করোনার নতুন ধরন, বিশ্বজুড়ে সর্বোচ্চ সতর্কতা
করোনার নতুন ধরন নিয়ে উদ্বেগ ছড়িয়েছে। সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ। দক্ষিণ আফ্রিকার দেশগুলোতে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা ও নানা বিধিনিষেধের মতো পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করেছে এশিয়া ও ইউরোপের দেশগুলো। বিবিসির এক খবরে বলা হয়, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) করোনাভাইরাসের নতুন ধরনটিকে ‘উদ্বেগজনক’ বলে আখ্যায়িত করার পর সতর্কতা হিসেবে পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করে দেশগুলো।
ডব্লিউএইচওর বিবৃতিতে বলা হয়, সামনে আসা নানা প্রমাণ করোনা মহামারি ক্ষতিকর দিকে মোড় নেওয়ার আভাস দিচ্ছে। প্রাথমিকভাবে হাতে আসা তথ্য বলছে, এই ধরনের মাধ্যমে করোনার সংক্রমণ নতুন করে বিস্তারের ঝুঁকি রয়েছে।
ইতিমধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে আমস্টারডামে আসা শত শত যাত্রীর করোনা পরীক্ষা করা হয়েছে। নেদারল্যান্ডস কর্তৃপক্ষ বলছে, এখন পর্যন্ত ৬১ জনের নতুন ধরনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। তাঁদের নিকটস্থ একটি হোটেলে কোয়ারেন্টিনের জন্য রাখা হয়েছে। গতকাল শনিবার জার্মানি এবং চেক প্রজাতন্ত্রে আরও সন্দেহভাজন সংক্রমণের খবর পাওয়া গেছে।
বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, যুক্তরাজ্যেও দুজনের ওমিক্রন শনাক্ত হয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা গ্রিক অক্ষর অনুযায়ী দক্ষিণ আফ্রিকায় শনাক্ত নতুন ধরনের নাম রেখেছে ‘ওমিক্রন’। প্রাথমিকভাবে এটির নাম দেওয়া হয়েছিল বি.১.১.৫২৯। করোনার নতুন ধরনটি নিয়ে ডব্লিউএইচওর টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজরি গ্রুপের এক জরুরি ভার্চ্যুয়াল বৈঠকের পর একে উদ্বেগজনক হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
গত বুধবার দক্ষিণ আফ্রিকায় এটি প্রথম শনাক্ত হয়। ডব্লিউএইচও বলছে, করোনার এ ধরনের অনেক বেশি মিউটেশন রয়েছে। এগুলোর মধ্যে বেশ কিছু উদ্বেগজনক। নতুন শনাক্ত হওয়া ধরনটি নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাতে কয়েক সপ্তাহ সময় লাগবে বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
নতুন ধরন নিয়ে কিছু প্রশ্ন
যুক্তরাজ্যের গণমাধ্যম বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, এক বিজ্ঞানী করোনার নতুন এই ভেরিয়েন্টকে ‘ভয়ংকর’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। আরেক বিজ্ঞানী বলেছেন, এতটা ভয়ংকর ভেরিয়েন্ট তাঁরা দেখেননি।
নেদারল্যান্ডস কর্তৃপক্ষ বলছে, এখন পর্যন্ত ৬১ জনের নতুন ধরনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। যুক্তরাজ্যেও দুজনের ওমিক্রন শনাক্ত হয়েছে।
বিজ্ঞানবিষয়ক সাময়িকী নেচার-এ বলা হয়েছে, প্রথমে এই ভেরিয়েন্ট পাওয়া গিয়েছিল বতসোয়ানায়। এরপর সেটি দক্ষিণ আফ্রিকায় শনাক্ত হয়। এর পরপরই সেটি শনাক্ত হয়েছে হংকংয়ে। যদিও দক্ষিণ আফ্রিকায় এই ভেরিয়েন্ট শনাক্ত হওয়ার পরই দেশটির পক্ষ থেকে এসব তথ্য জানানো হয়েছিল। তারা বলেছিল, এটি আরও ছড়াতে পারে।
ওমিক্রন নিয়ে অনেক প্রশ্ন উঠেছে। কিন্তু এসব প্রশ্নের উত্তর খুব কমই জানা গেছে।
এই ভেরিয়েন্ট প্রসঙ্গে আফ্রিকার সেন্টার ফর এপিডেমিক রেসপন্স অ্যান্ড ইনোভেশনের পরিচালক টুলিও ডি অলিভেরিয়া বলেন, অস্বাভাবিকভাবে এটি রূপান্তরিত হয়েছে এবং অন্য যেকোনো ভেরিয়েন্ট থেকে এটি আলাদা। ডি অলিভেরিয়া বলেন, সব মিলে ৫০ বারের মতো জিন বিন্যাস পরিবর্তিত হয়ে নতুন ওমিক্রন ধরন রূপ পেয়েছে।
ক্ষোভ দক্ষিণ আফ্রিকার
যুক্তরাজ্য এখন পর্যন্ত দক্ষিণ আফ্রিকা, নামিবিয়া, জিম্বাবুয়ে, বতসোয়ানা, লেসোথো ও এসওয়াতিনির নাগরিকদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা বলছেন, দক্ষিণ আফ্রিকা, বতসোয়ানা, জিম্বাবুয়ে, নামিবিয়া, লেসোথো, এসওয়াতিনি, মোজাম্বিক ও মালাবির নাগরিকেরা সে দেশে ঢুকতে পারবেন না। ইউরোপিয়ান ইউনিয়নও এ দেশগুলোর নাগরিকদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।
ইউরোপের ২৭টি দেশের জোট ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ইতিমধ্যে সাময়িকভাবে আফ্রিকার দক্ষিণাঞ্চলের কিছু দেশে ফ্লাইট নিষিদ্ধ করেছে। অস্ট্রেলিয়ার পক্ষ থেকে ৯টি দেশের নাগরিকদের ১৪ দিনের নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া কানাডা, ইউরোপ ও আরব দেশগুলো দক্ষিণ আফ্রিকার ওপর ভ্রমণ বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। জাপান, ভারত, ইরান, ব্রাজিল, থাইল্যান্ড বিভিন্ন পদক্ষেপের ঘোষণা দিয়েছে। এএফপি জানায়, এদিকে তড়িঘড়ি করে একের পর এক দেশের কঠোর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞাকে ‘অন্যায্য’ ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মানদণ্ডের বিরোধী বলে আখ্যায়িত করেছে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
শুক্রবার সংবাদ সম্মেলনে এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন দক্ষিণ আফ্রিকার স্বাস্থ্যমন্ত্রী জো ফালা। কিছু নেতা ‘বলির পাঁঠা’ খুঁজছিলেন বলে অভিযোগও তুলেছেন তিনি। তবে জো ফালা কারও নাম নেননি। নিষেধাজ্ঞার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘আমাদের মনে হচ্ছে কিছু কিছু প্রতিক্রিয়া একেবারে অযৌক্তিক।’