বিক্ষোভের মুখে কর বৃদ্ধির পরিকল্পনা বাতিলের ঘোষণা কেনিয়ার প্রেসিডেন্টের
জনগণের বিক্ষোভের মুখে কেনিয়ায় কর বৃদ্ধির পরিকল্পনা বাতিলের ঘোষণা দিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম রুটো। বুধবার জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে পার্লামেন্টে পাস হওয়া এ–সংক্রান্ত বিলে সই করবেন না বলে জানিয়েছেন তিনি।
গতকাল মঙ্গলবার পার্লামেন্টে ওই বিল পাস হয়। এর প্রতিবাদে দেশটির পার্লামেন্টের সামনে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়। একপর্যায়ে পার্লামেন্ট ভবনে আগুন দেন বিক্ষোভকারীরা। এ সময় পুলিশ ও সেনাসদস্যদের গুলিতে প্রাণ হারান প্রায় দুই ডজন বিক্ষোভকারী।
বিক্ষোভকারী তরুণদের সঙ্গে আলোচনায় বসবেন জানিয়ে প্রেসিডেন্ট রুটো বলেন, ‘আমি কেনিয়ার জনগণের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনছি। আমি স্বীকার করছি, তাঁরা জোর দিয়ে বলছেন আর্থিক বিল ২০২৪ নিয়ে তাঁদের করার কিছু নেই। এ কারণে বিলটিতে আমি স্বাক্ষর করব না। পরবর্তী সময়ে এটি প্রত্যাহার করা হবে।’
রাষ্ট্রীয় অর্থায়নে পরিচালিত কেনিয়ার জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের (কেএনএইচআরসি) তথ্যমতে, গতকালের বিক্ষোভে অন্তত ২২ জন নিহত হয়েছেন। এ দিন বিক্ষোভের নেতৃত্ব দিয়েছেন তরুণেরা। ২০২২ সালে রুটো প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর কেনিয়ায় এটাই সবচেয়ে বড় বিক্ষোভ।
কর বৃদ্ধির পরিকল্পনার বিরুদ্ধে দেশব্যাপী বিক্ষোভ সত্ত্বেও গতকাল কেনিয়ার পার্লামেন্টে কর বৃদ্ধি-সংক্রান্ত বিলটি পাস হয়। এ অবস্থায় কিছু বিক্ষোভকারী পার্লামেন্টে ঢুকে ভাঙচুর চালান এবং পার্লামেন্ট ভবনের একাংশে আগুন ধরিয়ে দেন। এ সময় আইনসভার কর্তৃত্বের প্রতীক ‘গদাটি’ চুরি হয়ে যায়।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে প্রথম দিকে কঠোর হাতে বিক্ষোভ দমনের মনোভাব দেখান রুটো। ‘সহিংসতা ও নৈরাজ্য’ সহ্য করা হবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়ে সেনাবাহিনী মোতায়েনের নির্দেশ দেন তিনি।
কিন্তু বিক্ষোভকারী নিহতের ঘটনায় সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ায় বুধবার অবস্থান বদলাতে বাধ্য হন তিনি।
কেনিয়ার ‘ল সোসাইটি’ আন্তর্জাতিক অপরাধ তদন্তকারীদের প্রতি আহ্বান জানান, তাঁরা যেন ন্যায়বিচার প্রার্থী পরিবারগুলোকে সহায়তা দেন। সোসাইটির দাবি, সংসদে বিক্ষোভকারীদের দমনে সেনাবাহিনীর সদস্যরাও অংশ নিয়েছেন।
এদিকে কেনিয়ায় গতকাল সাংবাদিক, স্বাস্থ্যকর্মীসহ সাধারণ মানুষ হতাহত হওয়ার ঘটনায় গভীর দুঃখ প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। তিনি কেনিয়ার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলোকে সংযম দেখাতে ও বিক্ষোভকারীদের শান্তিপূর্ণ থাকার আহ্বান জানান।
গতকাল যে বিলটি পাস হয়েছে, সেটা নিয়ে গত সপ্তাহ বিক্ষোভ হয়েছিল। বিক্ষোভের মুখে বিলটির বেশি বিতর্কিত কিছু অংশ বাদ দেওয়া হয়। কিন্তু বিক্ষোভকারীরা পুরো বিল বাতিলের দাবি জানান। এখন প্রেসিডেন্ট রুটোকে পুরো বিল বাতিলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
বিলে রুটি, রান্নার তেল, মোবাইলে আর্থিক লেনদেন, বিশেষায়িত হাসপাতাল ও গাড়ির ওপর কর আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছিল। এসব কর জীবনযাত্রার ব্যয় আরও বাড়াবে উল্লেখ করে তার প্রতিবাদে রাজপথে নেমেছিল জনগণ।