সুদানে ৫ জুনের ভয়াবহ হামলার পেছনে কারা
সুদানের ৪০ বছর বয়সী কৃষক আলী ইব্রাহিমের জীবনে দুঃস্বপ্ন নেমে এসেছিল গত ৫ জুন শেষ বিকেলে। এ সময় আকস্মিকভাবে তাঁদের গ্রামের সর্বত্র ভারী অস্ত্রের বিরামহীন ঝনঝনানি শুরু হয়েছিল।
সেই বিকেলের কথা স্মরণ করে ইব্রাহিম বলেন, ‘তরুণ বয়স থেকে জীবনে আমি এমন গোলাবর্ষণের ঘটনা আর দেখিনি। সেদিন চার ঘণ্টা বোমাবর্ষণ চলেছিল। এতে ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। চারদিকে শিশুদের কান্না। নারী ও বয়স্করা ছিলেন অসহায়। তাঁরা পালানোর উপায় খুঁজে পাচ্ছিলেন না।’
স্থানীয় প্রতিরোধ কমিটির তথ্যমতে, ওই দিনের হামলায় সুদানের ওয়াদ আল-নুরাহ গ্রামে অন্তত ১০০ বেসামরিক মানুষ মারা গিয়েছিল।
গ্রামবাসী নিরস্ত্র ছিলেন জানিয়ে ইব্রাহিম বলেন, ‘আমরা সাধারণ কৃষক। আমরা কখনো অস্ত্র বহন করিনি। আমাদের কোনো শত্রুও নেই। আমরা জীবন বাঁচাতে চাওয়া কিছু নাগরিক মাত্র।’
ওই দিনের হামলা থেকে বেঁচে গিয়েছিলেন এমন কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলেছে বিবিসি। এসব ব্যক্তির অভিযোগ, ৫ জুন দেশটির আধা সামরিক গোষ্ঠী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ) তাঁদের গ্রামে হামলা চালিয়েছিল। নিজেদের সেনাবাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধরত আরএসএফ সেই দিন দুই দফায় ওয়াদ আল-নুরাহ গ্রামে হামলা চালিয়ে সবকিছু তছনছ করে দিয়েছিল। এতে বেশ কয়েকজনের হতাহতের ঘটনা ঘটে।
২০২৩ সালের এপ্রিলে আরএসএফ ও সেনাবাহিনীর মধ্যে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর সুদানে সাধারণ মানুষ হত্যার যেসব ভয়াবহ ঘটনা ঘটেছে, ৫ জুনের হত্যাকাণ্ড সেগুলোর মধ্যে অন্যতম।
ওয়াদ আল-নুরাহ গ্রামে সেদিনের হামলা থেকে প্রাণে বেঁচে যাওয়া যে কয়েকজন ব্যক্তির সঙ্গে বিবিসি কথা বলেছে, তাঁরা বর্তমানে আল মানাগিল সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। অন্য হাসপাতাল থেকে তাঁদের সেখানে পাঠানো হয়েছিল। তাঁদের দেওয়া কিছু ভিডিও বিশ্লেষণ করে দেখেছেন প্রতিবেদকেরা।
আল মানাগিল সরকারি হাসপাতাল ওয়াদ আল-নুরাহ গ্রাম থেকে প্রায় ৮০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। ৫ জুন হামলার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই হাসপাতালটিতে অনেককে আনা হয়েছিল। তাঁদের ভাষ্যমতে, আরএসএফ সদস্যরা তাঁদের গ্রাম ত্যাগে বাধা দিয়েছিল। তাঁদের অধিকাংশ গাড়িই লুট করে নিয়েছিল।
আল মানাগিল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আহত এক ব্যক্তি বলেন, বোমাবর্ষণের ‘কয়েক ঘণ্টার সন্ত্রাসের’ পর গোলাগুলিতে আহতদের হাসপাতালে পাঠাতে ও নিহতদের কবর দিতে প্রাণপণ চেষ্টা শুরু হয়েছিল। কিন্তু পরের দিন ভোরে আরএসএফ গ্রামটিতে দ্বিতীয় দফায় বড় আকারে হামলা চালায়।
চিকিৎসাধীন এই ব্যক্তি আরও বলেন, ‘তারা ঘরে ঢুকে আমাকে ও আমার ভাইবোনকে পিটিয়েছিল। জানতে চেয়েছিল, সোনা কোথায় রেখেছ? তাদের আচরণে আমার ছোট বোন ভয় পেয়ে গিয়েছিল। সে আমার মাকে তাদের সোনা দিয়ে দিতে অনুরোধ করেছিল।’
এই রোগীর কথাবার্তা আক্রান্ত হয়ে আরও যারা বেঁচে গিয়েছিল, তাঁদের কথার সঙ্গে মিলে যায়। তাঁরা সবাই আরএসএফের হামলার কথা নিশ্চিত করেছেন। তাঁরা জানান, আরএসএফ তাঁদের গ্রামে তিন দিক থেকে হামলা চালিয়েছিল, ঘরে ঢুকেছিল ও বেসামরিক মানুষ হত্যা করেছিল। সোনা, গাড়ি ও সংরক্ষিত কৃষিপণ্যসহ মূল্যবান জিনিসপত্র লুট করেছিল।