পুরুষের তুলনায় নারী বেশি যে ১০ দেশে

কন্যাশিশুর তুলনায় ছেলেশিশুর জন্মের হার খানিকটা বেশি, সাধারণত এই অনুপাত ১০০: ১০৫। কেন এমনটা হয়, তার কারণ এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে আয়ুষ্কাল ও অভিবাসনের মতো কারণগুলোর ফলে কিছু কিছু দেশে মোট জনসংখ্যায় নারীর অনুপাত বেশি দেখা যায়। ২০২৪ সালের জুলাইয়ে জাতিসংঘের ‘পপুলেশন ডিভিশন’ একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। ওই প্রতিবেদনে মলদোভা, লাটভিয়া, আর্মেনিয়াসহ আর কোন ১০ দেশে জনসংখ্যায় নারীর সংখ্যা পুরুষের তুলনায় বেশি, তা দেখে নেওয়া যাক।

মলদোভা

মলদোভার মোট জনসংখ্যায় নারী বেশি হওয়ার পাশাপাশি দেশটির প্রেসিডেন্টও একজন নারী, নাম মাইয়া সান্দু। ২০২৪ সালের নভেম্বরে দেশটিতে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় এই ছবি তোলা
ছবি: রয়টার্স

ইউরোপের দেশ মলদোভার মোট জনসংখ্যার ৫৩ দশমিক ৯৮ শতাংশ নারী। এরপরও দেশটিতে এখনো লিঙ্গভিত্তিক বৈষম্য বেশ তীব্র। মলদোভায় নারীদের উচ্চশিক্ষা গ্রহণের হার বাড়লেও কর্মক্ষেত্রে নারীরা পুরুষদের তুলনায় বেশ পিছিয়ে। সেখানে কর্মক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণ পুরুষের তুলনায় ১০ শতাংশ কম।
মলদোভায় ১৫ থেকে ২৯ বছর বয়সী বেকারদের মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশই নারী। নারীরা ঘরে কাজ করবেন, পুরুষেরা বাইরে। মলদোভায় কর্মক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণ কম হওয়ার মূল কারণও সমাজের প্রথাগত এই ব্যবস্থা। মলদোভায় গৃহস্থালি কাজ ও শিশুদের দেখাশোনার দায়িত্বের বেশির ভাগটা নারীদের বহন করতে হয়।

লাটভিয়া

একটি অনুষ্ঠানে দেশের ঐতিহ্যবাহী পোশাকে লাটভিয়ার নারীরা
ফাইল ছবি: রয়টার্স

ইউরোপের আরেক দেশ লাটভিয়ায় মোট জনসংখ্যার ৫৩ দশমিক ৬৮ শতাংশ নারী। দেশটিতে পুরুষের তুলনায় নারীর সংখ্যা বেশি হওয়ার একটি বড় কারণ স্বাস্থ্যগত। লাটভিয়ায় ৪৩ বছরের কম বয়সীদের মধ্যে নারীর তুলনায় পুরুষের সংখ্যা বেশি। কিন্তু ৬৫ বছরের বেশি বয়সীদের মধ্যে পুরুষের চেয়ে নারীর সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ। ৬৫ বছরের বেশি বয়সী পুরুষদের দুর্বল স্বাস্থ্যকে এ জন্য দায়ী করা হয়েছে। লাটভিয়ায় নারীদের তুলনায় পুরুষেরা অধিক অস্বাস্থ্যকর জীবন যাপন করেন। সেখানে নারীদের তুলনায় তিন গুণ পুরুষ ধূমপান করেন। ওজন নিয়ন্ত্রণেও নারীদের চেয়ে পুরুষেরা পিছিয়ে।

আর্মেনিয়া

ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরে নৃত্য পরিবেশন করছেন আর্মেনিয়ার তরুণীরা
ফাইল ছবি: এএফপি

আর্মেনিয়ার মোট জনসংখ্যার ৫৩ দশমিক ৬১ শতাংশ নারী। এর একটি বড় কারণ, ভালো কাজের আশায় দেশটির পুরুষদের বিদেশে যাওয়ার হার অনেক বেশি। তবে দেশে নারীর সংখ্যা বেশি হলেও কর্মক্ষেত্রে প্রবেশে তাঁদের নানা প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়তে হয়। লাটভিয়ায় কর্মক্ষেত্রে পুরুষের তুলনায় নারী প্রায় ১২ শতাংশ কম। দেশটির রাজনীতিতেও নারীর অংশগ্রহণ উল্লেখযোগ্য রকম কম।

রাশিয়া

সড়ক ধরে হেঁটে যাচ্ছেন এক রুশ নারী
ফাইল ছবি: রয়টার্স

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের অনেক পুরুষ নিহত হয়েছিলেন। যে কারণে ১৯৫০ সাল থেকেই রাশিয়ায় মোট জনসংখ্যায় পুরুষের তুলনায় নারী বেশি। ঐতিহাসিক এই ঘটনা আজও রাশিয়ার জনসংখ্যাকে প্রভাবিত করে চলেছে। রাশিয়ায় মানুষের গড় আয়ু তুলনামূলক বেশি এবং দেশটির বয়স্ক মানুষের মধ্যে সংখ্যায় নারীরা এগিয়ে। এ ছাড়া স্বাস্থ্যগত কারণেও রুশ নারীদের আয়ুষ্কাল রুশ পুরুষদের তুলনায় বেশি। রুশ পুরুষদের মধ্যে মদ্যপান ও আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি। অস্বাস্থ্যকর জীবন যাপনের কারণে রোগে আক্রান্ত হয়ে পুরুষদের মৃত্যু বেশি হয়। দেশটিতে জনসংখ্যার ৫৩ দশমিক ৫৭ শতাংশ নারী।

ইউক্রেন

ইউক্রেনের কয়েকজন নারী সামরিক প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন
ফাইল ছবি: রয়টার্স

রাশিয়ার মতো ইউক্রেনেও পুরুষদের তুলনায় নারীদের আয়ুষ্কাল বেশি। মূলত এ কারণে দেশটির মোট জনসংখ্যার ৫৩ দশমিক ৫০ শতাংশ নারী। ২০২১ সালে ইউক্রেনে একজন নারীর গড় আয়ুষ্কাল ছিল ৭৫ বছরের বেশি, যেখানে একজন পুরুষের গড় আয়ুষ্কাল ৬৬ বছরের বেশি। অর্থাৎ নারী ও পুরুষের মধ্যে গড় আয়ুষ্কালের ব্যবধান প্রায় এক দশক।

জর্জিয়া

জর্জিয়ায় পার্লামেন্ট ভবনের বাইরে বিক্ষোভ করছেন নারীরা
ফাইল ছবি: এএফপি


জর্জিয়ায় মোট জনসংখ্যার ৫৩ দশমিক ৪০ শতাংশ নারী। দেশটির জনসংখ্যায় পুরুষের তুলনায় নারীর সংখ্যা বেশি হওয়ার কারণ প্রধানত দুটি—অভিবাসন ও আয়ুষ্কাল। বিদেশে অভিবাসী হওয়া জর্জিয়ার নাগরিকদের মধ্যে ৫৬ শতাংশ পুরুষ। এর ফলে দেশটির মোট জনসংখ্যায় পুরুষের তুলনায় নারীর সংখ্যা খানিকটা বেড়ে গেছে। এ ছাড়া মোট জনসংখ্যায় নারীর সংখ্যা বেশি এমন দেশগুলোর মতো জর্জিয়াতেও নারীদের গড় আয়ুষ্কাল পুরুষদের তুলনায় বেশি। ২০২৩ সালে জর্জিয়ায় পুরুষদের গড় আয়ু ৭০ দশমিক ৬ বছর এবং নারীদের গড় আয়ু ছিল ৭৯ দশমিক ৪ বছর।

বেলারুশ

বেলারুশে ফুল হাতে বিক্ষোভে নারীরা
ফাইল ছবি: রয়টার্স

বেলারুশে মোট জনসংখ্যার ৫৩ দশমিক ৪০ শতাংশ নারী, যদিও দেশটি গভীরভাবে পুরুষতান্ত্রিক, লিঙ্গবৈষম্যও তীব্র। যেমন দেশটিতে পুরুষদের তুলনায় নারীদের মজুরি কম। একই কাজের জন্য পুরুষেরা যে মজুরি পান, নারীরা পান তার ৮০ শতাংশ। তবে মোট জনসংখ্যায় নারীর সংখ্যা বেশি, এমন দেশের তুলনা একটি জায়গায় বেলারুশ এগিয়ে, আর সেটি হলো, দেশটির কর্মক্ষেত্রে ৫৪ শতাংশ নারী। জনসংখ্যায় নারী বেশি হওয়ার আরেকটি কারণ গড় আয়ুষ্কাল। ২০২১ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বেলারুশে নারীদের গড় আয়ু ৭৮ বছর। পুরুষদের গড় আয়ু ঠিক ১০ বছর কম।

লিথুয়ানিয়া

লিথুয়ানিয়ায় মোট জনসংখ্যার ৫২ দশমিক ৮৫ শতাংশ নারী। এর প্রধান দুই কারণ, আয়ুষ্কাল ও শরণার্থী অভিবাসন। লিথুয়ানিয়ায় গড়ে একজন নারী একজন পুরুষের তুলনায় ৯ বছর বেশি বাঁচেন। নারীদের তুলনায় পুরুষদের গড় আয়ু কম হওয়ার কারণ ধূমপান, মদ্যপান, অস্বাস্থ্যকর খাবার ও ব্যায়ামে অনীহা।

লিথুয়ানিয়ায় ৬৫ বছরের বেশি বয়সীদের মধ্যে দুই–তৃতীয়াংশ নারী। এ ছাড়া গত কয়েক বছরে ইউক্রেন থেকে প্রচুর শরণার্থী লিথুয়ানিয়ায় আশ্রয় নিয়েছেন। এটিও দেশটির জনসংখ্যায় নারীর অনুপাত বাড়াতে কাজ করেছে। লিথুয়ানিয়া যে ৫৪ হাজার শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছে, তার মধ্যে ৩২ হাজার জন নারী।

টোঙ্গা

টোঙ্গায় মোট জনসংখ্যার ৫২ দশমিক ৫৯ শতাংশ নারী। এর একটি বড় কারণ আয়ুষ্কাল। ২০২১ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, টোঙ্গায় নারীদের গড় আয়ু পুরুষের তুলনায় প্রায় পাঁচ বছর বেশি। পুরুষের আয়ুষ্কাল কম হওয়ার জন্য অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন অনেকটা দায়ী। টোঙ্গায় শৈশব থেকেই ছেলেদের ধূমপান করা, মারামারি ও কুস্তি করা সমাজে মেনে নেওয়া হয়। কিন্তু একটি মেয়ে এসব কাজ করবে, তা সমাজ ভাবতে পারে না। সেখানে লিঙ্গবৈষম্যও তীব্র।

১০

সার্বিয়া

সার্বিয়ায় মোট জনসংখ্যার ৫২ দশমিক ৫১ শতাংশ নারী। তবে জনসংখ্যার অর্ধেকের বেশি নারী হলেও দেশটির কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ পুরুষের তুলনায় কম, ৪৫ দশমিক ৫ শতাংশ। সার্বিয়ায় নারীরা বৈষম্য ও পারিবারিক সহিংসতার শিকার হন। তবে নিপীড়নের শিকার মাত্র অর্ধেক নারী ঘরে অভিযোগ করে থাকেন। গড় আয়ুষ্কালও জনসংখ্যায় নারীর সংখ্যা বেশি হওয়ার অন্যতম কারণ। ২০২১ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সার্বিয়ায় একজন নারীর গড় আয়ু ৭৫ দশমিক ৬ বছর, পুরুষের গড় আয়ু ৭০ বছর।