কেনিয়ার প্রত্যন্ত গ্রামে আকাশ থেকে পড়ল ‘রহস্যময়’ গোলাকার বস্তু
আফ্রিকার দেশ কেনিয়া। ঘটনা গত সোমবার দুপুরের। দেশটির দক্ষিণাঞ্চলে মুকুকু নামের এক প্রত্যন্ত গ্রামে আকাশ থেকে পড়ে গোলাকার এক ‘রহস্যময়’ বস্তু। তখন সেটি খুবই উত্তপ্ত অবস্থায় ছিল। গ্রামবাসীর বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে কেনিয়ার জাতীয় সম্প্রচারমাধ্যম।
দ্রুতই ওই বস্তু নিয়ে অনুসন্ধান শুরু করে কেনিয়ার মহাকাশ সংস্থা কেনিয়া স্পেস এজেন্সি (কেএসএ)। গত বুধবার এক বিবৃতিতে তারা জানিয়েছে, ওই বস্তুতে পৃথিবীর কক্ষপথে থাকা কোনো কৃত্রিম উপগ্রহ বা মানুষের তৈরি যন্ত্রের ধ্বংসাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়েছে। ধাতব বস্তুটি প্রায় ৮ ফুট প্রস্থ, ওজন ৫০০ কেজি।
বস্তুটি পড়েছিল দক্ষিণ কেনিয়ার মাকুয়েনি এলাকার মুকুকু গ্রামে। কেএসএর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, বস্তুটি কোনো রকেট থেকে আলাদা হয়ে যাওয়া চাকা। এ ধরনের চাকাগুলো সাধারণত সাগরে পড়ে বা পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশের আগে পুড়ে ধ্বংস হয়ে যায়। কেনিয়ায় পড়া এই চাকা নিয়ে অনুসন্ধান চালানো হচ্ছে।
মুকুকু গ্রামের বাসিন্দা জোসেফ মুতুয়া কেনিয়ার টেলিভিশন চ্যানেল এনটিভিকে বলেন, ‘আমি আমার গরুর দেখভাল করছিলাম। তখন বিকট আওয়াজ শুনতে পাই। চারপাশে তাকালাম। মেঘের মধ্যেও কোনো ধোঁয়া দেখতে পেলাম না। কোনো গাড়ি দুর্ঘটনা ঘটেছে কি না, তা দেখতে সড়কে ধারেও গিয়েছিলাম। তবে এমন কিছুই ঘটেনি।’
এরপর মুতুয়া ও তাঁর প্রতিবেশীরা আকাশের দিকে তাকান। দেখতে পান, বিশাল একটি গোলাকার বস্তু ধীরে ধীরে নিচের দিকে ধেয়ে আসছে। সেটি দেখতে অনেকটা গাড়ির স্টিয়ারিংয়ের মতো। ভুপৃষ্ঠে ঝোপঝাড়ের ওপর পড়ার সময় সেটি উত্তপ্ত লাল হয়ে ছিল। পরে ধীরে ধীরে ঠান্ডা হয়ে যায়।
মুতুয়া বলেন, ‘ওই চাকা যদি কোনো বাড়ির ওপর পড়ত, তাহলে বিপর্যয় দেখা দিত।’
অস্ট্রেলিয়ার সুইনবর্ন ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির অ্যাস্ট্রোফিজিসিস্ট সারা ওয়েব ও তাঁর সহকর্মীদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থার গত বছরের হিসাব অনুযায়ী, পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের নিচের দিকে ১৪ হাজার টনের বেশি নানা ধরনের বস্তু রয়েছে। সেগুলোর এক–তৃতীয়াংশ কৃত্রিম উপগ্রহসহ মানুষের তৈরি বিভিন্ন জিনিসের ধ্বংসাবশেষ।
ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থার তথ্যমতে, প্রতিবছর প্রায় ১১০টি মহাকাশযান পৃথিবী ছেড়ে যাচ্ছে। আর বছরে অন্তত ১০টি কৃত্রিম উপগ্রহ ও অন্যান্য বস্তু ভেঙে খণ্ডাংশে পরিণত হচ্ছে। এই খণ্ডাংশগুলোর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। ফলে কেনিয়ার বস্তুটির মতো আরও বস্তু ভবিষ্যতে পৃথিবীর বুকে আছড়ে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে।