বিচ্ছেদ নিয়ে আগেই মেগানকে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন সোফি
দীর্ঘ দেড় যুগের বিবাহিত জীবনের ইতি টানার ঘোষণা দিয়েছেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো ও তাঁর স্ত্রী সোফি গ্রেগোয়ার। দেশ-বিদেশে ‘আদর্শ’ হিসেবে পরিচিতি পাওয়া এ দম্পতির বিচ্ছেদের খবরে শোরগোল পড়ে গেছে। খবরটা আকস্মিক হলেও সোফির মনে হয়তো বিচ্ছেদের আকাঙ্ক্ষা আগে থেকেই ছিল। গত বছর দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সোফি ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, যুগ যুগ ধরে চলে আসা বিবাহিত নারীদের গৃহস্থালী ভূমিকা থেকে বের হয়ে আসতে চান তিনি।
২০২২ সালের নভেম্বরে সোফির ওই সাক্ষাৎকার সম্প্রচার হয়েছিল। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছিলেন প্রিন্স হ্যারির স্ত্রী মেগান মার্কেল। ওই সময় মেগানের ‘গুড ওয়াইফ, ব্যাড ওয়াইফ; গুড মম, ব্যাড মম’ শীর্ষক পডকাস্টে অংশ নেন সোফি।
পডকাস্টের শুরুতেই সোফির সম্পর্কে বলতে গিয়ে মেগান বলেন, নারীদের ওপর অতিরিক্ত প্রত্যাশার চাপ সামাল দেওয়ার উপায় সোফি খুব ভালোভাবে জানেন। এর প্রতিক্রিয়ায় যেসব নারীরা দিনের পর দিন ঘরের কাজ ও সন্তান সামলানোর চাপ নিজেদের কাঁধে বয়ে নিয়ে চলেছেন এবং সেই চাপ থেকে মুক্ত হতে চান, তাঁদের সম্পর্কে কথা বলেন সোফি।
এ সময় মেগান বলেন, সোফিকে সন্তানসহ পুরো একটি পরিবার সামলাতে হয়। ট্রুডোর মতো আলোচিত রাজনৈতিক ব্যক্তিকে বিয়ে করেছেন তিনি। তাই প্রধানমন্ত্রীর স্ত্রী হিসেবেও তাঁকে ভূমিকা রাখতে হয়।
এর পরিপ্রেক্ষিতে বহুবিধ ভূমিকা রেখে চলা নারীদের ‘অপরাধবোধ’ প্রসঙ্গে সোফি বলেন, ‘আমি মনে করি, আমরাই (নারীরা) এই বোধ নিজেদের কাঁধে টেনে নিতে শিখে যাই। মেয়ে হিসেবে জন্ম নেওয়ার কারণে একটা মেয়েশিশু কখনোই অপরাধ বোধে ভোগে না। বড় হওয়ার পথে আমরাই বরং এই বোধের জন্ম দিই। এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।’
সোফি আরও বলেন, ‘বিশ্বজুড়ে নারীরা এখনো একটি পরিবারের প্রাণ (নিউক্লিয়াস)। বেশির ভাগ ঘরের কাজ এখনো নারীদের সামলাতে হয়। পরিবারের কল্যাণ ও বাচ্চাদের ভালোর জন্য নেওয়া বেশির ভাগ সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে নারীদের অবদান থাকে। আমি মনে করি, আমাদের প্রত্যেকের ভেতরে একেকটি সিংহী রয়েছে। আমরা মুক্ত হতে চাই। বুঝতে চাই, আমরা আসলে কারা।’
প্রায় সাত বছর ধরে সোফির সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে উল্লেখ করে মেগান আরও জানান, বন্ধুত্বের শুরুর দিকেই তিনি পরামর্শ নেওয়ার জন্য সোফির কাছে গিয়েছিলেন।
জাস্টিন পিয়েরে জেমস ট্রুডোর জন্ম ১৯৭১ সালের ২৫ ডিসেম্বর। কানাডার ২৩তম প্রধানমন্ত্রী তিনি। সোফি গ্রেগোয়ার বেড়ে উঠেছেন মন্ট্রিয়লে। শৈশব থেকেই তাঁরা একে অন্যের পরিচিত ছিলেন। তিনি ছিলেন ট্রুডোর এক ভাইয়ের বন্ধুর সহপাঠী।
২০০৩ সালে একটি দাতব্য প্রতিষ্ঠানের তহবিল সংগ্রহের অনুষ্ঠানে আবার ট্রুডো ও সোফির দেখা হয়। এরপর প্রণয়ে গড়ায় তাঁদের সম্পর্ক। ২০০৪ সালে এই জুটির বাগ্দান হয়। পরের বছর বিয়ে করেন ট্রুডো ও সোফি। তাঁদের তিন সন্তান রয়েছে। বড় ছেলে জাভিয়ারের জন্ম ২০০৭ সালে। মেয়ে এলা গ্রেসের জন্ম ২০০৯ সালে। ছোট ছেলে হ্যাড্রিয়েনের জন্ম হয়েছে ২০১৪ সালে।
২০১৫ সালে প্রথমবার কানাডার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন ট্রুডো। সে সময় মার্কিন সাময়িকী ভোগের প্রচ্ছদে স্থান করে নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নজর কাড়েন ট্রুডো ও সোফি। ২০১৭ সালে তাঁদের নিয়ে আরেকটি নিবন্ধ প্রকাশ করে ভোগ। তাতে দুজনের দীর্ঘদিনের ভালোবাসার ওপর আলোকপাত করা হয়। এখন ১৮ বছরের সংসারজীবনের ইতি টানার ঘোষণা দিয়ে নতুন করে আলোচনায় এসেছেন এই দম্পতি।