মরক্কোয় ভূমিকম্প: ‘গ্রামটির বাসিন্দারা হয় হাসপাতালে, নয়তো মৃত’
মরক্কোতে শুক্রবার শক্তিশালী ভূমিকম্পে কয়েকটি গ্রাম তছনছ হয়ে গেছে। তেমনই একটি গ্রাম তাফেগাঘতে। গ্রামটির পরিস্থিতি দেখতে বিবিসির প্রতিনিধিরা সেখানে গিয়েছিলেন। শুরুতে পাহাড়ি রাস্তা বেয়ে গ্রামের দিকে যাওয়ার সময় পথে যার সঙ্গেই দেখা হচ্ছিল, তাঁর কাছ থেকেই ভূমিকম্প পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়েছে। এসব প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ‘গ্রামটির বাসিন্দারা হয় হাসপাতালে, নয়তো মৃত।’
গ্রামে পৌঁছেই সে কথার আলামত মিলল। চারপাশে ধ্বংসাবশেষ দেখে বোঝা যায়, কেন এখানে কেউই অক্ষত থাকতে পারেননি।
গ্রামের বাসিন্দাদের ঐতিহ্যবাহী ঘরবাড়িগুলো ইট ও পাথর দিয়ে এমনভাবে তৈরি যে এগুলো শক্তিশালী মাত্রার ভূমিকম্পে টিকে থাকার উপযোগী নয়।
ভূমিকম্পে গ্রামটির ২০০ বাসিন্দার মধ্যে ৯০ জনের মৃত্যু হয়েছে। আরও অনেকে নিখোঁজ।
হাসান নামের স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, তাঁর চাচা এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়ে আছেন। তাঁকে বের করতে পারার মতো কোনো আশা দেখছেন না।
স্থানীয় এই বাসিন্দা আরও বলেন, তাঁর চাচাকে বের করার মতো যেসব সরঞ্জামাদি প্রয়োজন, সেগুলো এই গ্রামে নেই। বাইরে থেকেও কোনো বিশেষজ্ঞ সেখানে পৌঁছাননি।
হাসান মনে করেন, জনগণকে সহযোগিতা দেওয়ার ক্ষেত্রে সরকারের দেরি হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আল্লাহর ইচ্ছাতেই এসব হয়েছে, সবকিছুর জন্য আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করছি। তবে আমাদের এখন সরকারের সহযোগিতা প্রয়োজন। তারা দেরি করে ফেলেছে। জনগণকে সহযোগিতা দিতে আসতে তারা দেরি করছে।’
এই ব্যক্তি আরও মনে করেন, মরক্কো কর্তৃপক্ষের উচিত আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সব সহযোগিতার প্রস্তাব গ্রহণ করা।
তাফেগাঘতের আরেকটি অংশে গিয়ে দেখা গেল, কয়েকজন মিলে এক ব্যক্তিকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। ওই ব্যক্তির নাম আবদু রহমান। ভূমিকম্পে তিনি তাঁর স্ত্রী এবং তিন ছেলেকে হারিয়েছেন।
আবদু রহমান হাতের ইশারায় একটি ধ্বংসস্তূপ দেখান। বলেন, ‘ওখানে আমাদের বাড়ি ছিল। আপনি ওখানে সাদা কম্বল আর আসবাবও দেখতে পাবেন। এখন সবকিছুই শেষ হয়ে গেছে।’
আবদু রহমান বলেন, তিনি একটি পেট্রল স্টেশনে কাজ করেন। এর অবস্থান বাড়ি থেকে ৩ কিলোমিটার দূরে। ভূমিকম্পের সময় তিনি পেট্রল স্টেশনে ছিলেন। পরে তিনি বাড়িতে ছুটে এসে স্ত্রী-সন্তানকে ডাকতে থাকেন। তবে তাদের কাছ থেকে আর সাড়া পাওয়া যায়নি।
আবদু রহমান বলেন, ‘গতকাল তাদের কবর দিয়েছি। আমরা তাদের সবাইকে একসঙ্গে জড়িয়ে থাকা অবস্থায় পেয়েছি।’
গ্রামের সঙ্গে বাইরের জায়গাগুলোর সংযোগ সৃষ্টিকারী পাহাড়ি রাস্তার কাছে একটি বিশাল তাঁবু খাটানো। সেখানে বেশ কয়েকটি পরিবার বসে অপেক্ষা করছে।
চারপাশ থেকে মানুষের কান্নার শব্দ ভেসে আসছিল।
এর মধ্যেই একটি ধ্বংসস্তূপ থেকে খলিফা নামে ১০ বছর বয়সী একটি মেয়েশিশুর মৃতদেহ বের করে আনা হয়। সেখানে তখন শোকের মাতম ওঠে। এক নারী অচেতন হয়ে পড়েন। আরেকজন চেয়ারে বসে আহাজারি করছিলেন।
এটি এখন আর মরক্কোর কোনো একটি গ্রামের দৃশ্য নয়। ভূমিকম্পের পর অ্যাটলাস মাউন্টেন অঞ্চলের কয়েকটি গ্রামেই চলছে এমন আহাজারি।