২০০৯ সালে প্রেসিডেন্ট হওয়ার কিছুদিন আগে যখন তাঁর বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও অস্ত্র চুক্তি থেকে উৎকোচ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল, তখন তিনি হেসে উড়িয়ে দিয়েছিলেন। অভিযোগকারীদের নিয়ে টিটকারি করতেও পিছপা হননি। কিন্তু ২০১৬ সালে তা আর সম্ভব হলো না।
শেষ পর্যন্ত তিনি ‘ভুল’ স্বীকার করলেন। ক্ষমা না চাইলেও ‘দুঃখ প্রকাশ’ অন্তত করতে হলো।
এই দোর্দণ্ড প্রতাপশালী ব্যক্তি হলেন দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট জ্যাকব জুমা। তাঁর কারণেই নেলসন ম্যান্ডেলার দল আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেসের (এএনসি) ভাবমূর্তি আজ প্রায় তলানিতে এসে ঠেকেছে বলে অনেকে মনে করছেন।
জুমার বিরুদ্ধে প্রধান অভিযোগ, তিনি রাষ্ট্রীয় অর্থ লোপাট করেছেন এবং ব্যবসায়ীদের রাজনীতিতে নাক গলানোর সুযোগ করে দিয়েছেন। বিশেষ করে জুমার ‘আশকারাতেই’ ভারতীয় বংশোদ্ভূত ‘গুপ্ত পরিবার’ নামে একটি সুপরিচিত ব্যবসায়ী পরিবার রাজনীতিতে বেপরোয়া হস্তক্ষেপ করছে। সমালোচকেরা বলছেন, রাজনীতিক নাকি করপোরেট ব্যবসায়ী, কারা এখন দক্ষিণ আফ্রিকা দেশটি চালাচ্ছেন, সে প্রশ্নই বড় হয়ে দেখা দিয়েছে।
দুই বছর আগে জুমার বিরুদ্ধে সরকারি অর্থ দিয়ে পৈতৃক বাড়িতে বিনোদনের জন্য অ্যাম্ফিথিয়েটার, গবাদিপশুর খামার ও সুইমিংপুল বানানোর অভিযোগ ওঠে। ২০১৪ সালে সরকারের দুর্নীতি দমন পর্ষদ রায় দেয়, জুমা রাষ্ট্রীয় তহবিলের ২ কোটি ৩০ লাখ ডলার খরচ করে এসব বানিয়েছেন। এর একটি বড় অংশ তাঁকে ফেরত দেওয়ার নির্দেশও দেওয়া হয়। কিন্তু জুমা তা ফেরত দেননি।
সম্প্রতি বিরোধী দল এ নিয়ে আন্দোলন শুরু করে। এ আন্দোলনের মধ্যেই জুমাকে জড়িয়ে উঠে আসে গুপ্ত পরিবারের নাম।
অভিযোগ রয়েছে, কাকে কোন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হবে, আড়াল থেকে কলকাঠি নেড়ে তা-ও ঠিক করে গুপ্ত পরিবার। কেউ কেউ এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের আলোচিত ‘ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারি’র আদলে বিষয়টিকে এখন ‘গুপ্ত গেট’ বলে ডাকতে শুরু করেছেন।
গত বৃহস্পতিবার দেশের সাংবিধানিক আদালত জুমার রাষ্ট্রীয় অর্থ ফেরত না দেওয়া সংবিধান লঙ্ঘনের শামিল বলে রায় দেন। এরপর জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে ‘ভুল’ স্বীকার করে ‘দুঃখ প্রকাশ’ করেন প্রেসিডেন্ট। তবে এই ‘দুঃখ প্রকাশ’ বিরোধীদের ক্ষোভ প্রশমন করতে পারেনি।
গুপ্ত পরিবারে কারা: ১৯৯৩ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের সাহারানপুরের তিন ভাই অজয় গুপ্ত, অতুল গুপ্ত ও রাজেশ ওরফে টনি গুপ্ত দক্ষিণ আফ্রিকায় ব্যবসা শুরু করেন। সাহারা কম্পিউটারস নামের একটি প্রতিষ্ঠান খুলে কম্পিউটার যন্ত্রপাতির ব্যবসা শুরু করেন তাঁরা। তাঁরা দ্রুত ব্যবসা সম্প্রসারণে সক্ষম হন। কয়েক বছরের মধ্যে তাঁরা মিডিয়া ও খনি ব্যবসা শুরু করেন এবং সেখানেও ব্যাপক সাফল্যের মুখ দেখেন। ক্ষমতাসীন রাজনীতিকদের সঙ্গে পরিবারটির ঘনিষ্ঠতা সবার সামনে আসে ২০১৩ সালে। ওই বছর গুপ্ত পরিবারের এক সদস্যের বিয়ের আয়োজন করা হয় প্রিটোরিয়ার বিমানঘাঁটিতে! ধীরে ধীরে সবাই জানতে পারে প্রেসিডেন্ট জুমার স্ত্রী বঙ্গি এনগেমা জুমা গুপ্ত পরিবারের জেআইস মাইনিং সার্ভিসের হয়ে কাজ করেছেন। জুমার মেয়ে দুদুজিলে জুমা সাহারা কম্পিউটারসের পরিচালক ছিলেন। ছেলে দুদুজানে জুমা গুপ্তদের মালিকানাধীন কয়েকটি কোম্পানির পরিচালক হিসেবে এখনো কাজ করছেন।
গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, জ্যাকব জুমার ছেলে দুদুজানে জুমার মাধ্যমেই গুপ্ত পরিবার রাজনীতিকদের ওপর ছড়ি ঘুরিয়ে আসছেন।