মরুর বুকে সংবাদের ফেরিওয়ালা
কাঁধে ঝোলানো ব্যাগে কফির ফ্লাস্ক। সঙ্গে কয়েকটি সেদ্ধ ডিম। সূর্যের উত্তাপে গরম বালু থেকে খালি পা বাঁচাতে একটি তোয়ালে। গন্তব্য দক্ষিণ আফ্রিকার কারু অঞ্চলের মরুভূমি। ওই এলাকায় ফ্রান্স হুগো (৯০) প্রতি বৃহস্পতিবার পত্রিকা বিলি করেন।
এক বা দুই দিন ধরে নয়, প্রায় চার দশক ধরে এই কাজ করে আসছেন ফ্রান্স হুগো। আর পত্রিকাটি বিলি করতে গিয়ে প্রতি সপ্তাহে আসা–যাওয়ায় ১ হাজার ২০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হয় তাঁকে।
দক্ষিণ আফ্রিকার কেপটাউনে ফ্রান্সের জন্ম। পুরো নাম চার্ল ফ্রাঁসোয়া হুগো। ১৯৩২ সালে জন্ম নেওয়া সংবাদের এই ফেরিওয়ালা ফ্রান্স নামেই পরিচিত। তিনি তিনটি পত্রিকার মালিক ও সম্পাদক। তিনটিই সাপ্তাহিক। এগুলো হচ্ছে—দ্য মেসেঞ্জার, দি নুয়র্দওয়েস্টার ও দি ওবারনুস। এর মধ্যে দ্য মেসেঞ্জার–এর যাত্রা শুরু ১৮৭৫ সালে। তখন এটির নাম ছিল ভিক্টোরিয়া ওয়েস্ট মেসেঞ্জার। আর বাকি দুটি পত্রিকার যাত্রা শুরু ১৯০০ সালের দিকে। তিনটি পত্রিকাই ছাপা হয় আফ্রিকান ভাষায়। তবে মাঝেমধ্যে ইংরেজিতেও খবর প্রকাশ করা হয়ে থাকে এসব পত্রিকায়। প্রতিটি পত্রিকার পৃষ্ঠাসংখ্যা আট।
প্রতি সপ্তাহে এই পত্রিকাগুলো ছাপানোর পর একটি গাড়িতে চেপে প্রত্যন্ত অঞ্চলের দিকে রওনা হন ফ্রান্স। এরপর কারুর প্রত্যন্ত গ্রাম ও শহরে বিলি করে ফিরে আসেন তিনি।
কারু অঞ্চলের কালভিনিয়া জেলা শহরের থাকেন ফ্রান্স। পত্রিকা ছাপানোর পর তাই রাত দেড়টার দিকে রওনা হন। ফিরে আসেন পরদিন সন্ধ্যার পর। নিজেকে তিনি ‘পম্পডঙ্কি’র মতো মনে করেন। মাটির অনেক গভীর থেকে পানি তুলে আনতে এক ধরনের পাম্প ব্যবহার করা হয়। একে বলা হয় ‘ডঙ্কি পাম্প’। ফ্রান্স বলেন, ‘আমি প্রতি সপ্তাহের বৃহস্পতিবার এই কাজ করে থাকি। কখনো এই কাজ ছাড়িনি। আমি হয়তো তখনই থেমে যাব, যখন আর আমার শরীর চলবে না।’
ফ্রান্স এ তিনটি পত্রিকা দিয়ে সাংবাদিকতা শুরু করেছিলেন, এমনটা নয়। তিনি কেপটাউনে গণমাধ্যমে কাজ করতেন। এরপর একসময় নামিবিয়ায় চলে যান। সে দেশ থেকে ফিরে চলে যান দক্ষিণ আফ্রিকার কারুর অঞ্চলে।
এ প্রসঙ্গে ফ্রান্স বলেন, ‘আমি ওই সব জায়গায় আর চাপ নিতে পারছিলাম না। তাই, আমি কারুতে চলে আসি।’ তিনি আরও বলেন, ‘এখানে আসার পর আমি খানিকটা ধাতস্থ হই। তখন এক প্রেসের মালিক আমার কাছে এসে এসব পত্রিকা কিনে নিতে বলেন।’ এরপর থেকে মরুর দেশে পত্রিকা প্রকাশ ও বিলির কাজ শুরু হয় তাঁর। এ কাজে তাঁকে স্ত্রীসহ তিন সহকারী সহায়তা করেন।