ওয়াশিংটন পোস্টের দৃষ্টিতে বছরের সেরা ১০ বই

প্রতিবছর সারা বিশ্বে প্রকাশনা সংস্থাগুলো থেকে লাখো বই প্রকাশিত হয়। বছর শেষে নানা সংস্থা বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে সেরা বইয়ের তালিকা করে। জনপ্রিয়তা, বিক্রি, আলোচনা, সমালোচনা ইত্যাদির ভিত্তিতে এই সেরা বইয়ের তালিকা করা হয়। তেমনই ওয়াশিংটন পোস্টের বুক ওয়ার্ল্ড বিভাগ বছরে সেরা ১০টি বইয়ের (ফিকশন ও নন-ফিকশন) তালিকা করেছে। এ প্রতিবেদনে সেসব বইয়ের তথ্য বিশ্লেষণ করা হলো।

কালারড টেলিভিশন

ছবি: গুডরিডস ওয়েবসাইটের সৌজন্যে

ওয়াশিংটন পোস্টের ২০২৪ সালের সেরা বইয়ের তালিকার শুরুতেই আছে মার্কিন ঔপন্যাসিক ড্যানজি সেনার উপন্যাস ‘কালারড টেলিভিশন’। সেনার এই উপন্যাস জেন ​​গিবসন নামের একজন বর্বর নারীকে নিয়ে। যিনি তাঁর উচ্চাভিলাষী দ্বিতীয় উপন্যাসটি বিক্রির জন্য সংগ্রাম করছেন। সেই সংগ্রামকে কেন্দ্র করেই উপন্যাসটি এগিয়েছে। এটি মূলত জাতিগত পরিচয় নিয়ে একটি ডার্ক কমেডি ঘরানার উপন্যাস।

জেমস

ছবি: গুডরিডস ওয়েবসাইটের সৌজন্যে

তালিকার দ্বিতীয় অবস্থানে আছে মার্কিন লেখক ও ইউনিভার্সিটি অব সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়ার ডিস্টিংগুইশড অধ্যাপক পার্সিভাল লিওনার্দ এভারেটের উপন্যাস ‘জেমস’। এই উপন্যাস পড়লে মার্ক টোয়েনের উপন্যাস ‘অ্যাডভেঞ্চারস অব হাকলবেরি ফিন’-এর কথা মনে পড়ে। দুটি উপন্যাসই বিরক্তিকর ও তীব্রভাবে হাস্যকর। উপন্যাসের দুই চরিত্র জিম ও হাক। একদিন জিম শুনতে পান, তিনি নিউ অর্লিন্সের একজন ব্যক্তির কাছে বিক্রি হতে যাচ্ছেন; স্ত্রী ও কন্যার কাছ থেকে চিরতরে বিচ্ছিন্ন হচ্ছেন তিনি। এ কারণে পালিয়ে যান তিনি। এদিকে হাক তাঁর রগচটা বাবার হাত থেকে বাঁচতে নিজের মৃত্যুর জাল তৈরি করেন। এসব ঘটনাকে কেন্দ্র করেই এগিয়েছে উপন্যাসটি। উপন্যাসটির সমাপ্তি সমানভাবে মর্মান্তিক ও আনন্দদায়ক।

মাই ফ্রেন্ডস

ছবি: গুডরিডস ওয়েবসাইটের সৌজন্যে

যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম নেওয়া ব্রিটিশ-লিবিয়ান ঔপন্যাসিক হিশাম মাতার ২০১৭ সালে পুলিৎজার জিতেছেন। সেরা বইয়ের তালিকায় তৃতীয় অবস্থানে আছে তাঁর উপন্যাস ‘মাই ফ্রেন্ডস’। ১৯৮৪ সালের ১৭ এপ্রিল লন্ডনে লিবিয়ান দূতাবাসের বাইরে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। মুয়াম্মার গাদ্দাফির শাসনে ক্ষুব্ধ হয়ে লিবিয়ান ছাত্ররা স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে থাকেন। হঠাৎ দূতাবাসের জানালা থেকে ভিড়ের মধ্যে গুলি চালানো হয়। সে সময় একজন ব্রিটিশ পুলিশ কর্মকর্তা নিহত ও ১০ জন বিক্ষোভকারী আহত হয়। ‘মাই ফ্রেন্ডস’ উপন্যাসের নায়ক খালেদ নামের একজন লিবিয়ান, যিনি ওই বিক্ষোভে উপস্থিত ছিলেন। উপন্যাসে তিনি সেই ঘটনার বর্ণনা করেছেন।

প্লেগ্রাউন্ড

ছবি: গুডরিডস ওয়েবসাইটের সৌজন্যে

পুলিৎজার পুরস্কারজয়ী মার্কিন ঔপন্যাসিক রিচার্ড পাওয়ারসের এ বছরের নতুন উপন্যাস ‘প্লেগ্রাউন্ড’। পাওয়ারসের অধিকাংশ উপন্যাসেই আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রভাব আছে। এই উপন্যাসে একজন বিশ্বখ্যাত প্রযুক্তি প্রতিভা, বিচ্ছিন্ন বন্ধুত্ব, একজন অগ্রগামী সমুদ্রবিজ্ঞানী ও ফ্রেঞ্চ পলিনেশিয়ার একটি প্রবালপ্রাচীর মাকাটিয়া দ্বীপটি জড়িত। ওয়াশিংটন পোস্টের সমালোচক রন চার্লস লিখেছেন, ‘আমি অন্য কোনো উপন্যাসের কথা ভাবতে পারি না, যা পৃথিবীর দুর্দশাকে এত বিস্তৃত এবং বিভ্রান্তিকর দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে আচরণ করে।’

দিস স্ট্রেঞ্জ ইভেন্টফুল হিস্ট্রি

ছবি: গুডরিডস ওয়েবসাইটের সৌজন্যে

মার্কিন লেখক ক্লেয়ার মেসুদের উপন্যাস ‘দিস স্ট্রেঞ্জ ইভেন্টফুল হিস্ট্রি’ সেরা বইয়ের তালিকার ৫ নম্বরে আছে। এই উপন্যাস লেখার অনুপ্রেরণা তিনি পেয়েছেন তাঁর পিতামহের লেখা দেড় হাজার পৃষ্ঠার স্মৃতিকথা থেকে। যিনি ফরাসি আলজেরিয়ায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন। উপন্যাসে মেসুদ দেখিয়েছেন, কীভাবে একটি কাল্পনিক পরিবারের তিন প্রজন্ম দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ থেকে ২১ শতকে ভূরাজনৈতিক তরঙ্গে এগিয়ে চলেছে। জীবনীগত বিবরণ হলেও মেসুদ নাটকীয় প্রভাবে ঘটনাগুলো এগিয়ে নিয়ে গেছেন, এ কারণে উপন্যাসটি পাঠকের আগ্রহের কেন্দ্রে ছিল। এই উপন্যাস পাঠককে উপলব্ধি করায় যে আমরা নিজের পরিবার সম্পর্কে কতটা জানি এবং কত কম স্বীকার করি।

দ্য হিডেন গ্লোব: হাউ ওয়েলথ হ্যাকস দ্য ওয়ার্ল্ড

ছবি: গুডরিডস ওয়েবসাইটের সৌজন্যে

নিউইয়র্কভিত্তিক সাংবাদিক ও লেখক অ্যাটোসা আরাক্সিয়া আব্রাহামিয়ানের নন-ফিকশন বই ‘দ্য হিডেন গ্লোব: হাউ ওয়েলথ হ্যাকস দ্য ওয়ার্ল্ড’। আব্রাহামিয়ান ‘বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল’–এর কথা বলেন, যা আন্তর্জাতিক ধনীদের সুবিধার জন্য বিশ্বায়নকে বাঁকতে সাহায্য করে, প্রায়ই এটির আইনের অধীন না হয়ে একটি দেশের মধ্যে ব্যবসা করার সুযোগ দেয়। আব্রাহামিয়ান এই বই তীক্ষ্ণভাবে বিতর্ক এবং ইতিহাসের আলোকে লিখেছেন।

আই হার্ড হার কল মাই নেম: আ মেমোয়ার অব ট্রানজিশন

ছবি: গুডরিডস ওয়েবসাইটের সৌজন্যে

বেলজিয়ামে জন্ম নেওয়া মার্কিন লেখক, সমালোচক ও শিল্পী লুসি সান্তের স্মৃতিকথামূলক বই ‘আই হার্ড হার কল মাই নেম: আ মেমোয়ার অব ট্রানজিশন’। লুসি সান্তে একজন ট্রান্সজেন্ডার নারী। স্মৃতিকথামূলক এই বইয়ে তিনি দুই স্তরের আখ্যান দিয়েছেন। এতে ২০২১ সালে তাঁর উত্তরণের অভিজ্ঞতা এবং তাঁর সমগ্র জীবনের বিবরণ আছে। এই বইয়ে তাঁর বেড়ে ওঠা থেকে শুরু করে সৃজনশীল জীবন সম্পর্কে উল্লেখযোগ্য অংশও রয়েছে।

কোয়েশ্চেন সেভেন

ছবি: গুডরিডস ওয়েবসাইটের সৌজন্যে

বুকারজয়ী অস্ট্রেলীয় ঔপন্যাসিক ও চলচ্চিত্র পরিচালক রিচার্ড ফ্লানাগানের নন-ফিকশন বই ‘কোয়েশ্চেন সেভেন’। এই বইয়ে তিনি একধরনের দার্শনিক ফ্যান্টাসি তৈরি করেছেন, যা একই সঙ্গে দুঃখজনক ও আশ্চর্যজনক। আধুনিক ইতিহাসের সামাজিক, রাজনৈতিক এবং নৈতিক জটিলতার সঙ্গে লেখকের নিজের সাহসী আখ্যানের কারণে ফ্লানাগান পাঠকদের মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখেন।

ভি থার্টিন: ক্রনিকল অব আ ট্রায়াল

ছবি: গুডরিডস ওয়েবসাইটের সৌজন্যে

ফরাসি লেখক ও সাংবাদিক এমানুয়েল ক্যারেরার অপরাধ নিয়ে লেখা নন-ফিকশন বই ‘ভি থার্টিন: ক্রনিকল অব আ ট্রায়াল’। বইটি অনুবাদ করেছেন কানাডীয় অনুবাদক জন ল্যাম্বার্ট। ২০১৫ সালের নভেম্বরে প্যারিসে এক সন্ত্রাসী হামলায় ১৩০ জন নিহত হয়। ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে শুরু হওয়া বিচারে সেই হামলায় অংশ নেওয়ার জন্য ২০ জনকে অভিযুক্ত করা হয়। ১০ মাস ধরে চলা এই বিচারকাজে পেশাগত কারণে প্রায় প্রতিদিনই উপস্থিত ছিলেন ক্যারেরা। আদালতে অভিযুক্তদের ভয়, করুণা, নৈকট্য এবং উপস্থিতির এক অনন্য অভিজ্ঞতা নিয়েই তিনি এই বই লিখেছেন।

১০

হোয়েন দ্য ক্লক ব্রোক: কন মেন, কন্সপিরেসিস্ট অ্যান্ড হাউ আমেরিকা ক্র্যাকড আপ অন দ্য আর্লি ১৯৯০

ছবি: গুডরিডস ওয়েবসাইটের সৌজন্যে

সেরা বইয়ের তালিকার ১০ নম্বরে আছে লেখক জন গ্যানজের ইতিহাস ও রাজনীতিভিত্তিক বই ‘হোয়েন দ্য ক্লক ব্রোক: কন মেন, কন্সপিরেসিস্ট, অ্যান্ড হাউ আমেরিকা ক্র্যাকড আপ অন দ্য আর্লি ১৯৯০’। আমাদের বর্তমান মুহূর্তের শিকড় খোঁজার জন্য গ্যানজ প্যাট বুকানন ও রস পেরোটের যুগকে পুনরালোচনা করেছেন। এই বইয়ে তিনি যুক্তি দিয়েছেন যে ১৯৯২ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন আসলে একটি সার্কাস ছিল। তীক্ষ্ণ চরিত্র অধ্যয়ন এবং রাজনৈতিক সমালোচনায় নিপুণ অনুশীলনের সঙ্গে নির্মিত বর্ণনামূলক ইতিহাসের একটি বই এটি।