আবারও জয় পেলেন জ্যাকব জুমা
অনেক পোড় খাওয়া দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট জ্যাকব জুমার মধ্যে যে এখনো জয়ের ধারা বহমান রয়েছে, তা তিনি প্রমাণ করে চলেছেন। সম্প্রতি আদালতের লড়াইয়ে তৃতীয় দফায় জয় পেয়েছেন তিনি। গত মাসে ৮২ বছর বয়সী এই লড়াকু নেতা আগামী মে মাসের শেষের দিকে সাধারণ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা থেকে তাঁকে বা তাঁর নতুন দলকে সরানোর চেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়েছেন।
জ্যাকব জুমার সর্বশেষ জয় এসেছে গত সোমবার ডারবান হাইকোর্টে। ওই আদালতে তাঁকে যেতে বাধ্য করেছিল ক্ষমতাসীন আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেস (এএনসি) পার্টি।
জ্যাকব জুমা এএনসির হয়ে ২০০৯ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট ছিলেন। দুর্নীতির অভিযোগ ও মন্থর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে তাঁকে পদ থেকে সরে যেতে হয়। এ বছরের জানুয়ারিতে জুমাকে দলীয় সদস্যপদ থেকে অব্যাহতি দেয় এএনসি।
নতুন দল গঠনের পরিপ্রেক্ষিতে তাঁর বিরুদ্ধে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। জুমার ‘জাতির বর্শা’ নামে নতুন ‘বিদ্রোহী’ দল উমখুনটো উই সিজ (এমকে) যাতে নির্বাচনে আসতে না পারে, তার চেষ্টা করেছিল এএনসি। এমকের নাম ও লোগো নিয়ে আপত্তি জানায় এএনসি। দলটির দাবি, এমকের নাম ও লোগো ট্রেডমার্ক আইন লঙ্ঘন করেছে। এতে ভোটারদের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হবে। কিন্তু এএনসির যুক্তিতে সম্মত হননি বিচারক।
সাউথ আফ্রিকান মেইল অ্যান্ড গার্ডিয়ান পত্রিকার কোয়াজুলু-নাতাল সংবাদদাতা প্যাডি হারপার বিবিসিকে বলেন, ‘আদালতে জয়ের ফলে এমকে পার্টি রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবে। এ মামলায় হেরে গেলে এমকে পার্টিকে নতুন করে সবকিছু শুরু করতে হতো। এতে তারা অর্থনৈতিকভাবে অনেক বিপর্যস্ত হয়ে পড়ত।’
প্যাডি আরও বলেন, গত সপ্তাহে এমকে পার্টি অনলাইনে তাদের ইশতেহার প্রকাশ করেছে। দুই পাতার ওই ইশতেহারে শিরোনাম বড় থাকলেও বিস্তারিতভাবে খুব অল্পই লেখা রয়েছে। এ থেকে তাদের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি অনুমান করা যায়। তাই কোনো প্রচার ভিন্ন লোগো দিয়ে শুরু করতে হলে তাদের অনেকটাই পেছনে পড়ে যেতে হতো।
হাইকোর্টের আদেশের পর এমকের জন্য এখন নির্বাচনী প্রচার চালানো সহজ হবে। সরকারি দল থেকে এ বিষয়ে আপিল করার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। তারপরও এমকে পার্টির সদস্যরা একে তাঁদের বিজয় হিসেবে দেখছেন।
এএনসির সাবেক এক নেতা বলেছেন, সরকারি দল দেখেছে জুমার এখনো দারুণ গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতির যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে তাতে তাঁর জনপ্রিয়তায় কোনো প্রভাব পড়েনি।
হাইকোর্টের বিচারক মাহেন্দ্র চেট্টি বলেন, এএনসি আইনি প্রক্রিয়া অনেক দেরিতে শুরু করেছে। এ মামলায় তাঁদের নির্বাচনী আদালতে যাওয়ার প্রয়োজন ছিল। এমকে গত সেপ্টেম্বরে দল হিসেবে নিবন্ধন করে। জুমা যখন গত ডিসেম্বরে এর সমর্থন শুরু করেন, তখন এএনসি একে হুমকি হিসেবে দেখে।
এমকের বিরুদ্ধে এটি এএনসির দ্বিতীয় পরাজয়। এর আগে গত মার্চে এমকের নিবন্ধন নিয়ে একটি মামলায় হেরেছে এএনসি।
প্যাডি হারপার বলেন, আদালতের মাধ্যমে এমকে পার্টিকে মুছে ফেলার জন্য এএনসির চেষ্টা পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। এর আগে ইলেকটোরাল আদালত জুমার প্রার্থিতা নিয়ে নির্বাচন কমিশনের নিষিদ্ধের আবেদন প্রত্যাখ্যান করেন।