লিবিয়ায় নিখোঁজ ব্যক্তিদের হন্যে হয়ে খুঁজে বেড়াচ্ছেন স্বজনেরা
লিবিয়ার দারনা শহরে ঘূর্ণিঝড়–পরবর্তী বন্যায় নিখোঁজ স্বজনদের মরিয়া হয়ে খুঁজে বেড়াচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। উদ্ধারকারীরাও একের পর এক মরদেহ উদ্ধার করে যাচ্ছেন। তাঁরা বলছেন, লাশগুলো রাখার জন্য পর্যাপ্ত বডিব্যাগ প্রয়োজন। এদিকে সৌদি টেলিভিশন চ্যানেল আল আরাবিয়াকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে দারনার মেয়র আবদুলমেনাম আল–ঘাইথি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, মৃতের সংখ্যা ২০ হাজারে পৌঁছাতে পারে।
গত রোববার লিবিয়ার উত্তর উপকূলে ঘূর্ণিঝড় দানিয়েল আঘাত হানার পর একটি বাঁধ ভেঙে ভয়াবহ বন্যা দেখা দেয়। এতে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এক লাখ বাসিন্দার বন্দরনগরী দারনা। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ বলেছে, দারনা শহরে প্রাণহানি হয়েছে সবচেয়ে বেশি।
৫২ বছর বয়সী গাড়িচালক উসামা আল হুসাদি ঘটনার পর থেকে দারনায় মরিয়া হয়ে স্ত্রী এবং পাঁচ সন্তানকে খুঁজে বেড়াচ্ছেন। বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে তিনি বলেন, ‘হেঁটে হেঁটে আমি তাদের খুঁজে বেড়াচ্ছি। আমি হাসপাতালগুলোতে খুঁজেছি, স্কুলগুলোতে খুঁজেছি, কিন্তু কোথাও পাইনি।’
ঘূর্ণিঝড়ের রাতে হুসাদি কাজের জন্য বাইরে ছিলেন। রয়টার্সের সঙ্গে কথা বলতে বলতেই স্ত্রীর ফোন নম্বরে আবারও ফোন দেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু সেটি বন্ধ। হুসাদি বলেন, ‘আমি আমার বাবার পরিবারের অন্তত ৫০ সদস্যকে হারিয়েছি। তারা কেউ নিখোঁজ, কেউ মারা গেছে।’
লিবিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট তারেক আল–খাররাজ গতকাল বুধবার বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, ভূমধ্যসাগরের উপকূলবর্তী দারনা শহরে এখন পর্যন্ত ৩ হাজার ৮৪০ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ৩ হাজার ১৯০ জনকে ইতিমধ্যে সমাহিত করা হয়েছে। মৃতদের মধ্যে কমপক্ষে ৪০০ জন বিদেশি নাগরিক। তাঁদের বেশির ভাগই সুদান ও মিসরের।
লিবিয়ার পূর্বাঞ্চলে নিয়ন্ত্রণে থাকা প্রশাসনের বেসামরিক বিমান চলাচল মন্ত্রী হিশেম আবু কিওয়াত রয়টার্সকে বলেন, এখন পর্যন্ত এ ঘটনায় ৫ হাজার ৩০০ জনের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এ সংখ্যা ক্রমাগত বাড়তে পারে। এমনকি তা দ্বিগুণও হতে পারে।
দারনার মেয়র আবদুলমেনাম আল-ঘাইথি আল আরাবিয়া টেলিভিশনকে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, বন্যায় দারনা নগরীর কতগুলো জেলায় ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তার ওপর ভিত্তি করে মৃতের সংখ্যা ১৮ থেকে ২০ হাজারে পৌঁছাতে পারে।
ত্রিপোলিতে সাংবাদিক মৌতাজ আলীকে দারনার বাসিন্দা মাহমুদ আবদুলকারিম বলেন, বন্যায় তিনি তাঁর মা ও ভাইকে হারিয়েছেন। বাঁধ ভেঙে যাওয়ার পর তাঁরা সময়মতো বাড়ি থেকে নিরাপদে সরেননি। তাঁর মা বাড়ি থেকে যেতে চাইছিলেন না। তিনি ধারণাই করতে পারেননি যে পরিস্থিতি এতটা ভয়াবহ রূপ নেবে। শেষ পর্যন্ত তাঁর মা এবং ভাই যখন বাড়ি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিলেন, ততক্ষণে দেরি হয়ে গেছে। রাস্তায় বের হতে না হতেই বন্যার পানি এসে তাঁদের ভাসিয়ে নিয়ে যায়।
গত মঙ্গলবার কোনো রকমে দারনা শহর থেকে বের হয়ে এসেছেন মাবরুকা এলমেসমারি নামের এক সাংবাদিক। আল–জাজিরাকে তিনি বলেন, শহরটি বড় ধরনের বিপর্যয়ের মধ্যে আছে। সেখানে কোনো পানি নেই, বিদ্যুৎ নেই, পেট্রল নেই।
লিবিয়ার সরকারি হিসাব অনুযায়ী, বন্যায় নিখোঁজ ব্যক্তির সংখ্যা ১০ হাজার।
জাতিসংঘের ত্রাণসংস্থা ওচা বলছে, নিখোঁজ ব্যক্তির সংখ্যা কমপক্ষে পাঁচ হাজার।
দারনার মেয়র আল–ঘাইথি বলেন, লিবিয়ার স্থানীয় উদ্ধারকারীদের সহযোগিতা করতে মিসর, তিউনিসিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত, তুরস্ক এবং কাতার থেকে উদ্ধারকর্মী এসে পৌঁছেছেন।