মঙ্গলের ভূপৃষ্ঠের নিচে জীবনরক্ষাকারী তরল পানির সন্ধান

মঙ্গল গ্রহে প্রাণের সন্ধান শুরু করেছেন গবেষকেরাছবি: রয়টার্স

সৌরজগতের চতুর্থ গ্রহ মঙ্গলের ভূপৃষ্ঠের অনেকটা গভীরে তরল পানির অস্তিত্ব রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার রোবটযান ‘মার্স ইনসাইট ল্যান্ডার’– এর পাঠানো তথ্য–উপাত্ত ব্যবহার করে এক গবেষণায় এ তথ্য জানা গেছে। এ–সংক্রান্ত প্রতিবেদন গতকাল সোমবার প্রকাশিত হয়েছে।

মঙ্গলে জীবনের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়ার চেষ্টাকে এ তথ্য আরও এগিয়ে নেবে বলে আশা করছেন বিজ্ঞানীরা। একই সঙ্গে বহু আগে গ্রহটির মহাসাগরে কী ঘটে ছিল, সে সম্পর্কেও ধারণা দিতে পারে এ তথ্য।

রক্তিম গ্রহ মঙ্গলে ২০১৮ সাল থেকে অবস্থান করছে ইনসাইট ল্যান্ডার। চার বছরের বেশি সময় ধরে রোবটযানটি এ গ্রহে ভূকম্পনসংক্রান্ত উপাত্ত পরিমাপ করেছে। এ ছাড়া, কীভাবে ভূমিকম্পে সেখানকার পৃষ্ঠভাগ কেঁপে ওঠে, সেটি পরীক্ষা এবং ভূপৃষ্ঠের নিচে কোনো উপকরণ বা পদার্থ রয়েছে, তা পরীক্ষা–নিরীক্ষা করছে যানটি।

জীবনের জন্য পানি অপরিহার্য বলে ধরা হয় এবং ভূতাত্ত্বিক বিভিন্ন গবেষণা অনুযায়ী, ৩০০ কোটি বছর আগে মঙ্গলের উপরিভাগে হ্রদ, নদী ও মহাসাগর ছিল।কোট: গবেষণার এ ফলাফল যদি সঠিক হয়ে থাকে, তবে প্রাণের যেসব উৎস সম্পর্কে আমরা জানি, সেগুলো মঙ্গলেও রয়েছে।
ভাশান রাইট, ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার স্ক্রিপস ইনস্টিটিউশন অব ওশানোগ্রাফির শিক্ষক

রোবটযানের পাঠানো উপাত্তের ভিত্তিতে গবেষকেরা বলছেন, মঙ্গলে তরল পানির অস্তিত্ব পেয়েছেন তাঁরা। আর সম্ভবত এর অবস্থান ল্যান্ডারের নিচে ভূপৃষ্ঠের অনেকটা গভীরে।

জীবনের জন্য পানি অপরিহার্য বলে ধরা হয় এবং ভূতাত্ত্বিক বিভিন্ন গবেষণা অনুযায়ী, ৩০০ কোটি বছর আগে মঙ্গলের উপরিভাগে হ্রদ, নদী ও মহাসাগর ছিল।

নতুন ওই গবেষণা প্রতিবেদনের রচয়িতাদের অন্যতম ভাশান রাইট। যুক্তরাষ্ট্রের সান ডিয়াগোর ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার স্ক্রিপস ইনস্টিটিউশন অব ওশানোগ্রাফির এই শিক্ষক বলেন, ‘আমরা জানি, আমাদের এই পৃথিবী যথেষ্ট সিক্ত এবং এখানে জ্বালানির যথেষ্ট উৎস রয়েছে। তাই এই গ্রহের ভূপৃষ্ঠের অনেক গভীরেও ক্ষুদ্রাতি ক্ষুদ্র প্রাণের অস্তিত্ব আছে।’

ভাশান রাইট বলেন, ‘গবেষণার ফলাফল যদি সঠিক হয়ে থাকে, তবে প্রাণের যেসব উৎস সম্পর্কে আমরা জানি, সেগুলো মঙ্গলেও রয়েছে।’

ইনসাইট ল্যান্ডারের তথ্যের ভিত্তিতে গবেষণায় দেখা গেছে, তরল পানির বিশাল ওই মজুত মঙ্গলের ভূপৃষ্ঠ থেকে ১১ দশমিক ৫ কিলোমিটার (৭ দশমিক ১৫ মাইল) থেকে ২০ কিলোমিটার নিচে অবস্থিত।

ইনসাইট ল্যান্ডারের তথ্যের ভিত্তিতে গবেষণায় দেখা গেছে, তরল পানির বিশাল ওই মজুত মঙ্গলের ভূপৃষ্ঠ থেকে ১১ দশমিক ৫ কিলোমিটার (৭ দশমিক ১৫ মাইল) থেকে ২০ কিলোমিটার নিচে অবস্থিত।

গবেষণায় আরও জানা যায়, মঙ্গলের ভূপৃষ্ঠের নিচে যে পরিমাণ তরল পানির উপস্থিতি পাওয়া গেছে, তা আগের অনুমানের চেয়ে বেশি।

রাইট বলেন, ‘পৃথিবীতে ভূপৃষ্ঠের ওপর থেকে পানি ভূগর্ভে প্রবেশ করে। সেখান থেকে আরও গভীরে সঞ্চিত হয়। আমরা মনে করি, একই প্রক্রিয়া মঙ্গলেও সংঘটিত হয়েছে। তবে সেটি ওই সময় হয়েছে, যখন মঙ্গলের উপরিভাগ এখনকার চেয়ে বেশি উষ্ণ ছিল।’

আরও পড়ুন

এ গবেষণা প্রতিবেদনের অন্য রচয়িতারা হলেন স্ক্রিপস ইনস্টিটিউশন অব ওশানোগ্রাফির ম্যাথিয়াস মর্জফেল্ড ও বার্কলের ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার মাইকেল ম্যাঙ্গা। ‘প্রসিডিংস অব দ্য ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অব সায়েন্স’ সাময়িকীতে গতকাল প্রকাশিত হয়েছে এ প্রতিবেদন।

গবেষণার এ নতুন ফলাফল সম্পর্কে রাইট বলেন, ‘আমি উৎসাহিত এবং মনে করি, লোকজনও এতে উৎসাহিত হয়েছেন।’

আরও পড়ুন