বন্যায় ডুবছে, দাবদাহে পুড়ছে বিশ্ব
চরমভাবাপন্ন আবহাওয়ার কবলে পড়েছে বিশ্ব। একদিকে ভারী বর্ষণে সৃষ্ট বন্যায় ডুবছে তো আরেক দিকে পুড়ছে দাবদাহে। এশিয়ার বিভিন্ন দেশে বন্যায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির পাশাপাশি প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে। অন্যদিকে ইউরোপ ও আমেরিকা পুড়ছে দাবদাহে।
জুনের শুরুর দিকে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ওশেনিক অ্যান্ড অ্যাটমোসফেরিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (এনওএএ) বিজ্ঞানীরা বলেছেন, পূর্বাভাস অনুযায়ী ‘এল নিনো’ জলবায়ু পরিস্থিতি শুরু হয়ে গেছে। এতে আবহাওয়া ও তাপমাত্রা চরম রূপ ধারণ করতে পারে।
চরমভাবাপন্ন এই আবহাওয়ার প্রভাব শুরু হয়ে গেছে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে। দক্ষিণ কোরিয়া ও ভারতে ব্যাপক বন্যা দেখা দিয়েছে। আর দাবদাহের কারণে ইতালিতে ‘রেড অ্যালার্ট’ জারি করা হয়েছে। দাবদাহের সতর্কতা জারি করা হয়েছে এক-তৃতীয়াংশ আমেরিকানের জন্যও।
দক্ষিণ কোরিয়ায় বন্যায় ২২ জনের মৃত্যু
দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যাঞ্চলে অব্যাহত প্রবল বৃষ্টিপাতে সৃষ্ট বন্যায় অন্তত ২২ জনের মৃত্যু হয়েছে। আরও ১৪ জন নিখোঁজ রয়েছেন। হাজারো বাসিন্দাকে ঘরবাড়ি ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে হচ্ছে।
টানা তৃতীয় দিনের মুষলধারের বৃষ্টিতে ভূমিধসের ঘটনা ঘটেছে। মধ্যাঞ্চলীয় উত্তর চুংচেওং প্রদেশে পানির তোড়ে বড় একটি বাঁধ উপচে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। ভারী বর্ষণের ফলে রাস্তাঘাট ডুবে গেছে। গাড়ি ভেসে গেছে। রেলযোগাযোগ বিঘ্নিত হয়েছে।
সবচেয়ে বেশি প্রাণহানি হয়েছে উত্তর গিয়েওংস্যাং প্রদেশে। পাহাড়ি এলাকায় ভূমিধসের ফলে ঘরবাড়ি চাপা পড়ে এ প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। একজন জরুরি পরিষেবা কর্মী জানান, সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোতে ঘরবাড়িগুলো পুরোটাই ভেসে গেছে।
কর্তৃপক্ষ বলছে, মধ্য চুংচেওং প্রদেশে একটি সুড়ঙ্গপথে ১৯টি গাড়ি ডুবে গেছে। এতে প্রাণহানির সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
উদ্ধার প্রচেষ্টায় সহযোগিতা করতে সামরিক বাহিনী তলব করেছেন প্রধানমন্ত্রী হান ডাক সু। স্থানীয় সরকারগুলো কয়েক হাজার বাসিন্দাকে আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার আদেশ জারি করেছে।
ভাসছে নয়াদিল্লি
এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টির পর মারাত্মক বন্যার কবলে পড়েছে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লি। হরিয়ানার হাতনি কুণ্ড ব্যারাজের পানি ছেড়ে দেওয়ার ফলে যমুনা নদীর পানি আরও বেড়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, রাজধানীতে আরও দুই দিন ভারী বর্ষণ হতে পারে।
গত শুক্রবারও দিল্লির বিভিন্ন অংশে হালকা বৃষ্টিপাত হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ ক্ষেত্রে দিল্লিতে আরও বৃষ্টি হলে বিভিন্ন অঞ্চল তলিয়ে যেতে পারে এবং পানি সরতে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি সময় লাগতে পারে। জলাবদ্ধতার কারণে পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে।
যমুনা নদী দিল্লির ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। গত সপ্তাহের শুরুর দিকে ৪৫ বছরের রেকর্ড ভেঙে এ নদীর পানির উচ্চতা ২০৮ দশমিক ৬৬ মিটারে গিয়ে ঠেকে। তবে গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় তা কমে ২০৬ দশমিক ৯৭ মিটারে নেমে আসে।
বন্যার পানিতে দিল্লির সড়কগুলো ছোটখাটো নদীতে পরিণত হয়। কিছু এলাকা বুকসমান পানিতে তলিয়ে যায়। লোকজনকে নৌকা ব্যবহার করে উদ্ধার করতে দেখা গেছে। নিচু এলাকার লোকজন খাদ্যসংকট দেখা দেওয়ার অভিযোগ করেছেন।
ইতালিতে দাবদাহের ‘রেড অ্যালার্ট’
এশিয়ার দেশগুলো যখন বন্যায় ডুবছে, তখন ইউরোপের দক্ষিণাঞ্চলের দেশগুলো দাবদাহে পুড়ছে। রোম, ফ্লোরেন্স ও বোলোগনাসহ ইতালির ১৬টি শহরে দাবদাহের ‘রেড অ্যালার্ট’ জারি করা হয়েছে।
দাবদাহের সময় স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি প্রলম্বিত হচ্ছে। রাতে তাপমাত্রা বেশি থাকছে। আরেকটি দাবদাহ আসতে থাকায় চলতি সপ্তাহে ইউরোপের তাপমাত্রা বেশি থাকবে বলে মনে করা হচ্ছে।
চলতি সপ্তাহের শেষ দিকে স্পেনের দক্ষিণাঞ্চলে, ইতালির দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে ও সম্ভবত গ্রিসের তাপমাত্রা ৪৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসে গিয়ে ঠেকতে পারে। গত সপ্তাহে রোমের কলোসিয়াম দেখতে গিয়ে তীব্র গরমে কয়েকজন পর্যটক অজ্ঞান হয়ে পড়েন।
যুক্তরাষ্ট্রেও দাবদাহের সতর্কতা
যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে গত সপ্তাহের শেষ দিকে তীব্র দাবদাহের সতর্কতা জারি করা হয়েছে। গত শুক্রবার জারি করা এই সতর্কতার আওতায় ছিলেন ১১ কোটি ৩০ লাখ মার্কিন, যা দেশটির মোট জনসংখ্যার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ।
ফ্লোরিডা থেকে টেক্সাস ও ক্যালিফোর্নিয়ার পাশাপাশি উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় ওয়াশিংটন অঙ্গরাজ্য পর্যন্ত এই সতর্কতা জারি করা হয়। আগামী কয়েক দিন প্রায় ২ কোটি ৭০ লাখ মানুষ ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার কবলে পড়তে পারেন বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।