ট্যানো এক বিবৃতিতে বলেন, ‘কাবুলে আমাদের ন্যূনতম উপস্থিতিকে কোনোভাবেই তালেবান সরকারকে স্বীকৃতি হিসেবে দেখা উচিত নয়।’
পিটার আরও বলেন, বিষয়টি দেশটির কার্যত কর্তৃপক্ষকেও (তালেবান) স্পষ্টভাবে জানানো হয়েছে।
আফগানিস্তান একটি মানবিক বিপর্যয়ের মুখোমুখি। গত বছরের আগস্টে তালেবান ক্ষমতা দখলের পর পশ্চিমা দেশগুলো আফগানিস্তানের জন্য আন্তর্জাতিক সাহায্য স্থগিত করে। দেশটির বিদেশে থাকা সম্পদে প্রবেশাধিকার বন্ধ করে দেওয়া হয়। ফলে আফগানিস্তানের মানবিক পরিস্থিতি গুরুতর আকার ধারণ করে।
পূর্ববর্তী মার্কিন-সমর্থিত সরকারের অধীন আফগানিস্তান প্রায় পুরোপুরি বিদেশি সাহায্যের ওপর নির্ভরশীল ছিল। তালেবানের ক্ষমতা দখলের প্রেক্ষাপটে আফগানিস্তান চরম অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে পড়েছে। দেশটির অর্থনীতি প্রায় স্থবির হয়ে পড়েছে। বেশির ভাগ সরকারি কর্মচারী কয়েক মাস ধরে বেতন পাচ্ছেন না।
তালেবানের ক্ষমতা দখলের পর থেকে আফগানিস্তানে পাঁচ লাখের বেশি মানুষ চাকরি হারিয়েছেন বা চাকরি ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও)।
বিশ্বের কোনো দেশ এখন পর্যন্ত তালেবানকে স্বীকৃতি দেয়নি। দ্বিতীয় দফায় তালেবান কীভাবে দেশ শাসন করছে, সেদিকে নজর রাখছে অধিকাংশ দেশ। তারা বলছে, তালেবানের কার্যক্রমের ওপর তারা গভীরভাবে দৃষ্টি রাখছে। কাজের ভিত্তিতেই তারা ভবিষ্যতে তালেবানকে মূল্যায়ন করবে।
আফগানিস্তানের বর্তমান সরকারকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিতে সম্প্রতি মুসলিম দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানান তালেবানের ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ হাসান আখুন্দ। তিনি দাবি করেন, আফগানিস্তানে শান্তি ও নিরাপত্তা পুনরুদ্ধার করে তালেবান স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সব শর্তই পূরণ করেছে।
ইইউর পররাষ্ট্রবিষয়ক মুখপাত্র পিটারের বিবৃতির আগে আফগান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র টুইটারে বলেন, ইইউ পাঁচ মাসের মধ্যে প্রথম কাবুলে স্থায়ী উপস্থিতিসহ একটি দূতাবাস পুনরায় খুলছে।
পিটার তাঁর বিবৃতিতে বলেন, মানবিক সহায়তা সরবরাহের সুবিধার্থে ও মানবিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে কাবুলে ইইউর আন্তর্জাতিক প্রতিনিধিদলের সদস্যদের একটি ন্যূনতম উপস্থিতি পুনঃপ্রতিষ্ঠা শুরু হয়েছে।
গত ১৫ আগস্ট কাবুলের পতন হয়। কাবুল পতনের মধ্য দিয়ে আফগানিস্তানের ক্ষমতা দ্বিতীয়বারের মতো তালেবানের হাতে যায়। পরের মাসে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের ঘোষণা দেয় তালেবান।
আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখলের পর তালেবান আগের কট্টর শাসনব্যবস্থা থেকে সরে আসার প্রতিশ্রুতি দেয়। কিন্তু দেশটির মানবাধিকার পরিস্থিতি উদ্বেগজনকই রয়ে গেছে। সরকারি চাকরি থেকে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে নারীদের বাদ দেওয়া হয়েছে। মেয়েদের মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোর বেশির ভাগই বন্ধ রয়েছে।