সৌরবিদ্যুচ্চালিত ‘কেকেহ’ দিয়ে বায়ুদূষণ রুখছেন সিয়েরা লিওনের সাম্বা

নিজের তৈরি বিদ্যুচ্চালিত যান নিয়ে ফ্রিটাউনের রাস্তায় সাম্বাছবি: এএফপি

ব্যস্ত শহর সিয়েরা লিওনের রাজধানী ফ্রিটাউন। এই শহরে প্রকৌশলের শিক্ষার্থী জেমস সাম্বার একটি ওয়ার্কশপ রয়েছে। সেখানে তিনি ইলেকট্রিক নানা যন্ত্রাংশ ও ব্যাটারি নিয়ে কাজ করেন। তাঁর আশা—সিয়েরা লিওয়নের গণপরিবহন ব্যবস্থা পরিবেশবান্ধব করবেন তিনি।

পশ্চিমা আফ্রিকার দেশ সিয়েরা লিওনের বড় বড় শহরগুলোর রাস্তাঘাটে ব্যস্ত সময়ে জগাখিচুড়ি অবস্থা দেখা দেয়। এ সময় রাস্তায় থাকে বিপুলসংখ্যক মিনিবাস, স্কুটার, ট্যাক্সি ও তিন চাকার যান ‘কেকেহ’। যানবাহনগুলো থেকে বের হওয়া বিষাক্ত ধোঁয়ায় দূষিত হয় পরিবেশ।

পরিবেশদূষণের শিকার হয়েছেন সাম্বার পরিবারেরই একজন—তাঁর চাচা। বিষাক্ত ধোঁয়া থেকে শ্বাসতন্ত্রের রোগে আক্রান্ত হন তিনি। পরে সেই রোগেই মারা যান। এরপর সিয়েরা লিওনের যানবাহনগুলো পরিবেশবান্ধব করার অভিযানে নামেন ২৩ বছর বয়সী সাম্বা। লক্ষ্য ছিল—নিজের নকশায় বিদ্যুচ্চালিত কেকেহ তৈরি করবেন।

ফ্রিটাউনের রাস্তায় এখন দেখা যায় চার চাকার গোলাপি রঙের একটি যান। বাতিল ধাতু দিয়ে তৈরি করা হয়েছে সেটি। চলে ব্যাটারিতে। নিজের নকশায় যানটি তৈরি করেছেন সাম্বা। এই প্রকল্প এখনো শুরুর দিকে রয়েছে। সাম্বা বলেন, বায়ুদূষণের কারণে নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু থেকে মানুষকে বাঁচাতে ইলেকট্রিক যান তৈরি করতে চান তিনি।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) জানিয়েছে, ঘরের বাইরের বায়ুদূষণের কারণে প্রতিবছর আনুমানিক ৪২ লাখ মানুষ বয়স হওয়ার আগেই মারা যাচ্ছেন। নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশগুলোর ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলছে এই বায়ুদূষণ।

জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষেত্রেও বড় ভূমিকা রাখছে যানবাহন থেকে নির্গত হওয়া বিষাক্ত ধোঁয়া। জাতিসংঘ পরিবেশ কর্মসূচি ইউএনইপির তথ্য অনুযায়ী, দূষিত বায়ুর অতিক্ষুদ্র কণার (আড়াই মাইক্রনের চেয়ে ক্ষুদ্র) কারণে ২০২১ সালে সিয়েরা লিওনে ১ হাজার ২০০ মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। দেশটির মোট জনসংখ্যা ৮৫ লাখ।
‘ব্যবসা, পরিবেশ—দুই ক্ষেত্রেই ভালো’

বিদ্যুচ্চালিত যানের সামনে সাম্বা
ছবি: এএফপি

সাম্বা প্রথম তাঁর প্রকৌশলবিদ্যা কাজে লাগান চাচার জন্য একটি ইলেকট্রিক হুইলচেয়ার বানানোর ক্ষেত্রে। এরপর তিনি ‘সিয়েরা ইলেকট্রিক’ নামে নিজের একটি প্রতিষ্ঠান খোলেন। এই প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য, সৌরবিদ্যুচ্চালিত কেকেহ এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ব্যবহারের উপযোগী ইলেকট্রিক যান উৎপাদন করা।

সৌরশক্তিচালিত কেকেহ উৎপাদন শুরুর জন্য অর্থসংকটে পড়তে হয়েছিল সাম্বাকে। তখন তিনি ‘এনইইভি স্যালন’ নামের একটি স্টার্টআপের সঙ্গে অংশীদারত্বে যান। ফ্রিটাউনভিত্তিক এই স্টার্টআপটির এরই মধ্যে শতাধিক সৌরবিদ্যুচ্চালিত তিন চাকার সাইকেল রয়েছে। এ ছাড়া বিদ্যুচ্চালিত যানের ব্যাটারিতে চার্জ দেওয়ার জন্য তিনটি স্টেশনও রয়েছে তাদের।

বিদ্যুচ্চালিত যানবাহনগুলোকে সিয়েরা লিওনে বহু বাধার মুখে পড়তে হয়। দেশটিতে হরহামেশা দেখা দেয় লোডশেডিং। এ ছাড়া ছয় মাস ধরে চলে বর্ষাকাল। এ সময় সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনও কঠিন। ২০২৪ সালে বিশ্বব্যাংকের দেওয়া একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, সিয়েরা লিওনের মাত্র ২০ শতাংশের বেশি বাসাবাড়িতে জাতীয় গ্রিড বা ছোট ছোট বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ যায়।

এনইইভি স্যালনের চার্জিং স্টেশনগুলোতে জাতীয় গ্রিড, জেনারেটর ও সৌরশক্তির মধ্যে অদলবদল করে বিদ্যুৎ সরবরাহ জারি রাখা হয়। সাম্বা বলেন, জীবাশ্ম জ্বালানিচালিত কেকেহের চেয়ে সৌরবিদ্যুচ্চালিত কেকেহগুলো বেশি সাশ্রয়ী। এর রক্ষণাবেক্ষণ খরচ কম। জ্বালানিও কেনা লাগে না।

এনইইভি স্যালনের তৈরি সবচেয়ে ছোট কেকেহটির দাম প্রায় ৫ হাজার ২৭০ ডলার। বিশ্বের সবেচেয়ে দরিদ্রের তালিকায় থাকা একটি দেশে এই দাম অনেক বেশি। তবে উচ্চ মূল্য হওয়া সত্ত্বেও অনেকে এই যানটি কিনছেন। কারণ, দেশটিতে জ্বালানি তেলের দামও বাড়ছে।

এ নিয়ে ২৫ বছর বয়সী টমাস কানু বলেন, ‘সৌরবিদ্যুচ্চালিত তিন চাকার সাইকেলগুলো বেশ আরামদায়ক। ব্যবসা হিসেবেও বেশ লাভজনক। দেশে তেলের অভাব সম্পর্কে আমার আর শঙ্কিত হতে হয় না। ব্যবসা ও আমাদের পরিবেশ—দুই ক্ষেত্রেই সৌরবিদ্যুচ্চালিত কেকেহ ভালো।’