মরক্কোর ভূমিকম্প: ‘২০ সেকেন্ডের কম্পনের’ ভয়ংকর অভিজ্ঞতা জানালেন প্রত্যক্ষদর্শীরা

মরক্কোতে ভূমিকম্পের পরাঘাতের আশঙ্কায় অনেকে খোলা আকাশের নিচে অবস্থান করছেন, কাসাব্লাঙ্কা এলাকা থেকে ছবিটি তোলা
ছবি: রয়টার্স

মরক্কোতে গতকাল শুক্রবার রাতে অনুভূত ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থলের খুব কাছে মারাকেশ শহরের অবস্থান। স্থানীয় বাসিন্দারা বলেছেন, ভূমিকম্পের কারণে প্রাচীন এ শহরের কিছু ভবন ভেঙে পড়েছে। স্থানীয় টেলিভিশন চ্যানেলে প্রচারিত ফুটেজে দেখা গেছে, মসজিদের একটি মিনার ভেঙে পড়েছে। কিছু ভাঙাচোরা গাড়ির ওপর এর ধ্বংসাবশেষ পড়ে থাকতে দেখা গেছে।

পার্বত্য গ্রাম আসনির অবস্থানও কেন্দ্রস্থলের কাছে। সেখানকার বাসিন্দা মুন্তাসির ইত্রি বলেন, ‘বেশির ভাগ ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমাদের প্রতিবেশীরা ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়েছে। হাতের কাছে যা পাওয়া যাচ্ছে, তা দিয়েই স্থানীয় লোকজন আটকে পড়া লোকজনকে উদ্ধারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।’

আরেকটু পশ্চিমে তারৌদান্ত অঞ্চলের কাছের একটি এলাকায় থাকেন শিক্ষক হামিদ আফকার।

ভূমিকম্পের সময় তিনি তাঁর ঘর থেকে বাইরে বের হয়ে আসেন। হামিদ বলেন, ‘২০ সেকেন্ডের মতো কম্পন হয়েছে। দরজাগুলো আপনা–আপনি খুলছিল আর বন্ধ হচ্ছিল। আমি দ্রুত তৃতীয় তলা থেকে নিচে নেমে আসি।’

গতকাল মরক্কোর স্থানীয় সময় রাত ১১টার কিছু পরেই ভূমিকম্পটি অনুভূত হয়। মরক্কোর ভূতাত্ত্বিক সংস্থা বলছে, হাই এটলাসের ইঘিল এলাকায় ভূমিকম্পটির উৎপত্তি। তারা বলছে, ভূমিকম্পটির মাত্রা ছিল ৭ দশমিক ২। তবে মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা বলেছে, ভূমিকম্পের মাত্রা ৬ দশমিক ৮।

ইঘিল একটি পার্বত্য এলাকা। এর অবস্থান মারাকেশ থেকে প্রায় ৭০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে।

মারাকেশের ক্ষয়ক্ষতি

প্রাচীন শহর মারাকেশের ঘরবাড়িগুলো খুব গাদাগাদি করে তৈরি। ভূমিকম্পে কিছু ঘরবাড়ি ভেঙে পড়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা ইদ ওয়াজিজ হাসান বলেন, ধ্বংসাবশেষ সরানোর মতো ভারী সরঞ্জামাদি মানুষের কাছে নেই। তাঁরা খালি হাতেই ধ্বংসাবশেষ সরানোর চেষ্টা করছেন।

মারাকেশের আরেক বাসিন্দা ব্রাহিম হিম্মি বলেন, তিনি শহরটিতে বেশ কিছু অ্যাম্বুলেন্স আসা-যাওয়া করতে দেখেছেন। অনেক ভবনে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। পরাঘাতের ভয়ে মানুষ আতঙ্কে বাইরে দিন কাটাচ্ছেন।

মারাকেশের বাসিন্দা ৪৩ বছর বয়সী হাউদা হাফসি বলেন, ‘ঘরের সিলিং থেকে ঝাড়বাতি ভেঙে পড়ার পর আমি দৌড়ে বাইরে চলে আসি। আমি এখনো সন্তানদের নিয়ে রাস্তায় আছি। আমাদের ভয় লাগছে।’

ডালিলা ফাহেম নামের আরেক নারী বলেন, তাঁর বাড়িতে ফাটল দেখা দিয়েছে। আসবাবপত্র নষ্ট হয়েছে।

রাতে ভূমিকম্পের সময় জেগে ছিলেন ডালিলা। তিনি মনে করেন, এর জন্যই প্রাণে বেঁচে গেছেন। ডালিলা বলেন, ‘ভাগ্য ভালো, তখনো আমি ঘুমাইনি।’

আরও পড়ুন

এক প্রত্যক্ষদর্শী রয়টার্সকে বলেন, ইঘিল থেকে প্রায় ৩৫০ কিলোমিটার উত্তরের এলাকা রাবাত এবং প্রায় ১৮০ কিলোমিটার পশ্চিমের উপকূলীয় শহর ইমসোয়ানের লোকজনও আতঙ্কিত হয়ে ঘরবাড়ি ছেড়েছেন।

মরক্কোর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গতকাল ভূমিকম্পের কারণে এখন পর্যন্ত ২৯৬ জন নিহত ও ১৫৩ জনের বেশি আহত হয়েছেন। ওই মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, আল-হাউস, মারাকেশ, ওয়ারজাজেট, আজিলাল, চিচাউয়া ও টারোডেন্ট এলাকায় ভূমিকম্পে এই প্রাণহানি হয়েছে।