সবচেয়ে দ্রুত উড়তে পারে যে ১০ পাখি

সবচেয়ে দ্রুত উড়তে পারে কোন পাখি?  গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস অনুযায়ী সাদা-গলার নিডলটেইল অনুভূমিক বা সমান্তরালভাবে উড়তে পারা সবচেয়ে দ্রুত গতির পাখি। এটি ঘণ্টায় ১৭০ কিলোমিটার গতিতে আকাশে উড়তে পারে। অন্যদিকে, পেরিগ্রিন ফ্যালকন (বাজপাখি) শিকার ধরার জন্য অতুলনীয় গতিতে আকাশ থেকে নিচে ঝাঁপ দিতে পারে। পাখিটি যখন মাথা নিচের দিকে দিয়ে শিকারের দিকে ছুটে আসে তখন এটির গতি ঘণ্টায় ৩৮৯ কিলোমিটার পর্যন্ত পৌঁছায়। এ কারণে এটি বাতাস কেটে সবচেয়ে দ্রুত ওড়া পাখি। বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুতগতির ১০ পাখি নিয়ে প্রথম আলোর আজকের আয়োজন।

পেরিগ্রিন ফ্যালকন (বাজপাখি)

সৌদি আরবে এক ব্যক্তি একটি নিলামে একটি প্যারেগ্রিন বাজপাখি দেখাচ্ছেন
ফাইল ছবি: রয়টার্স

পেরিগ্রিন ফ্যালকন (ফ্যালকো প্যারেগ্রিনাস) সবচেয়ে দ্রুতগামী পাখি হিসেবে ব্যাপকভাবে স্বীকৃত। এটিকে আসলে বাতাস কেটে ওড়ার দিক থেকে সবচেয়ে দ্রুতগামী প্রাণীও বটে। বিশেষ করে শিকার ধরার জন্য এটি যেভাবে মাথা নিচের দিকে দিয়ে আকাশ থেকে ঝাঁপ দেয় তখন এটির গতি ঘণ্টায় ৩২০ কিলোমিটার পেরিয়ে যায়। এমনকি কোনো কোনোটি এর চেয়েও দ্রুতগতিতে নেমে আসতে পারে। তবে এটির নির্ভরযোগ্যভাবে পরিমাপ করা সর্বোচ্চ গতি ঘণ্টায় প্রায় ১৮৪ কিলোমিটার। কাকের মতো বড় পেরিগ্রিন ফ্যালকনের পিঠ নীলাভ-ধূসর রঙের। এটির পেটের দিকে ধূসর রঙের ওপর কালো ছোপ ছোপ দাগ কাটা, মাথার দিকটা কালো রঙের। উত্তর মেরুর তুন্দ্রা অঞ্চল থেকে শুরু করে নগরের আকাশচুম্বী ভবনগুলোতে এ পাখি বসবাস করে। বুনো কবুতর এদের প্রধান শিকার।

সোনালি ইগল

তীব্র গতিতে শিকারের দিকে ছুটে যাচ্ছে একটি সোনালি ইগল
ফাইল ছবি: রয়টার্স

বাতাস কেটে ওড়ার গতির দিক দিয়ে সবচেয়ে দ্রুতগামী পাখিগুলোর একটি সোনালি ইগল। শিকার ধরতে এটি যে গতিতে আকাশ থেকে নিচে ঝাঁপ দেয়, সে জন্যও পাখিটির নামডাক আছে। সোনালি ইগল অনুভূমিক বা সমান্তরালভাবে সর্বোচ্চ ১২৯ কিলোমিটার গতিতে উড়ে যেতে পারে। আকাশে অনুভূমিকভাবে সর্বোচ্চ গতিতে উড়তে পারার তালিকায় এটি চতুর্থ অবস্থানে। শক্তিশালী এই শিকারি উত্তর গোলার্ধের পাখি।

শিকার ধরার সময় এটি দারুণ ক্ষিপ্রতা ও গতি দেখায়, ঘণ্টায় ২৪০ থেকে ৩২০ কিলোমিটার গতিতে নিচে নেমে আসে। গোল্ডেন ইগল নিজের অসাধারণ গতি, শক্তিশালী পা এবং ধারালো নখ ব্যবহার করে শিকার ধরে। খরগোশ এবং কাঠবিড়ালির মতো প্রাণী এদের প্রধান শিকার।

গোল্ডেন ইগলের পালক গাঢ় বাদামি, ঘাড়ের পালক সোনালি-বাদামি রঙে। এদের বিশাল ডানা ২ দশমিক ৩৪ মিটার (৭ ফুট ৮ ইঞ্চি) পর্যন্ত বিস্তৃত, যা তাদের ক্ষিপ্র এবং সাবলীল গতিতে উড়তে সাহায্য করে।

সকার ফ্যালকন/সকার বাজপাখি

নাকের ওপর এসওএস ট্যাটু আঁকা একটি সকার ফ্যালকন বা সকার বাজপাখি। এই ছবিটি রাশিয়ায় তোলা
ফাইল ছবি: রয়টার্স

শিকার ধরার সময় একটি সকার ফ্যালকন বাতাস কেটে ঘণ্টায় প্রায় ৩০০ কিলোমিটার গতিতে নিচে নেমে আসতে পারে। বাতাস কেটে সবচেয়ে দ্রুত উড়তে পারা পাখির তালিকায় এটি ৩ নম্বরে।

সকার ফ্যালকন ঘণ্টায় ১৫০ কিলোমিটার গতিতে অনুভূমিকভাবে উড়ে যেতে পারে। মধ্য ইউরোপ থেকে এশিয়া মহাদেশজুড়ে এই পাখি দেখতে পাওয়া যায়। সকার ফ্যালকন আফ্রিকার সাহিল এবং কিংহাই-তিব্বত মালভূমির মতো অঞ্চলে শীতকাল কাটায়। ঐতিহাসিকভাবে শিকারি পাখি হিসেবে সকার ফ্যালকনের বেশ নাম-ডাক আছে, বিশেষ করে আরব উপদ্বীপে। একাধিক আরব দেশ, হাঙ্গেরি, মঙ্গোলিয়াসহ আরও কয়েকটি দেশের জাতীয় পাখি সকার ফ্যালকন।

জির-ফ্যালকন (বাজপাখি)

একটি জিরফ্যালকন/জিরবাজপাখি। আরব দেশগুলোতে বাজ পাখিকে মর্যাদার প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করা হয়
ফাইল ছবি: এএফপি

বাজপাখির প্রজাতির মধ্যে জির-ফ্যালকন আকারে সবচেয়ে বড়। উত্তর মেরু উপকূল, তুন্দ্রা অঞ্চল এবং উত্তর আমেরিকার উত্তরাঞ্চল ও ইউরোসাইবেরিয়ান অঞ্চলে এই পাখি দেখতে পাওয়া যায়। এটি ঘণ্টায় ২০৯ কিলোমিটার গতিতে আকাশ থেকে শিকার ধরতে ঝাঁপ দিতে পারে।

অনুভূমিকভাবে সবচেয়ে দ্রুত গতিতে উড়তে পারা পাখির তালিকাতেও জির-ফ্যালকন ৩ নম্বরে। এটি ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১৪৫ কিলোমিটার গতিতে অনুভূমিকভাবে উড়ে যেতে পারে। বাজপাখি প্রশিক্ষণ ও পোষার জন্য এই জাতটির বরাবরই কদর আছে। বহু বছর ধরে জিরফ্যালকনকে মর্যাদার প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

সাদা গলার নিডলটেইল

দ্রুত গতিতে উড়তে পারা পাখিদের মধ্যে সাদা গলার নিডলটেইলও রয়েছে এবং অনুভূমিকভাবে সর্বোচ্চ গতিতে উড়তে পারা পাখি এটি। এটা অনুভূমিকভাবে ঘণ্টায় ১৭০ কিলোমিটারের বেশি গতিতে উড়ে যেতে পারে।

সাদা গলার নিডলটেইল একটি পরিযায়ী পাখি। প্রজনন মৌসুমে এটি মধ্য এশিয়া এবং সাইবেরিয়ার দক্ষিণাঞ্চলে থাকে, শীতে ভারতীয় উপমহাদেশ, দক্ষিণপূর্ব এশিয়া এবং অস্ট্রেলিয়ায় উড়ে যায়। এটির পালক ধূসর-বাদামি রঙের, এটির সাদা রঙের গলা বিশেষভাবে নজর কাড়ে, আর লেজের গোড়া থেকে পেটের দুই পাশে ছড়ানো সাদা দাগ আছে।

ইউরেশিয়ান হবি

ইউরেশিয়ান হবি একটি ছোট, চটপটে বাজপাখি। ব্যতিক্রমী গতি এবং আকাশে ওড়ার দক্ষতার কারণে পাখিটির বেশ নাম-ডাক আছে। এটা বাতাস কেটে সর্বোচ্চ ১৫৯ কিলোমিটার গতিতে উড়তে পারে। পাখিটি সুনির্দিষ্ট কৌশলে দ্রুততার সঙ্গে শিকার ধরতে পারে।

একটি প্রাপ্ত বয়স্ক ইউরেশিয়ান হবি পাখির শরীরের ওপরের অংশ পাথুরে ধূসর রঙের, মাথায় কালো রঙের ঝুঁটি এবং পায়ের ওপরের অংশ লালচে। প্রজননের সময় এটি ইউরোপ এবং এশিয়া মহাদেশ জুড়ে অবস্থান করে, শীতকালে আফ্রিকা ও দক্ষিণ এশিয়ায় চলে যায়। তবে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া অঞ্চলেও এই পাখি সারা বছর দেখতে পাওয়া যায়।

ফ্রিগেটবার্ড

গ্যালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জের আকাশে উড়ছে একটি ফ্রিগেটবার্ড
ফাইল ছবি: রয়টার্স

সামুদ্রিক পাখির মধ্যে ফ্রিগেটবার্ড সবচেয়ে দ্রুতগতিতে বাতাস কেটে উড়তে পারে। এর গতি ঘণ্টায় ১৫৩ কিলোমিটারের বেশি। কালো রঙের পালক এবং মাঝখান থেকে গভীরভাবে চেরা লম্বা লেজ পাখিটিকে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য দিয়েছে।

স্পার-উইংড গুস (হাঁস)

স্পার-উইংড হাঁস ঘণ্টায় প্রায় ১৪৩ কিলোমিটার গতিতে উড়তে পারে। সাব-সাহারা আফ্রিকাজুড়ে জলাভূমিতে এই পাখি দেখতে পাওয়া যায়। নিজের বৃহৎ আকারের জন্য এই হাঁস অন্য পাখিদের থেকে স্বতন্ত্র। এটি ৭৫ থেকে ১১৫ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা হয়, ওজন ৪ থেকে ১০ কেজি। এটি আফ্রিকার সবচেয়ে ওজনদার জালচর পাখি।

কালো পালক, মুখ ও ডানায় থাকা সাদা দাগ এবং গোলাপি-লাল রঙের পা দিয়ে এই পাখিকে চেনা যায়। মজার ব্যাপার হল, এই হাঁস বিষাক্ত পোকামাকড় খেয়ে অনেক সময় নিজেই বিষাক্ত হয়ে পড়ে এবং মানুষের জন্য বিপদ ডেকে আনতে পারে।

লাল-বুকের ডুবুরি হাঁস

হাঁসেদের মধ্যে সবচেয়ে দ্রুত গতিতে উড়তে পারা জন্য বিখ্যাত লাল-বুকের ডুবুরি হাঁস। এটি ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১৩০ কিলোমিটার গতিতে বাতাস কেটে উড়ে যেতে পারে। উত্তর গোলার্ধের বেশির ভাগ অঞ্চলে এই হাঁস দেখতে পাওয়া যায়। এর স্বতন্ত্র চেহারাও উল্লেখ করার মতো। পুরুষ হাঁসের মাথার অংশ গাঢ় সবুজ, মাথার ওপর খাঁড়া ঝুঁটি,  সাদা ঘাড় এবং বুক ঘষা ঘষা লাল রঙের। অন্যদিকে, মেয়ে হাঁসের মাথা ঘষা ঘষা লাল রঙের এবং শরীর ধূসর।

১০

কমন সুইফট/বাতাসি পাখি

কমন সুইফট/বাতাসি পাখির ছানাকে খাবার খাওয়াচ্ছেন এক ব্যক্তি
ফাইল ছবি: রয়টার্স

কমন সুইফট/বাতাসি পাখি ঘণ্টায় ১১১ কিলোমিটার গতিতে উড়তে পারে। এটি দেখতে অনেকটা আবাবিল পাখির মতো। এই পাখি খুব একটা মাটিতে নামে না। পাখিটি দীর্ঘ সময় ধরে আকাশে অবস্থান করতে পারে। প্রজনন না করলে টানা ১০ মাস পর্যন্ত এই পাখি আকাশে উড়ে বেড়াতে পারে। এটি দল বেঁধে ডাকে এবং বাসার আশপাশে অথবা আকাশে উঁচুতে একসঙ্গে উড়ে বেড়ায়।

তথ্যসূত্র: ওয়ার্ল্ড অ্যাটলাস